Skip to main content

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো।


ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।

                এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।


   ব্যাপ্তি দুই প্রকার।

        ১) সমব্যাপ্তি 

         ২) বিষমব্যাপ্তি।


১। সমব্যাপ্তিঃ 

             সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট।


২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-

            অসমব্যাপক দুটির পদের ব্যাপ্তিকে অসমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে, ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান নয়। যেমন, যেখানে ধূম আছে, সেখানে বহ্নি আছে। ধূম ও বহ্নির বিস্তৃতি সমান নয়। ধূম থাকলে বহ্নি থাকবেই। কিন্তু যেখানে বহ্নি, সেখানে সব সময় ধূম নাও থাকতে পারে। তাহলেই বহ্নির বিস্তৃতি ধূমের চেয়ে ব্যাপক। তাই দুটি পদের ব্যাপকতা যেখানে ভিন্ন, এই ব্যাপ্তি হলো অসমব্যাপ্তি বা বিষমব্যাপ্তি।


ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তি গ্রহের উপায়:-



১) অন্বয়:- দুটি বিষয়ের একত্র উপস্থিত হল অন্বয়। আর দুটি বিষয়ের অন্বয় বা একত্র উপস্থিতি লক্ষ্য করে জানা যায় যে, দুটি বিষয়ের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ আছে। যেমন-

      যেখানে ধুম সেখানেই বহ্নি। যেমন- রান্নাঘর, গোশালা প্রভৃতি স্থানে ধুম থাকে এবং বহ্নিও থাকে।


২) ব্যতিরেক:- দুটি বিষয়ের একত্র অনুপস্থিতি হলো ব্যতিরেক। দুটি বিষয়ের একত্রে অনুপস্থিতি বা ব্যতিরেক লক্ষ্য করে জানা যায় যে, দুটি বিষয়ের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ আছে। যেখানে বহ্নি নেই, সেখানে ধূমও নেই। যেমন নদীতে, হ্রদে বহ্নি নেই, আবার ধুমও নেই ।


৩) ব্যভিচারাগ্রহ:- ব্যভিচারাগ্রহ বলতে বোঝায় বিপরীত বা বিরুদ্ধ দৃষ্টান্তের অভাব। যেখানে ধূম নেই সেখানে বহ্নি নেই। কিন্তু ধূম আছে অথচ বহ্নি নেই এমন বিপরীত দৃষ্টান্তের কোন নজির নেই।

      কাজেই ধূম ও বহ্নির মধ্যে সম্বন্ধ আছে বলে আমরা জানি। তবে এই সম্বন্ধ উপাধিযুক্ত তা দেখার দরকার। কেননা উপাধিযুক্ত সম্বন্ধ কে ব্যাপ্তি বলা যায় না।

৪) উপাধিনিরাস:- ব্যাপ্তির সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করতে হলে উপাধি বা শর্তকে নিরসন করতে হবে। অর্থাৎ বাদ দিতে হবে। বহ্নি ও ধুমের সম্পর্ক শর্তাধীন বা উপাধিযুক্ত, বহ্নি থাকলে সেখানেই ধুম থাকবে যেখানে কাঠ বা ইন্ধন ভিজে।

             আর যে কাঠ ভিজে নয়, তার বহ্নি থেকে ধুম নির্গত হয় না। যেমন ইলেকট্রিক হিটার, তত্ত্ব লৌহ পিন্ড প্রভৃতি ।বহ্নি ও ধুমের সম্বন্ধ শর্তযুক্ত বলে তাদের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ আছে বলা যাবে না। কিন্তু ধুম ও বহ্নির  সম্বন্ধ উপাধিযুক্ত বা শূন্য বলে তাদের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ আছে।

৫) তর্ক:- ন্যায় দার্শনিকরা তর্কের সাহায্যে ব্যাপ্তির যথার্থ প্রমাণ করেছেন। সকল ধূমবান বস্তু হয় বহ্নিমান- যদি এই বচনটি সত্য না হয় তাহলে এর বিরুদ্ধ বচন কোন কোন ধূমবান বস্তু নয় বহ্নিমান অবশ্যই এটি সত্য হবে।

                  কিন্তু এই জাতীয় সিদ্ধান্ত করার অর্থ হলো, কারণ ছাড়া কার্য উদ্ভূত হতে পারে। কিন্তু এই নীতিকে স্বীকার করে নেওয়া যায় না। যেহেতু বহ্নি ছাড়া ধূমের অন্য কারণ আমাদের জানা নেই। সুতরাং তর্কের সাহায্যে মূল সিদ্ধান্ত অর্থাৎ সকল ধুমবান বস্তু বহ্নিমান অবশ্যই সত্য বলে প্রমাণিত হবে।


৬) সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ:- ন্যায় দার্শনিকরা মনে করেন দুটি বস্তুর সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ থেকেই যথার্থ ব্যাপ্তি জ্ঞান হয়। এই ভূয়ো দর্শন এর দ্বারা বিভিন্ন স্থানে ধূমের র সঙ্গে বহ্নির সহচর সম্পর্ক প্রত্যক্ষ করার সময় আমরা ধূমের জাতি-ধর্ম ধূমত্বকে বহ্নির জাতি- ধর্ম বহ্নিত্বকে অলৌকিক সন্নিকর্ষের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করে থাকি। সুতরাং অলৌকিক প্রত্যক্ষকে আমরা জানতে পারি যে, সব ধুমমান বস্তুই বহ্নিমান বা ধূমের সঙ্গে বহ্নির ব্যাপ্তি সম্বন্ধ আছে।

     ব্যাপ্তি গ্রহের উপায়কে কেন্দ্র করে ভারতীয় দার্শনিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। চার্বাকরা এক্ষেত্রে বলেন- অনুমান বা ব্যাপ্তি কিছুই প্রামাণ্য বলে স্বীকার করা যায় না।

             আবার বেদান্তদের মতে- দুটি জিনিসের সহচার সম্বন্ধের অবাধিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ব্যাপ্তি নির্ণয় করা হয়। দুটি জিনিস যদি সবসময় একই সাথে থাকতে দেখা যায় এবং এর ব্যতিক্রম না দেখা যায়, তবে ওই দুটি জিনিসের সম্বন্ধকে ব্যাপ্তি সম্ভন্ধ বুঝতে হবে।

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প