ভূমিকা - কান্টের মতে নৈতিক নিয়ম হলো বিশুদ্ধ ব্যবহারিক বুদ্ধির শর্তহীন আদেশ আর সেই আদেশ অনিবার্য ও সার্বিক। আসলে তার মতে যেকোনো নিয়মের দুটি দিক থাকে-আকার ও উপাদান। আকার গত ভাবে সকল নিয়ম সার্বিক আর সেই আকারের উৎস হলো বিশুদ্ধ বুদ্ধি। নিয়মের উপাদান ইন্দ্রজাত ফলে পরিবর্তনশীল উপাদানের জন্য বিভিন্ন নিমের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে প্রকৃত অর্থে তা সার্বিক হয় না। আসলে---
কান্টের মতে নৈতিক নিয়ম সম্পূর্ণরূপে আকারগত, উপাদান শূন্য। ফলে নৈতিক নিয়ম প্রকৃত অর্থে সার্বিক। তাই নৈতিক নিয়ম দেশ, কাল, সমাজ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতি মানুষের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমহীন ভাবে সমান ভাবে প্রযোজ্য ও কার্যকর। নৈতিক নিয়ম এই জন্যই আবশ্যিক যে এই নিয়মকে অস্বীকার করা যায় না। আর অস্বীকার করলে যৌক্তিক স্ববিরোধ হবে। তাই -----
কান্টের মতে উপাদান সুন্দর ব্যক্তি নিরপেক্ষ শর্তহীন আদেশের আকারটি এইরূপ হবে-" তুমি এমন নিয়োগ অনুসারে কাজ কর যা যেকোনো অবস্থায় যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।" কান্ট নিজেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা অন্যায় এই উদাহরণ দিয়ে তার নৈতিক নিয়মটি ব্যাখ্যা করেছেন। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এমন এক জাতীয় কাজ যা সার্বিক ও আবশ্যিক হতে পারে না। কেননা----
যদি সকলেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তবে প্রতিশ্রুতি অর্থহীন হয়ে পড়বে। তখন আর প্রতিশ্রুতি কেউ করবে না। আরতি যদি কেউ না করে তবে তা ভঙ্গের কোন প্রশ্নই থাকবে না। সুতরাং প্রত্যেকের পক্ষে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা অসম্ভব। আসলে------
আদেশ শব্দটির দ্বারা আদেশ দাতা ও আদেশ পালনকর্তা এই দুই ভিন্ন ব্যক্তিকে বোঝায়। কিন্তু কান্টের নীতিতত্ত্বে আদেশ দাতা ও পালনকর্তা হল ব্যক্তির নিজে। অর্থাৎ এটি ব্যক্তির স্ব আরোপিত আদেশ। কিন্তু নৈতিক নিয়ম আদেশ রুপে আসে কেন? কান্ট বলেন মানুষ হলো জৈবিক বৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির মিলিত যুগ্মসত্তা। জৈবিকবৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির মধ্যে বিরোধ চিরন্তন। জৈবিকবৃত্তি নৈতিক নিয়ম অমান্য করে তার নিজস্ব নিয়ম "সুখলাভের নীতি " অনুযায়ী চলে অনৈতিক জীবন যাপন করতে চায়। সুতরাং-----
মানুষ তখন স্বতপ্রণোদিতভাবে নৈতিক নিয়ম পালন করে না। কারণ নৈতিক নিয়ম পালন না করার প্রবণতা তার মধ্যে বিদ্যমান। নৈতিক নিয়ম বিবেকের কাছ থেকে আদেশ রুপে আসে। ফলে নৈতিক নিয়ম মানুষের কাছে পালন করা বাধ্যতামূলক হয়। স্বআরোপিত আদেশ বলে কাজের স্বাধীনতা থাকে তাই তার নৈতিক মূল্যও থাকে।
নৈতিক নিয়ম শর্তহীন আদেশ:--
শর্তহীন আদেশ প্রকৃত অর্থের সার্বিক ও আবশ্যিক নয়। যেমন কোন পিতা তার সন্তানকে আদেশ করল যে যদি সে পরীক্ষায় পাশ করতে চায় তবে সে যেন ভালোভাবে পড়াশোনা করে। এক্ষেত্রে আদেশটি প্রকৃত অর্থে সার্বিক নয়, কারণ সকল মানুষের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয় এবং আবশ্যিকও নয়। কেননা এই আদেশ লঙ্ঘন করলে যৌক্তিক স্ববিরোধ হয় না, আবার আদেশ মান্য করা বাধ্যতামূলকও নয়। এই আদেশ বাইরের আদেশ। কিন্তু-----
নৈতিক নিয়ম প্রকৃত অর্থের সার্বিক ও আবশ্যিক, উপাদান বর্জিত, ব্যক্তিনিরপেক্ষ, শূন্যাকার। তাই এটি শর্তহীন আদেশ। এই শর্তহীন আদেশের আকাশ হল তোমার কামনা বাসনা নিবৃত্ত হওয়া উচিত। কামনা, বাসনা, সুখ প্রভৃতি আদেশে শর্ত হিসেবে কাজ করলে তা সার্বিক হয় না। তার নৈতিক মূল্য ও বাধ্যতাবোধ থাকে না। সুতরাং----
যে মানুষ বিবেকের শর্তহীন আদেশ গ্রাহ্য করে না সে শুধু নীতিবর্জিত নয়,সে একই সঙ্গে বুদ্ধি বর্জিত অর্থাৎ অমানুষ। আমাদের কর্তব্যবোধ একাধারে নীতিবোধ ও বুদ্ধির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কেননা নীতিবোধ তো বুদ্ধিতেই আশ্রিত। তাই শর্তহীন আদেশ এমন একটি আদেশ যা যথোচিত কর্মের মানদণ্ড নয়, বরং আমরা আমাদের বিভিন্ন কর্মে যে ব্যক্তিগত নীতিটি অনুসরণ করি শর্তহীন আদেশ তার গ্রহণযোগ্যতা বিচার করে।
---------- ---------------- --------------
Comments
Post a Comment