১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন?
উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়।
২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন?
উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত।
নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে।
৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো।
উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল।
৪) পাইবস ও সিজদা কি?
উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের পদযুগল চুম্বন করা এবং সিজদা হল সুলতানকে সস্তাঙ্গে প্রণাম করা।
৫) মহম্মদ বিন তুঘলক কেন তামার মুদ্রা প্রচলন করেছিলেন?
উত্তর - মোহাম্মদ বিন তুঘলকের প্রবর্তিত প্রতীকি মুদ্রা ছিল ব্রোঞ্জ নির্মিত, তামার নয়। এই প্রতীকি মুদ্রা চালু করার কারণ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ আছে। আসলে সমসাময়িক ঐতিহাসিক বরণীর মতে-বিশ্বজয়ের অভিপ্রায়ে এবং সুলতান রাজকোষ পূর্ণ করতে কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু গার্ডনার ব্রাউনের মতে- পৃথিবীময় রুপার সংকট দেখা দিলে তিনি ব্রোঞ্জ মুদ্রা চালু করেন।
৬) দুটি সিলসিলাহের নাম লেখো।
উত্তর - সুফিদের মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায় ছিল। আর এই সম্প্রদায়গুলিকে বলা হতো সিলসিলাহ। এরূপ দুটি সিলসিলাহ হলো- চিস্তি এবং সুরাবর্দী।
৭) গুরু নানক কে ছিলেন?
উত্তর - নানক গুরু নানক নামে পরিচিত। যিনি শিখ ধর্মের প্রবর্তক। মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি গৃহ ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হন। যার প্রবর্তিত ধর্মই শিখ ধর্ম নামে পরিচিত।
৮) মুঘল যুগের দুজন ঐতিহাসিকের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর - আবুল ফজল, আব্দুল কাদির বদায়নী, আব্দুল হামিদ লাহোরী, মহম্মদ ওয়ারিস প্রমুখ ছিলেন মুঘল যুগের বিখ্যাত ঐতিহাসিক।
৯) রানা সাঙ্গা কে ছিলেন?
উত্তর - রানা সাঙ্গা ছিলেন একজন শক্তিশালী রাজপুত শাসক। যিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে রাজপুতদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি দক্ষ সেনাপতি এবং শক্তিশালী সৈন্যবাহিনীর অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও বাবরের উচ্চতর কামান ও রণকৌশলের কাছে পরাজিত হন।
১০) মনসবদারি ব্যবস্থা কি?
উত্তর - আকবর সুলতানী যুগে প্রচলিত জায়গীর প্রথার কুফল দূর করতে মনসবদারী প্রথা প্রবর্তন করেন। যার অর্থ পদমর্যাদা। মুঘল আমলে মনসব কথাটি দায়িত্ব বা কর্তব্য অর্থে ব্যবহৃত হতো।তিনি পদমর্যাদা অনুযায়ী সামরিক ও অসামরিক কর্মচারীদের বেতন এবং নির্দিষ্ট কর্তব্য উল্লেখ করার ব্যবস্থা করেন। আর সেটি মনসবদারি ব্যবস্থা নামে পরিচিত।
১১) নুরজাহান চক্র বা জুন্টা বলতে কী বোঝ?
উত্তর - জাহাঙ্গীর তাঁর রূপসী স্ত্রী নুরজাহানের প্রভাবাধীন ছিলেন। সমকালীন মোগল শাসনের চালিকাশক্তি ছিলেন নুরজাহান। তিনি উচ্চ রাজপদে নিজেও পছন্দ মতো ব্যক্তিদের নিয়োগ করে শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। নিজেগোষ্ঠী নির্ভর শাসন বিন্যাস নুরজাহান চক্র বা গোষ্ঠী বা জুন্টা নামে পরিচিত।
১২) কে, কখন অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির নির্মাণ করেছিলেন?
উত্তর - গুরু অর্জুন সিং অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির স্থাপন করেন। সম্রাট আকবর গুরু রামদাস কে পাঞ্জাবে পাঁচবিঘা জমি দান করলে সেখানে হরমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এই মন্দিরকে কেন্দ্র করেই অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির গড়ে উঠেছিল।
ষোড়শ শতাব্দীতে চতুর্থ শিখ গুরু গুরু রামদাস সাহেব দ্বারা এই স্বর্ণমন্দির প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল।
১৩) দারা শুকো কে ছিলেন?
উত্তর - দারাশুকো ছিলেন শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র ।তিনি ছিলেন সম্রাটের সর্বাপেক্ষা স্নেহভাজন, উদার মানসিকতা সম্পন্ন যুবক। যিনি ধর্ম সম্বন্ধে ঔদার্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। তবে তিনি ছিলেন বিদ্যোৎসাহী এবং বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। পারসিক ভাষায় বিভিন্ন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থের অনুবাদ করেছিলেন ।
১৪) মহরানা জয়সিংহ কে ছিলেন?
উত্তর - মেবারের মহরানা ছিলেন জয়সিংহ ।মোগল সম্রাটের সঙ্গে তিনি ধারাবাহিকভাবে ১৬৮০ থেকে ৮১ সালে যুদ্ধ করেছিলেন । শেষ পর্যন্ত ঔরঙ্গজেবের সাথে তার শান্তি চুক্তি স্থাপিত হয়। অতঃপর ঔরঙ্গজেব রাঠোরদের ও দাক্ষিণাত্য মারাঠাদের বিরুদ্ধে নজর দিতে পেরেছিলেন।
১৫) ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ কেন ভারতীয় ইতিহাসে জল বিভাজিকা বলে গণ্য হয়?
উত্তর - ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর থেকেই মোগল সাম্রাজ্য দ্রুত অবক্ষয়ের পথে এগিয়ে চলে । তবে বলা যেতে পারে ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালেই এই পতনের সূচনা হয়। এবং তাঁর দুর্বল বংশধররা অবক্ষয়ের প্রবণতাকে কোনমতেই রোধ করতে পারেননি। মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে এই শক্তিশালী সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের চিহ্ন গুলি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রেটিং ভারতীয় ইতিহাসে জল বিভাজিকা বলে গণ্য করা হয়।
১৬) কে কুতুব মিনার নির্মাণ করেছিলেন? কার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল?
উত্তর - সুলতানি আমলের দিল্লিতে বসবাসকারী ইরানের উশ নিবাসী খাজা কুতুবুদ্দিন নামক দরবেশের স্মৃতির রক্ষার্থে কুতুব মিনার স্থাপিত হয়। সুলতান কুতুবুদ্দিন এর নির্মাণ আরম্ভ করলেও শেষ করে যেতে পারেননি। তাঁর জামাতা ইলতুৎমিস এর নির্মাণকার্য সমাপ্ত করেন।
১৭) দাগ বা দিগ এবং হুলিয়া প্রথা কি?
উত্তর - আলাউদ্দিন খলজি সেনাবাহিনীর দূর্নীতি বন্ধ করার জন্য তিনি “হুলিয়া ও দাগ” ব্যবস্থা চালু করেন। এখানে “হুলিয়া” হলো প্রতিটি সেনার দৈহিক বৈশিষ্ট্য লিপিবদ্ধ করা।আর “দাগ” হলো ঘোড়ার চিন্হিত করণ।
১৮) বিজয়নগর সাম্রাজ্য পরিভ্রমনকারী দুজন বিদেশি পর্যটকের নাম লেখো।
উত্তর -বিজয়নগর সাম্রাজ্য পরিভ্রমণকারী মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় পর্যটক ডোমিনগো পেজ, ফার্নাও নানস ও ইতালি থেকে নিকোলো ডি কন্টি প্রমুখের রচনা এবং স্থানীয় সাহিত্য থেকে এই সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় ।
১৯) ইলিয়াস শাহ কে ছিলেন?
উত্তর -ইলিয়াস শাহ ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম স্বাধীন মুসলিম শাসনকর্তা। যিনি ১৩৪২ সালে সোনারগাঁও বিজয়ের পর লখনৌতির সুলতান হন এবং ইলিয়াস শাহী বংশের সূচনা করেন। যা ১৫২ বছর ক্ষমতায় ছিলো।
২০) আবুল ফজল কে ছিলেন তার লেখা একটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর - আবুল ফজল ছিলেন আকবরের একান্ত প্রিয়ভাজন ও সভাসদ। তিনি ছিলেন ঐতিহাসিক ও সুযোদ্ধা। তার রচিত গ্রন্থ গুলি হল আকবর- নামা ও আইন-ই- আকবরী।
২১) পানিপথের প্রথম যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তর - প্রথম পানিপথের যুদ্ধ ১৫২৬ সালে বাবর এবং ইব্রাহিম লোদির মধ্যে হয়েছিল। ঐ বছরে কাবুলিস্তানের তৈমুরিদ শাসক বাবরের মোগল বাহিনী দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদির বৃহত্তর শাসক বাহিনীকে পরাজিত করে।
২২) সুল- ই- কুল বলতে কি বোঝো?
উত্তর - সুল-ই-কুল কথার অর্থ পরম ধর্মসহিষ্ণুতা। আকবর একান্তভাবেই ছিলেন ধর্মসহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী। তার ধর্মনীতির মূল কথাই ছিল সুলহে-কুল বা
পর ধর্মসহিষ্ণুতা।
২৩) কবে কোথায় শিবাজীর রাজ্যভিষেক হয়?
উত্তর -শিবাজী আগ্রা দুর্গ থেকে কৌশলে পলায়ন করে নিজ রাজ্যে ফিরে আসেন। সুরাট বন্দর লুঠ করে এবং সাতারা দুর্গ দখল করে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করেন। অবশেষে মহারাষ্ট্রে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠার সংকল্প নেন। ১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দের রায়গড় দুর্গে শিবাজী নিজের অভিষেক সম্পন্ন করে ছত্রপতি ও গো ব্রাহ্মণ প্রজাপালক উপাধি নেন।
২৪) জিয়াউদ্দিন বারুনী কে ছিলেন? তার রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর - সুলতানি যুগের বিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন জিয়াউদ্দিন বারুনী।তিনি ছিলেন গোঁড়া মুসলমান এবং ফিরোজ শাহ তুঘলকের পৃষ্ঠপোষক।
জিয়াউদ্দিন বারুনীর গ্রন্থ গুলি হল তারিখ-ই- ফিরোজশাহী এবং ফতোয়া-ই-জাহান্দুরী।
২৫) মুঘল আমলে দুজন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।
উত্তর - মুঘল আমলে দুজন ঐতিহাসিক হলেন আবুল ফজল এবং বাদাউনী। এই দুজন ঐতিহাসিক আকবরের জীবনী লিখেছিলেন বলে জানা যায়।
২৬) কবুলিয়ৎ ও পাট্টা কাকে বলে?
উত্তর -শেরশাহের অন্যতম স্মরণীয় সংস্কার হলো ভূমি সংস্কার। সাম্রাজ্যের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে যেমন রাজস্ব প্রয়োজন ছিল ঠিক তেমনি প্রজাদের স্বার্থ রক্ষা বাস্তবায়িত করার জন্য শেরশাহ কবুলিয়ৎ ও পাট্টার ব্যবস্থা করেন।
২৭) হলদিঘাটের যুদ্ধ কবে এবং কাদের মধ্যে ঘটেছিল?
উত্তর -১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত হলদিঘাটের যুদ্ধে মোগল সেনাপতি আসফ খাঁ ও মানসিংহের নিকট রানা প্রতাপের পরাজয় হয়। রানা প্রতাপ পরাজিত হলেও তিনি পরাক্রম হারান নি। তাই পুনরায় বাড়তি উদ্যমে হৃত রাজ্যের অনেকাংশ উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
২৮) অষ্টপ্রধান কি? কার শাসনব্যবস্থার সঙ্গে এটি সম্পর্কিত?
উত্তর -মারাঠা বীর শিবাজীর শাসনকার্য পরামর্শ দান করার জন্য একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন এই মন্ত্রিসভায় ৮ জন মন্ত্রী ছিলেন। যারা শিবাজীর শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য সহযোগিতা করতেন এই আটজন মন্ত্রীকে অষ্টপ্রধান বলা হয়।
এই অষ্টপ্রধান শাসনব্যবস্থাটি শিবাজীর শাসনব্যবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত।
২৯) বাবরের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের নাম কি? এই গ্রন্থে কিসের বিবরণ পাওয়া যায়?
উত্তর - বাবুর তুর্কি ভাষায় রচনা করেন তুজুক ই বাবরী। এই গ্রন্থটি পরবর্তী সময়ে পায়ান্দা খাঁ এবং আব্দুর রহিম খান ফার্সি ভাষায় অনূদিত করেন। তখন গ্রন্থটির নাম হয় বাবরনামা।
যে গ্রন্থ থেকে বাবরের সমস্ত জীবনের ঘটনা এবং ভারত, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়া সম্বন্ধে বহু তথ্য পাওয়া যায়।
৩০) জাহাঙ্গীরের রাজসভায় আগত দুজন রাষ্ট্রদূতের নাম লেখ এবং কবে তাঁরা এসেছিল?
উত্তর - জাহাঙ্গীরের রাজসভায় আগত দুজন রাষ্ট্রদূত হলেন ক্যাপ্টেন হকিন্স (1608-1611) এবং স্যার টমাস রো (1615-1616) ।
Comments
Post a Comment