দেবরাজ ইন্দ্র চার মেঘকে আদেশ করলেন যে কলিঙ্গদেশে গিয়ে ঝড়-বৃষ্টির মাধ্যমে তারা যেন ভয়ংকর প্রলয় কাণ্ড ঘটায়। দেবরাজ ইন্দ্রের কথামতো হলােও তাই। আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন। অন্ধকারে কেউ নিজের শরীরও দেখতে পাচ্ছে না। ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। অপরদিকে ঈশানে মেঘ উড়ছে। উত্তরদিকে মেঘ ডাকছে। কলিঙ্গদেশের আকাশে মেঘ উড়ে এসে উচ্চনাদে গর্জন শুরু করেছে। আসন্ন প্রলয়ের প্রমাদ গণে কলিঙ্গ প্রজারা বিষাদমগ্ন এবং সকলেই ভয়ে তটস্থ।
আকাশজুড়ে দেবরাজ আদিষ্ট চারি মেঘের সম্মেলন ও বর্ষণ। হুড়হুড় দুড়দুড় শব্দে ঝড় বইছে। কলিঙ্গদেশের মানুষ বিপদ বুঝে ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। সবুজ ঘাস, গাছ ও মাঠের শস্য ধুলােয় ঢাকা পড়ছে। ঝড়ে উলটে-পড়া শস্য দেখে প্রজারা মর্মাহত হয়ে চমকে উঠছে। চারি মেঘের বাহক হয়ে আট দিগহস্তী জল বর্ষণ করছে। ব্যাং-এর মতন থেকে থেকে তােক করে লাফিয়ে লাফিয়ে বাজ পড়ছে। মেঘগর্জনে কেউ কারও কথা শুনতে পাচ্ছে না। বৃষ্টির বিরাম নেই। সাতদিন একনাগাড়ে অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ের ও বজ্রপাতের আওয়াজ শোনা যায় হুড়হুড় দুড়দুড় ঝনঝনিয়ে। বৃষ্টির সঙ্গে শিলও পড়ছে ভাদ্র মাসের পাকা তালের মতাে বিশালাকার। ঘরের চাল ভেদ করে ঘরের মেঝেতে পড়ছে শিল।এমনি এক ভয়ানক অবস্থা কলিঙ্গদেশে নেমে এসেছে।
এমনই ভয়ংকর দুর্যোগে দিন, রাত্রি, সন্ধ্যা সব যেন একাকার, আলাদা করে বােঝা যাচ্ছে না । কলিঙ্গের সকল বাসিন্দা বজ্রবারক জৈমিনি মুনির নাম স্মরণ করছে মুক্তি পাওয়ার আশায়। অবিরাম বর্ষণে জল ও স্থল বলে আলাদা কোনাে অস্তিত্বই নেই বা বোঝা যাচ্ছে না। সব একাকার। গর্ত জলের তলে চলে যাওয়ায় আশ্রয়হীন সাপ জলে ভেসে বেড়াচ্ছে। মাঠে চাষের কাজ বন্ধ। ঘরে জল ঢুকেছে। তা ছাড়া মা চণ্ডীর আদেশ পেয়ে হনুমান মঠ-অট্টালিকা ভেঙে খানখান করছে। চারিদিকে বিশাল পর্বতপ্রমাণ উঁচু ঢেউ উঠেছে। তাতে ডুবে যাওয়া ঘরগুলি দলিত-মথিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে মহাপ্লাবনের বিপর্যয় নিয়ে ধেয়ে আসছে মা চণ্ডীর আদেশে নদনদী। শ্রীকবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী গাইছেন অম্বিকামঙ্গল গান
Comments
Post a Comment