শিক্ষায় মূল্যবোধের গুরুত্ব বা শিক্ষায় মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।(প্রথম সেমিস্টার মাইনর)
ভূমিকা -আলোচনার শুরুতেই আমরা বলতে পারি যে,মূল্যবোধহীন শিক্ষা আলো বিহীন পূর্ণিমার চাঁদের মত। তবে সুস্থ বিকাশের দ্বারাশিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ শিক্ষার মাধ্যমে সঠিকভাবে গঠন করা যায়। শিশু যখন গৃহপ্রবেশ থেকে বিদ্যালয়ে পদার্পণ করে তখন সে আরো বৃহত্তর পরিবেশের মধ্যে পরিচিতি লাভ করে। এবং সেখানেই তার সর্বাঙ্গীন বিকাশ আরো বেশিকরে সুসম্পন্ন হয়।যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বিভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়।আর সেই গুরুত্বগুলি হলো–
১) নৈতিক বিকাশ সাধন
আমরা জানি মূল্যবোধের শিক্ষা শিশুর মধ্যে নৈতিকতার বিকাশ সাধনের সহায়তা করে। তাই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যথাযথ মূল্যবোধ গঠন করা প্রয়োজন। তবেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক বিকাশ সাধন সম্ভব হয়।
২)ব্যক্তিত্বের উন্নতকরণে-
মূল্যবোধের শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন সম্ভব হয়। যেমন -সততা, সত্যবাদিতা, কর্তব্য পরায়ণতা প্রভৃতি মূল্যবোধ গুলি যদি সঠিক বিকাশ না ঘটে তাহলে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ব্যাহত হবেই। তাই শিক্ষার মাধ্যমে মূল্যবোধ গুলি বিকশিত করার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিত্বের উন্নতি সাধন সম্ভব হয়।
৩) সামাজিকীকরণে সহায়তা করা-
শিক্ষায় মূল্যবোধের গুরুত্ব হল- এটি শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ সমাজের আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য মূল্যবোধের শিক্ষা বা শিক্ষার মাধ্যমে মূল্যবোধের বিকাশ বিশেষভাবে প্রয়োজন।তাই-
শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সমাজে প্রচলিত এবং সমাজ অনুমোদিত মূল্যবোধের কাঠামোটি আয়ত্ত করে থাকে। যা শিক্ষার্থীদের সার্থক সামাজিকীকরণে সাহায্য করে থাকে।
৪) শৃঙ্খলা রক্ষা করণে-
মূল্যবোধের সঠিক বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়ন করা সহজ হয়। তবে যে সমাজে সুনির্দিষ্ট কোন মূল্যবোধের কাঠামো নেই সেই সমাজের শৃঙ্খলা বিকশিত কখনই হয় না। তাই শিক্ষায় মূল্যবোধের বিকাশের মাধ্যমে সমাজে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গের আচরণ ধারাকে নিয়ন্ত্রিত করা যায় ও সমাজে শৃঙ্খলা আনয়ন করা সম্ভব হয়।
৫) ঐতিহ্য সংরক্ষণে-
কৃষ্টি,সংস্কৃতি, অতীত ঐতিহ্য প্রভৃতির সমন্বয়ে শিক্ষা তথা সমাজের কাঠামো নির্ণয় হয়ে থাকে। অর্থাৎ মূল্যবোধের শিক্ষার মাধ্যমে এক প্রজন্মের জ্ঞান, অতির ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি বংশ পরম্পরা অন্য প্রজন্মের কাছে সঞ্চালিত হয়। যার ফলে সামাজিক জীবনযাত্রার মধ্যে সুস্থ মানসিকতা বিকশিত হয়।
৬) আচরণের বিকাশ সাধনে-
শিক্ষায় মূল্যবোধের মাধ্যমে সমাজের আচরণ ধারার বিকাশ সাধন হয়। আর সেখানে আমাদের প্রতিটি সমাজ বিভিন্ন নিয়ম-কানুনের দ্বারা সৃষ্ট। তবে ব্যক্তির মধ্যে উপযুক্ত মূল্যবোধ বিকশিত না হলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তাই। সেই কারণেই শিক্ষার্থীর শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন মূল্যবোধের আহরণ করা বিশেষ প্রয়োজন।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে- শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশসহ সুসংহত ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করা শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। তবে আধুনিক তথ্যকেন্দ্রিক ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিষয়ের উপর অত্যাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। যার ফলে শিক্ষার্থীর কেবলমাত্র বৌদ্ধিক বিকাশ সম্ভব হয়েছে ।কিন্তু দৈহিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশ ইত্যাদি ব্যক্তিত্বের অন্যান্য দিকগুলি উপেক্ষিত হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে বাঞ্ছিত দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, অভ্যাস, আগ্রহ ইত্যাদি যথাযথভাবে গড়ে উঠতে পারছে না।
********** শেষের কবিতা কোচিং সেন্টার *********
হিঙ্গলগঞ্জ, উত্তর ২৪ পরগনা।
Comments
Post a Comment