Skip to main content

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য লেখো।

 প্রশ্ন/ শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক  লক্ষ্য লেখো।


         ভূমিকা -শিক্ষা মনোবিজ্ঞানে ব্যক্তি বৈষম্যের নীতি কে বলা হয়েছে- প্রত্যেক ব্যক্তিই এক একটি পৃথক সত্তা। আসলে প্রত্যেক ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন সামর্থ, প্রবণতা ও প্রকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাই ব্যক্তি বৈষম্যের নীতি অনুযায়ী প্রত্যেক শিশুকে পৃথকভাবে যাচাই করা দরকার। শুধু তাই নয়, তাদের সর্বাঙ্গীণ আত্মপ্রকাশে সাহায্য করাই হলো শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্যকে বলা হয় শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য। যেখানে-

      ১)    ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী শিক্ষা দর্শনে শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যক্তিই প্রাধান্য লাভ করে আসছে বহুকাল থেকে। তবে জীববিজ্ঞানীদের মতে প্রতিটি মানুষ এক একটি একক সত্তা। তাই ব্যক্তির অস্তিত্ব আছে বলেই সমাজের অস্তিত্বের কথা ভাবা হয়। কারণ ব্যক্তিকে নিয়েই সমাজ। সুতরাং ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশই শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য।

    ২) প্রাচীন ভারতের আশ্রমিক ও আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যক্তিতান্ত্রিক মতবাদের প্রাধান্য দেখা যায়। তখন শিক্ষার লক্ষ্য ছিল 'আত্মানং বিদ্ধি'। তবে ভারতীয় দার্শনিকগণ বিদ্যার্থীর বিকাশে সমাজ জীবনের ভূমিকাকে তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু প্রাচীন গ্রিসের সোফিষ্ট শিক্ষাবিজ্ঞানীরা উগ্র স্বাতন্ত্রবাদের সমর্থক ছিলেন। আর সেখানে বলা হয় ব্যক্তির পূর্ণ বিকাশ সাধনই ছিল শিক্ষার লক্ষ্য, সমাজের দাবি ছিল গৌণ।

      ৩)    প্রকৃতিবাদী দার্শনিকগণ ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্যের জোরালো সমর্থক ছিলেন। তবে আধুনিক যুগের শিক্ষায় ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্রবাদের অগ্রদূত হলেন দার্শনিক রুশো। তাঁর মতে-

              'সমাজ একটি কলুষিত প্রতিষ্ঠান।'

আসলে রুশোর কাছে ব্যক্তি ও সমাজ দুটি পরস্পর বিরোধী ধারণা। তাই তিনি ব্যক্তিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

    ৪) রুশোর শিক্ষার মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী সময়কালে ফ্রয়েবেল, মন্তেশ্বরী প্রমুখ শিক্ষাবিদগণ ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। তবে তবে পার্সি নান ব্যক্তি তান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্যের একজন গোঁড়া সমর্থক ছিলেন। তিনি মনে করেন-

         " সুনাগরিক হওয়ার আগে 

          উৎকৃষ্ট ব্যক্তি হওয়া প্রয়োজন।।"


      ৫)  পাশাপাশি ভাববাদী দর্শনেও ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষা মতাদর্শে, শিশুর সহজাত অনন্ত গুণ ও অনন্ত সম্ভাবনার পূর্ণ প্রকাশকেই শিক্ষার লক্ষ্য রূপে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে এখানে রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের সমর্থক ছিলেন। তিনি মনে করেন-

           " শিশুর বিকাশে সমাজের অবদানকেও 

            জোরালোভাবে সমর্থন করা দরকার।।"

ভাববাদীদের মতে, প্রতিটি মানুষই পরমাত্মার অংশ। তার মধ্যে পরব্রহ্ম বিরাজমান।তাই বিবেকানন্দ বলেন-

         "Man is potentially divine."


      পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে-ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থলে থাকে শিশু। আর এখানে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদীরা বলেন শিক্ষক শিশুর আত্ম বিকাশের সহায়ক মাত্র। প্রাকৃতিক নিয়মেই শিশুর স্বাভাবিক গুনাবলী বিকশিত হয়ে উঠবে। তাই রুশো বলেন, "প্রকৃতি হল আসল শিক্ষক" এবং ফ্রয়েবেল বলেন," শিক্ষক হলেন বাগানের মালি।"আসলে শিক্ষকের ভূমিকা হবে নিরব পর্যবেক্ষকের মতো। তিনি নিঃশব্দে শিশুদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করবেন এবং উপযুক্ত মনস্তাত্ত্বিক মুহূর্তে প্রয়োজনমতো শিশুদের সাহায্য করবেন।




১) শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে শিক্ষার লক্ষ্য হয়েছে ব্যক্তি তান্ত্রিক। কিন্তু -

      শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমাজের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে শিক্ষার লক্ষ্য হয়েছে সমাজতান্ত্রিক।

২) শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যতান্ত্রিক কিন্তু -

      

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প