Skip to main content

*দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করো* (সমরেশ স্যার, শেষের কবিতা)

ভূমিকা: *প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার কুড়ি বছরের* মধ্যেই বিশ্ববাসী আরেকটি যুদ্ধের সম্মুখীন হয়। আর সেই যুদ্ধ মানবজীবনকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে সেই সময়কাল টি হল 1939 খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ। আসলে জার্মানি পোল্যান্ড কে আক্রমণ করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অশুভ সঙ্কেত বিশ্ববাসীর কাছে চলে আসে*। যেখানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই মারাত্মক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য অসংখ্য উপাদান দায়ী ছিল। আর সেখানে মনে করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল-- "সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক  সংঘাত থেকে"। সেই সংঘাতের প্রত্যক্ষ কারণ গুলি হল*-----


১) ভার্সাই সন্ধি:- জার্মানিকে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দুর্বল করার প্রয়াসে ভার্সাই চুক্তিপত্রে ৪৪০ টি ধারার বেশিরভাগ ধারা রচিত হয়। সামরিক শক্তি বেলজিয়াম থেকেও ছোট করে দেওয়া হয়। জার্মানির উপনিবেশ গুলি ভাগ করে নেয় মিত্রশক্তিবর্গ।চাপিয়ে দেওয়া হয় বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণের বোঝা।তার ফলে জার্মানি যূদ্ধের সম্মুখীন হতে বাধ্য হয়।


২) জাতীয়তাবাদ:  মহান সাম্রাজ্যবাদী বিপ্লবী হিটলার চেয়েছিলেন পূর্ব ইউরোপে জার্মান সাম্রাজ্যব বিস্তার ঘটিয়ে জার্মান বাসীদের জন্য বাসস্থানের সম্প্রসারণ ঘটাবেন। নিজের কামনা বাসনা, অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদ পূরণ করতে তিনি এবং নাৎসী দলের ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়ে জার্মানিতে ট্রাক বিশ্বযুদ্ধকালীন সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছিলেন।


৩) উগ্র জাতীয়তাবাদ:  হিটলার মনে করতেন জার্মানরাই  জাতিগত দিক থেকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কারণ একমাত্র তাদের শরীরে বিশুদ্ধ আর্যরক্তের প্রবাহ চলছে। আর এই কারণে অন্যান্য জাতির ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা করার অধিকার একমাত্র জার্মানিদের আছে।আর হিটলারের এই মনোভাব উগ্র সাম্রাজ্যবাদের নীতির জন্ম দেয়।যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে।


৩) জাপানের আগ্রাসী নীতি:  ইতালির আগ্রাসন ও পররাজ্যগ্রাস নীতি বিশ্বকে দ্রুত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ফেলে দেয়। যেখানে ইতালি কর্তৃক আবিসিনিয়া অধিকারের কোন প্রতিকার না হওয়ায় মুসোলিনির ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়। বলা যায় মুসোলিনির আগ্রাসি মনোভাব বহুগুণ বেড়ে যায়।


৪) হিটলারের পররাষ্ট্রনীতি:  হিটলার কে ছিলেন জার্মানিকে ইউরোপে প্রধান শক্তি রূপে প্রতিষ্ঠা করবেন। তবে তবে তার কূটনৈতিক চক্রের মাধ্যমে মিত্র শক্তিগুলির মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। আবার মিত্র শক্তিগুলিকে ভাঙন ধরানোর জন্য তিনি অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। অতঃপর ১৯৩৯ সালে হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ইঙ্গ-ফরাসি জোট জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন । যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথ অনেকটা প্রশস্ত হয়ে যায়।


৫) সমাজতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক সংঘাত: সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার সঙ্গে ধনতান্ত্রিক ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে বারবার ভুল বোঝাবুঝি এবং পারস্পরিক সন্দেহ প্রবণতা দেখা যায় । যে সন্দেহ প্রবণতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে  ত্বরান্বিত করে। তবে হিটলার অনাক্রমণ চুক্তির দ্বারা রাশিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে রাখলেও ইংল্যান্ডের দুর্বলনীতি যুদ্ধ অনিবার্য করে তোলে।


৬) অর্থনৈতিক মন্দা:  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে এক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। যারফলে বিশ্ব বাণিজ্য ও শিল্পায়ন প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। দেখা দেয় বিভিন্ন দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ।তবে বেশ কিছু দেশ এই সমস্যার থেকে দেশবাসীর মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যুদ্ধে যোগদান করে।


৭) জাতিসংঘের ব্যর্থতা:  জাতিসংঘের হাতে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকলেও বৃহৎ শক্তিবর্গের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেরি করে। বলা যায় এখানে জাতিসংঘ তার নিজস্ব দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়। এই ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া প্রতিরোধ না করতে পারলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে।


প্রত্যক্ষ কারণ: রোম-বার্লিন টোকিও অক্ষশক্তি গঠন হওয়ার পর হিটলার পোল্যান্ডের রাস্ট্র সীমার মধ্যে দিয়ে ডানজিগ অঞ্চলের মধ্যে একটি সংযোগ ভূমি দাবি করেন। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এই দাবির বিরোধিতা করে পোল্যান্ডের পক্ষ নেবে বলে হুমকি দেয়। সেই হুমকিকে নস্যাৎ করে হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন। যার ফলে ১৯৩৯ সাল ৩ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স পোল্যান্ডের পক্ষে যোগদান করলে শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...