Skip to main content

শ্রীমন্তের টোপর কবিতাটির কবি কে? কবিতাটি কোন কাব্য থেকে গ্রহণ করা হয়েছে? কবিতাটির ভাববস্তু বা বিষয়বস্তু নিজের ভাষায় লেখো।

 প্রশ্ন:   শ্রীমন্তের টোপর কবিতাটির কবি কে? কবিতাটি কোন কাব্য থেকে গ্রহণ করা হয়েছে? কবিতাটির বিষয়বস্তু বা ভাববস্তু নিজের ভাষায় লেখো।        


       শ্রীমন্তের টোপর কবিতাটির কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

          শ্রীমন্তের টোপর কবিতাটি কবি মধুসূদন দত্ত 'চন্ডীমঙ্গল' কাব্যের একটি ছোট্ট কাহিনী নিয়ে রচনা করেছেন।

             আলোচনা শুরুতেই আমরা বলতে পারি যে, কবি মধুসূদন দত্ত চন্ডীমঙ্গল কাব্যের বণিক খন্ডের একটি কাহিনী নিয়ে রচনা করেছেন শ্রীমন্তের টোপর কবিতাটি। আর এই কবিতাটি ১৪ চরণের লেখা একটি সনেট জাতীয় কবিতা বা রচনা। তবে আমরা বলতে পারি কবি চন্ডীমঙ্গলের কাহিনী নিয়ে কবিতাটি রচনা করলেও এই কাহিনীর সাথে বেশ কিছু অংশ তিনি সংযোজন করেছেন। আর সেই সংযোজনের মধ্য দিয়ে কবি নিজস্ব প্রকাশ ভাবনা, সেই সাথে অলংকার ব্যবহারে কবিতাটি মনোগ্রাহী এবং সর্বজনীন করে তুলেছেন। যেখানে---

       চন্ডীমঙ্গল কাব্যের কাহিনীতে আমরা দেখতে পাই দেবীর চন্ডীকে পুজো করে খুল্লনা মায়ের কৃপায় একটি টোপর উপহার পেয়েছিলেন। আর এই টোপরটি ছিল বহু মূল্যবান। বলা যায় যার দাম ছিল লক্ষাধিক টাকা বা তারও বেশি। কিন্তু শ্রীমন্ত যখন সিংহল যাত্রা করেন সেই সময় এই টোপরটি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে শ্রীমন্ত সিংহলে পৌঁছানোর পর সে দেশের কোটাল শ্রীমন্তকে বলেছিল--

       "সে যদি লক্ষ টাকার সদাগর হয়ে থাকে তাহলে ওই লক্ষ টাকার টোপর, সে যেন জলে ফেলে দেয়।"

            এখানে লক্ষণীয়ভাবে আমরা দেখলাম, কোটালের কথায় শ্রীমন্ত সঙ্গে সঙ্গে দেবী চন্ডীর দেওয়া লক্ষ টাকার টোপর বিনা দ্বিধায় জলে ফেলে দেয়। তবে এখানে শ্রীমন্ত কিন্তু ভীষণ নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিল।সে টোপরটি জলে ফেলে দেয় কোটালের কথামতো। আর শ্রীমন্তের এই  নির্বুদ্ধিতা দেখে দেবী চণ্ডী বেশ হতবাক হয়ে গেলেন। অতঃপর দেবীর চন্ডী ক্ষেমঙ্করী রূপ ধারণ করে জল থেকে সেই টোপরটি উদ্ধার করেন। ঠিক যেমন বাজপাখি যেভাবে আকাশের বুকে তার বজ্র নখের দ্বারা মাছরাঙ্গা পাখিকে স্বীকার করে, ঠিক সেই ভাবে দেবী ধরে ফেললেন টোপরটি শঙ্খচিল রূপে। 

           এখানে কবি মধুসূদন দত্ত এই ঘটনাটি একটু পরিবর্তন করেন। আর সেই পরিবর্তনে আমরা দেখি, কবি ঘটনাটি বর্ণনা দিচ্ছেন এইভাবে- টোপরটি ইন্দ্রধনু দীপ্তি বিকীর্ণ করে চারিদিকে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।তবে--

          কবি মধুসূদন দত্ত কাহিনীটি চন্ডীমঙ্গল কাব্য থেকে গ্রহণ করেছেন ঠিকই, আবার বেশ কিছু ঘটনা তাঁর কবিতার মধ্যে সংযোজন করেছেন। তবে সমগ্র কবিতাটিতে তিনি চন্ডীমঙ্গলের একটি লাইনও ব্যবহার করেনি। আর এখানেই কবির মৌলিকতা, নিজস্বতা দেখা যায়। শুধু তাই নয়, কবিতাটির ভাষা, বর্ণনাভঙ্গি সবই কিন্তু কবির নিজস্ব সম্পদ। সেখানে আমরা দেখি কবি একটি দৃশ্য সযত্নে ধরে রাখলেন সনেটের অ্যালবামে, শুধুমাত্র পাঠকের জন্য।আসলে--

        কবি মধুসূদন দত্তের শ্রীমন্তের টোপর কবিতাটির সাথে তাঁর জীবনের অনেকাংশের মিল আছে। সেখানে আমরা দেখি শ্রীমন্ত দেবী চণ্ডীর দেওয়া টোপরটি পেল এবং সেই টোপরটি সে সাগরে ফেলে দিল। কিন্তু দেবী চণ্ডী ক্ষেমঙ্করী  রূপ ধারণ করে জল থেকে সেই টোপরটি উদ্ধার করেন। ঠিক তেমনি---

        কবি মধুসূদন দত্ত বঙ্গজননীর ক্রোড়ে জন্মগ্রহণ করেও তিনি বঙ্গের মূল্যবান সাহিত্য, সংস্কৃতির কোমল স্পর্শতা জানতে পারেননি, তাকে চিনতেও পারেন নি! তিনি অবহেলায় বঙ্গজননীকে পরিত্যাগ করে নিজের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেন। অবহেলায় বঙ্গ সাহিত্যকে ফেলে দিয়ে বিদেশী সাহিত্যকে আপন করে নেওয়ার একটা প্রয়াস গ্রহণ করেন। আসলে কবির মনে ছিল ভীষণ উচ্চাশা, ছিল বিদেশি সাহিত্যের উপর অনুরাগ।

           আর সেই উচ্চাশা ছিল ইংরেজি সাহিত্যকে নিয়েই। তিনি ভেবেছিলেন বঙ্গ সাহিত্যিক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরবেন না।তিনি হবেন চান ইংরেজি সাহিত্যিক। আর এটাই ছিল তার জীবনে চরম নির্বুদ্ধিতা,চরম ভুল। কিন্তু বিধি বিমুখ! কারণ ইংরেজি সাহিত্যিক হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। আবার অপরদিকে বঙ্গভূমির মূল্যও বুঝতে পারেননি। তাই তিনি নিজের অনুতাপ প্রকাশ করলেন --

                "হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন,

                 তা সবে (অবোধ আমি!) অবহেলা করি

                পরধন-লোভে- মত্ত করিনু ভ্রমণ।"

              কবি মধুসূদন দত্ত অবশেষে এ বঙ্গের বহু মূল্যবান সাহিত্যের ভান্ডার, সাহিত্যের রস, ঐশ্বর্য বুঝতে পারলেন। আর বঙ্গভূমির মূল্য বুঝতে পেরে তিনি ফিরে আসলেন বঙ্গজননীর কোলে। নিজেকে সমর্পণ করে দিলেন বঙ্গ জননীর চরণে। তারপরই তিনি পেলেন অপরিমীয় সম্মান, ঐশ্বর্য এবং খ্যাতি। তিনি হয়ে উঠলেন মধুকবি।

           আসলে শ্রীমন্তের টোপর কবিতাটিতে চন্ডীমঙ্গলের কাহিনীর মধ্যে দিয়ে মধু কবি খুব নিপুণভাবে সযত্নে সনেটের আকারে মাতৃভূমির বঙ্গ জননীর জয়গান করেছেন । আর এদিক থেকে শ্রীমন্তের টোপর কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ বলা যেতেই পারে।

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প