কর্তৃত্ব কাকে বলে? মাক্স ওয়েবারের কর্তৃত্ব শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করো (প্রথম সেমিস্টার)।
কর্তৃত্ব-
কর্তৃত্ব হল এমন এক ধরনে আইনানুগ সাংগঠনিক ক্ষমতা, যার মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অধস্তনদের কার্যসম্পাদনের জন্য নির্দেশনা দান করেন। অতঃপর সেই কার্য তদারকি এবং তা পালনের জন্য তত্ত্বাবধান করতে পারেন। যার স্বাভাবিক ধর্ম হল কর্তৃত্ব উপর স্তর থেকে নিচের স্তরে ব্যবহার করা ।মোট কথা হল-বৈধভাবে ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারকে কর্তৃত্ব বলে।আর এই নিরিখে কর্তৃত্বের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আমরা পাই --
প্রথমতঃ- কর্তৃত্বের বৈধতার ভিত্তি হলো আইনানুগ কাঠামো।
দ্বিতীয়তঃ- কর্তৃত্বের সবকিছু আনুষ্ঠানিক।
তৃতীয়তঃ- নিয়মকানুন পরিবর্তন বা প্রবর্তনের জন্য আইনসভা বা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করতে হয়।
চতুর্থতঃ- নিয়োগের জন্য যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়।
পঞ্চমতঃ- আইনের মাধ্যমে সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।
মাক্স ওয়েবারের কর্তৃত্বের শ্রেণীবিভাগঃ-
আইনের বৈধতার নীতিসমূহ বর্ণনাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ম্যাক্স ওয়েবারের কর্তৃত্ব তত্ত্ব। আর সেইসব নীতির সাধারণ কাঠামো ও প্রধান প্রধান প্রকার ওয়েবার বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত ভাবে আলোচনা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে-আইনসিদ্ধ ক্ষমতাগ কর্তৃত্ব। আসলে আদেশ প্রদানের ক্ষমতা আইনসিদ্ধ হলে কর্তৃত্বের উদ্ভব হয়।আর সেই উদ্ভবের প্রেক্ষাপটে
মাক্স ওয়েবার কর্তৃত্বকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা-
১) ঐতিহ্য পরম্পরা কর্তৃত্ব
২) বৈধ যুক্তিসিদ্ধ কর্তৃত্ব
৩) সম্মোহনী কর্তৃত্ব।
১) ঐতিহ্য পরম্পরা কর্তৃত্বঃ-
আবহমানকাল ধরে চলে আসা কোন বিশেষ আদেশ মান্য করা প্রথাগতভাবে বাধ্যতামূলক। এ ধারণার ভিত্তিতে লোকে যখন কোন উর্ধ্বতন ব্যক্তির আদেশ মেনে চলে তখন তাকে ঐতিহ্যগত কর্তৃত্ব বলে। ইতিহাসের মধ্যযুগের সমাজব্যবস্থায় এরকম ঐতিহ্যগত কর্তৃত্ব বর্তমান দেখা যায়। ঐতিহ্য পরম্পরাগত কর্তৃত্ব কতকটা ধর্মীয় কর্তৃত্বও বটে।
২) বৈধ যুক্তিসিদ্ধ কর্তৃত্বঃ-
নিয়মও আইনসিদ্ধ এবং তাই যুক্তিনির্ভর। এ ধারণার ভিত্তিতে লোকে যখন আদেশ পালন করে থাকে, তাকে যুক্তিনির্ভর ও আইনসিদ্ধ কর্তৃত্ব বলে। এক্ষেত্রে আদেশ নির্দেশ কোন ব্যক্তিবিশেষের নামে জারি করা হয় না। আদেশ- নির্দেশ জারি করা হয় পদের নামে নৈর্ব্যক্তিকভাবে।
৩. সম্মোহনী কর্তৃত্বঃ-
সম্মোহনী কর্তৃত্ব ব্যক্তির দুর্লভ প্রতিভা, মেধাশক্তি, অসাধারণ ব্যক্তিত্বের গুণাবলি দ্বারা অর্জিত হয়। এটি বিধাতা প্রদত্ত বলে প্রচলিত ধারণায় মেনে নেয়া হয়। সততা, সৎসাহস, বাকশক্তি ইত্যাদি দ্বারা সম্মোহনী কর্তৃত্ব লাভ করা যায়।
সমালোচনা:
প্রথমতঃ- কর্তৃত্বকে সুনির্দিষ্ট তিনটি ভাগে বিভাজন করা সমীচীন নয়। অন্যান্য আরো কর্তৃত্ব রয়েছে; যেমন- আধা-ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব, আধা আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ব।
দ্বিতীয়তঃ- অনেক সময় চরম আমলাতান্ত্রিক থেকে চরম সম্মোহনীতে রূপান্তর ঘটতে পারে। শান্তির সময় সেনাবাহিনী আমলাতান্ত্রিক হলেও যুদ্ধের সময় সম্মোহনী শক্তি লাভ করে।
তৃতীয়তঃ- সম্মোহনী কর্তৃত্বের নেতা সমাজের উঁচু বা নিচু যে কোন স্তরে দেখা যায়। পরিশেষে বলা যায়, উপর্যুক্ত তিন ধরনের কর্তৃত্বের সমালোচনা থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক সমাজব্যবস্থায় একে অস্বীকার করার উপায় নেই।
/শেষের কবিতা/
Comments
Post a Comment