Skip to main content

রাসেলের শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বা শিক্ষাভাবনা আলোচনা করো। (প্রথম সেমিস্টার, শিক্ষা বিজ্ঞান, মাইনর সিলেবাস)

 রাসেলের শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বা শিক্ষাভাবনা আলোচনা করো। (প্রথম সেমিস্টার, শিক্ষা বিজ্ঞান, মাইনর সিলেবাস)


      ভূমিকাঃ- আলোচনার শুরুতেই আমরা বলতে পারি যে, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাসেল On Education: Especially on Early Childhood গ্ৰন্থে তাঁর শিক্ষাচিন্তার মূল বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আবার সেখানে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান কয়েকধরনের বিতর্কের কথা বলেছেন। যেমন-

         একটি বিতর্ক হল- আলঙ্কারিক শিক্ষা বনাম প্রয়োজনীয় শিক্ষা। মোটা দাগে শিল্প-সাহিত্যকে রাসেল আলঙ্কারিক শিক্ষা বলে মনে করেন।অন্যদিকে বিজ্ঞান চেতনা সম্পন্ন শিক্ষাকে মনে করেন প্রয়োজনীয় শিক্ষা। পাশাপাশি তিনি উপযোগবাদিতার দিক থেকে বিজ্ঞানশিক্ষাকে গুরুত্ব দেন। তবে কল্পনা শক্তি বৃদ্ধিতে সাহিত্যের ভূমিকার কথাও অস্বীকার কখনও করেননি। তাই তাঁর ঝোঁক প্রয়োজনীয় শিক্ষার দিকে হলেও আলঙ্কারিক শিক্ষাকে তিনি একেবারে নাকচ করে দেননি। তিনি বলেন- 

        ”গণতন্ত্রবাদীরা সমাজকে একদিকে প্রয়জনীয় এবং অন্যদিকে আলঙ্কারিক বা অপ্রয়োজনীয় এ দু’ভাগে ভাগ করতে চান না।”

        রাসেল শিশুদের শিক্ষার উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তিনি শিশুদের শিক্ষার সময় তাদেরকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেবের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাই তিনি বলেন– 

        ”শিশুরা যখন নিজের পছন্দ মতো কাজ করার সুযোগ পায়, তখন বাহির থেকে শৃঙ্খলা চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।” 

              রাসেল মনে করেন যে,শিক্ষার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য চারটি গুণ আয়ত্ত্ব করা। আর সেখানে তিনি বলেন–

          ”যে চারটি বৈশিষ্ট্য সম্মিলিতভাবে আদর্শ চরিত্রের ভিত্তি রচনা করতে পারে সেগুলো হলো-  

                 ১) উদ্যম,     

                 ২) সাহস, 

                 ৩) সংবেদশীলতা এবং 

                  ৪) বুদ্ধিমত্তা। 


                সমালোচনার দৃষ্টিতে আমরা বলতে পারি যে,রাসেল অভিজাততন্ত্রের সন্তান হওয়ায় তাঁর মধ্যে ছিল গণতন্ত্র প্রতাপশালী চিন্তা এবং কিছু অভিজাততান্ত্রিক মনোভঙ্গি। আর এই মনোভাবকে সামনে রেখে তিনি রুশোর এমিলির সমালোচনা করার  প্রসঙ্গে বলেছেন-

             গাণিতিকভাবে প্রতিটি শিশুর জন্য একজন পরিচারিকা রাখা অসম্ভব। তবুও অভিজাতদেরকে তিনি অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে তাদের সন্তানদের জন্য পরিচারিকা রাখার জন্য কথা বলেছেন। এরই পাশাপাশি তিনি আরও বলেন,একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ন্যূনতম নাগরিকদের সন্তানদের জন্য সমান শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। সেক্ষেত্রে অভিজাতদের সন্তানদের জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থা থাকতে পারে প্রাসঙ্গিকভাবে--

             আর একটি কথা বলা দরকার যে, রাসেল শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকে কখনই সমর্থন করেন না। তবে তিনি স্বীকার করেন যে,রাষ্ট্রীয় বা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ব্যবস্থা ছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শিক্ষাব্যবস্থা জারি রাখা সম্ভব নয়। তাই রাষ্ট্রকে নাকচ না করে বরং জনগণমুখী, দমন-নিপীড়নবিরোধী, অভিজাতবিরোধী করে তুলবার দাবি জানানো যেতে পারে।

          পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,রাসেলের শিক্ষাচিন্তা– বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাচিন্তা ছিল আদর্শ মাপের মানুষ তৈরি করা। যা মনে হতে পারে অধিক পরিমাণ আদর্শিক। কিন্তু সুন্দর সমাজ, সুন্দর রাষ্ট্র ও সুন্দর পৃথিবী রচনা করতে চাইলে অবশ্যই রাসেলের শিক্ষাচিন্তার বিষয়টি আমাদের সামনে রাখতেই হবে। 


      ঠিক এই রকম আরও বিস্তারিত আলোচনা, ভিডিও, বিষয়ভিত্তিক সাজেশন পেতে আমাদের

                    "SHESHER KOBITA 

                          SUNDORBON" 

YOUTUBE CHANNEL ভিজিট করুন 🙏

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...