Skip to main content

প্রশ্নঃ চর্যাপদের ধর্মীয় পটভূমি বা চর্যাপদের ধর্মীয়তত্ত্ব আলোচনা করো।(প্রথম সেমিস্টার মেজর এবং মাইনর সিলেবাস)।

 প্রশ্নঃ চর্যাপদের ধর্মীয় পটভূমি বা চর্যাপদের ধর্মীয়তত্ত্ব আলোচনা করো।(প্রথম সেমিস্টার মেজর এবং মাইনর সিলেবাস)।


          আমরা জানি যে,চর্যাগানের পটভূমি সপ্তম শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথমার্ধ। আর বাংলা সাহিত্যে এই সময়টি নানা দিক থেকে সংক্রান্তিকাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে সেই সময়ে আমরা দেখি, শশাঙ্কের মৃত্যুর পর গৌড়ে তখন চলছে নৈরাজ্য। তখন চতুর্দিকে অনিশ্চয়তার সংকেত দন্ডশক্তি দুর্বলা, রাজতন্ত্র অস্থির, প্রকৃতিপুঞ্জ পর্যুদস্ত।এমনই সময়ে ধর্ম জগতেও তখন বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। গুপ্ত যুগের ব্রাহ্মণ্য ধর্ম তখন অব্যাহত।সেই সঙ্গে প্রচলিত ছিল ষটকর্ম কর্মবিহিত শাক্তাচার ও শৈব হঠযোগ। তাছাড়া জৈন সাধুদের একটি শাখা ক্রমশ শৈব হঠযোগের দিকে ঝুঁকে পড়ায় শৈব নাথ সাহিত্যের উদ্ভব হয়।তবে-

          লৌকিক সিদ্ধির তাগিদে বৌদ্ধ ধর্মে মহাজন শাখায় মাধ্যমিক ও বিজ্ঞানবাদে নানা সূত্র ও শাস্ত্র ব্যাখ্যার প্রচলন ছিল। ছিল বিভিন্ন রকমের তন্ত্র-মন্ত্র ক্রিয়া-চর্চার সাধন। সিদ্ধ নাগা অর্জুন প্রবর্তিত রস রসানের প্রতিও আকর্ষণ ছিল।বৌদ্ধ তন্ত্র যান বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল, কখনো বজ্রযান, কখনও কালচক্রযান, আবার কখনও সহজযান। এই সহজযানের সহজিয়াদের ধর্মতত্ত্ব ও সাধন প্রণালীর কথা রয়েছে চর্চা গানগুলিতে। আর সেই গানগুলিতে আমরা দেখি-

         চর্যাপদের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মমতের মহাযানী শাখার নানা বিবর্তিত রূপের সন্ধান মেলে। যেখানে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেন-

"চর্যাগীতি গুলি বৌদ্ধ সহজিয়া মতের বাঙলা গান।"

তবে কোন কোন চর্যায় বজ্রযানের কথাও আছে।"

 কারণ, বজ্রযানের সাধকরা লোকিক জগতের বস্তুকে ধর্মীয় প্রতীকরূপে গ্রহণ করতেন। চর্যাগানে তার অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে। তবে চর্যাগানে ধর্ম সাধনার মূল বিষয়টি হলো মনোরম অনুভূতি প্রধান এক মহৎ উপলব্ধির কথা। যে কথার মধ্যে আছে ধর্ম সাধনা, আছে মধ্যযুগের সন্তসাধকদের ধর্মচর্চা।তবে-

    চর্যাগানের উৎসে আছে লৌকিক ধর্মের প্রাধান্য।সেই সময়ে রাজশক্তির সঙ্গে প্রজাপুঞ্জের প্রত্যক্ষ যোগের ফলে এই লৌকিক ধর্মের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়েছিল। পালরাজারা ছিলেন সৌগত। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি তাদের বিদ্বেষ ছিল না ঠিকই কিন্তু তারা ছিলেন মহাযান বৌদ্ধধর্মের ধারক।তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় মহাযান বৌদ্ধধর্মের বিশিষ্ট রূপ সহজমত, শূন্যতা ও করুণার মিলনযোগ প্রাধান্য লাভ করেছিল।পাল রাজাদের সিংহাসন বজ্রাসন।আর সেই বজ্রাসন প্রজ্ঞা উপায় বা শূন্যতা করুণার যুক্ত প্রতীক।আর সেই সময়কার তাম্রশাসনে তার পরিচয় মেলে।আসলে--

         চর্যাপদের সহজযানের যে মূলতত্ত্ব আছে তা হল প্রজ্ঞা ও করুণার যুগনদ্ধতত্ত্ব।পাল রাজাদের বিভিন্ন তাম্র শাসনে প্রশস্তিশ্লোকেও সহজযানের মূল তত্ত্ব ব্যাখ্যাত  হয়েছে।যেখানে লৌকিক ও অলৌকিক সিদ্ধি অর্থাৎ ধর্মমেঘরূপ বোধিসত্ব ভূমিতে প্রতিষ্ঠা- এই হল চর্যাগীতিরও মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এই মতের পূর্ণ প্রতিষ্ঠা পাল রাজাদের বজ্রাসনকে কেন্দ্র করে।আর সেখানে --

         সহজিয়া বৌদ্ধধর্মের প্রাধান্য ছাড়াও তান্ত্রিক কাপালিক ধর্ম সে বিষয়ে প্রচলিত ছিল। তবে এই ধর্ম যত নিন্দিত হোক অন্যান্য ধর্মের উপর তার প্রভাব ছিল। কাপালিকরা ছিলেন যোগপন্থী। তাঁদের বেশভূষা আচার-আচরণও ছিল বিশিষ্ট। চরণে ঘন্টা, নূপুর, কর্ণে কুন্তল, গলায় হাড়ের মালা ও মৌক্তিক হার, দেহে ভস্মভূষণ, হাতে ডুমরু(১০,১১ নং পদ)ছিল কাপালিকদের পরিচিত বেশ। তাছাড়াও-

           সেই সময়ে আরেক ধরনের যোগী সম্প্রদায় ছিল যাঁরা ছিলেন রসরসায়ন সিদ্ধ। এঁদের প্রধান লক্ষ্য দেহকে জরা মরণ জয়ী করে তোলা। কিন্তু সহজ সাধকগণ এই প্রক্রিয়াকে নিন্দার চোখে দেখতেন(২২ সংখ্যক পদ)।সেই সঙ্গে নাগপন্থ যোগীদের অবস্থানও ছিল সমাজে।কারণ সমগ্র উত্তর ভারতের নাথপন্থ যোগীদের প্রতিপত্তিও ছিল। তত্ত্বের দিক থেকে নাথ সিদ্ধাদের তত্ত্বের সঙ্গে বৌদ্ধ সহজিয়াদের মিল থাকলেও সাধন প্রক্রিয়ায় বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আর এ থেকে অনুমান করা হয় যে, চর্যাগানের পটভূমি ছিল নানান ধর্মের মানুষের ধর্মাচারগত পদ্ধতি।

             তথ্যসূত্রঃবাংলা সাহিত্যের ইতিহাস।

* আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDARBAN" ইউটিউব চ্যানেলে।*


               

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প