দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)
১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ
২) স্বভাববাদ কী?
উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই।
৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো।
উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না।
৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?
কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়।
৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার
উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ।
৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে?
উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন্নিকর্ষ।
৮) সামান্য ও জাতির মধ্যে পার্থক্য
উত্তরঃ সামান্য হলো এক জাতীয় বস্তর মধ্যে থাকা সাধারণ ধর্ম। আর- জাতি হল অনুগত ধর্মের ভিত্তিতে গঠিত নির্দিষ্ট গোষ্ঠী।
৯) বৈদেশিক মতে দ্রব্যের প্রকার
উত্তরঃ বৈশেষিক মতে দ্রব্য ৯ প্রকার।ক্ষিতি,অপ,তেজ, মরুৎ, ব্যেম, দিক, কাল, আত্মা এবং মন।
১০) পরামর্শ কাকে বলে?
উত্তরঃ সাধারণভাবে পরামর্শ বলতে যে কোন প্রকার জ্ঞানকে বোঝায়। কিন্তু ন্যায় বৈশেষিক দর্শন মতে বিশেষ এক ধরনের জ্ঞান হল পরামর্শ।
১১) সংযোগ ও সমবায়ের মধ্যে পার্থক্য
উত্তরঃ সমবায় সম্বন্ধে নিত্য, কিন্তু সংযোগ সম্বন্ধ অনিত্য। সমবায় সম্বন্ধ আধার-আধেয় রূপ, কিন্তু সংযোগ সম্বন্ধ বৃত্তিনিয়ামক রূপে প্রতিভাত হয়না।
১২) অযুতসিদ্ধ পদার্থ গুলির নাম
উত্তরঃ গুণ ও দ্রব্য, ক্রিয়া ও দ্রব্য, জাতি ও ব্যক্তি, বিশেষ ও নিত্যদ্রব্য এবং অবয়বী ও অবয়ব- এই পাঁচটি যুগ্ম পদার্থ হল অযুতসিদ্ধ পদার্থ।
১৩) প্রাগাভাবের আদি,অন্ত আছে কি?
উত্তরঃ প্রাগাভাবের আদি নেই অর্থাৎ অনাদি। কিন্তু অন্ত আছে।
১৪) ব্রহ্মসূত্রের প্রণেতার নাম কি?
উত্তরঃ ব্রহ্মপুত্রের প্রণেতা বা রচয়িতা হলেন বাদরায়ণ। তিনি জৈমিনীর গুরু ছিলেন।
১৫) বেদান্ত মতে ব্রহ্মের প্রকার
উত্তরঃ বেদান্ত মতে ব্রহ্ম তিন প্রকার- জীবাত্মা, পরমাত্মা এবং অন্তরাত্মা। আবার বেদান্ত মতে গুণ দুই প্রকার সগুন ও নির্গুণ।
১৬) শংকরের মতে জগৎ কোন অর্থে মিথ্যা?
উত্তরঃ শঙ্করের মতে জগৎবন্ধ্যাপুত্রের মত অসৎ নয়, তবে পারমার্থিক সত্য বা ব্রহ্মের উপলব্ধি হলে জগতের অস্তিত্ব থাকে না। সুতরাং জগৎ মিথ্যা।
১৭) বেদান্ত মতে পারমার্থিক সত্তা কি?
উত্তরঃ বেদান্ত মতে যা কখনো কোন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার দ্বারা বাধিত ত হয় না, বা অসৎ বলে প্রমাণিত হয় না, যা সব রকম অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করা চলে, তাই হলো পারমার্থিক সত্তা।
১৮) প্রমাণ কি?
উত্তরঃ চার্বাক দর্শন মতে প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। কারণ বিভিন্ন প্রমাণের মধ্যে প্রত্যক্ষ হল মূল প্রমাণ এবং সর্বাপেক্ষা প্রমাণ। যা সংশয় ও বিপর্যয় শূন্য।
১৯) জড়বাদী দর্শন কাকে বলে?
উত্তরঃ ক্ষিতি, অপ,তেজ ও মরুৎ এই চার প্রকার জড়বস্তু থেকে জগতের যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি, এমনকি প্রান ও চৈতানের উৎপত্তিকেও ব্যাখ্যা করা হয়। সেই দর্শনকে জড়বাদী দর্শন বলা হয়।
২০) যদৃচ্ছবাদ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে মতানুসারে ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ নিজেদের খেয়াল খুশিমত মিলেমিশে এই জগত ও জগতের যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করে তাকে যদৃচ্ছবাদ বলে।
২১) প্রমার প্রকার লেখো।
উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমা ৪ প্রকার- প্রত্যক্ষ অনুমতি উপমিতি এবং শাব্দ।
২২) লৌকিক সনিকর্ষের প্রকার
উত্তরঃ লৌকিক সন্নিকর্ষ তিন প্রকার নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ, সবিকল্পক প্রত্যক্ষ, এবং প্রত্যাভিজ্ঞা।
২৩) বিশেষের আশ্রয় কি?
উত্তরঃ বিশেষের আশ্রয় হল অংশহীন নিত্যদ্রব্য।
২৪) সামান্য পদার্থের প্রকার
উত্তরঃ বৈশেষিক দর্শনে সামান্য পদার্থ তিন প্রকার- পরা,অপরাএবং পরাপরা।
২৫) অদ্বৈতবাদ কি?
উত্তরঃ মতবাদে এক ছাড়া দুই এর অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না তাকে অদ্বৈতবাদ বলা হয়। আর সেই একটি হলো ব্রহ্ম এবং সেটি সত্য।
২৬) ত্রিবিধ সত্তা কি?
উত্তরঃ পারমার্থিক সত্তা, ব্যবহারিক সত্তা এবং প্রাতিভাসিক সত্তাকে ত্রিবিধ সত্তা বলা হয়।
২৭) মায়ার শক্তি গুলি কি কি?
উত্তরঃ মায়ার শক্তি দুটি- আবরণ শক্তি এবং বিক্ষেপ শক্তি।
২৮) প্রমা কি?
উত্তরঃ ন্যায় দর্শনের তদ্বতি তৎপ্রকারক অনুভবকে প্রমা বা যথার্থ জ্ঞান বলা হয়।
২৯) সগুন ব্রহ্ম কি?
উত্তরঃ সগুন ব্রহ্ম হলেন ঈশ্বর। যিনি জগতের স্রষ্টা, পালনকর্তা এবং সংহার কর্তা। তবে পারমার্থিক দৃষ্টিতে যে ব্রহ্ম নির্গুণ, ব্যবহারিক দৃষ্টিতে তিনি সগুন।
৩০) ব্রহ্ম ও জীবের সম্বন্ধ
উত্তরঃ পারমার্থিক দিক থেকে জীব ব্রহ্ম স্বরূপ। তবে ব্যবহারিক দৃষ্টিতে জীব ব্রহ্মের সাথে ভিন্ন ও অভিন্ন দুইই। অবিতাবশত যে ব্রহ্ম তা বিস্মৃত হয় এবং তখন সে নিজে ভোক্তা, জ্ঞাতা, কর্তা মনে করে। জীব ব্রহ্মের সাথে অভিন্ন হলেও তার বিবর্তরূপ জীব ব্রহ্ম থেকে ভিন্ন।
Comments
Post a Comment