সগুণ ও নির্গুণ ব্রহ্ম সম্পর্কে যা জানো আলোচনা কররো।অথবা শঙ্করের মতে নির্গুণ ব্রহ্মের স্বরূপ নির্দেশ করো। শঙ্করের নির্গুণ ব্রহ্ম ও সগুণ ব্রহ্মের মধ্যে পার্থক্য কী?
সগুণ ও নির্গুণ ব্রহ্ম সম্পর্কে যা জানো আলোচনা কররো।অথবা শঙ্করের মতে নির্গুণ ব্রহ্মের স্বরূপ নির্দেশ করো। শঙ্করের নির্গুণ ব্রহ্ম ও সগুণ ব্রহ্মের মধ্যে পার্থক্য কী?
সগুণ ও নির্গুণ ব্রহ্মের স্বরূপঃ-
উপনিষদে ব্রহ্মের দুটি রূপের কথা বলা হয়েছে একটি সর্বোপাধিবিবর্জিত এবং অপরটি হল উপাধিবিশিষ্ট। এই উপনিষদে প্রথমটিকে পরব্রহ্ম এবং দ্বিতীয়টিকে অপর ব্রহ্মরূপে অভিহিত করা হয়েছে। আর সেখানে পরব্রহ্ম নির্গুন ব্রহ্ম এবং অপর ব্রহ্ম হল সগুণ ব্রহ্ম। তবে শংকর বেদান্তে ঈশ্বরকে অপরব্রহ্ম বা সগুণব্রহ্ম এবং নির্গুণ ব্রহ্মকে বলেন পরব্রহ্ম। সগুণ ব্রহ্ম জগতের স্রষ্টা, রক্ষক ও সংহারক। এই সগুণ ব্রহ্ম মায়া দ্বারা উপহিত। তবে নির্গুণ ব্রহ্মের সঠিক বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব। আর এখানে শঙ্করের মতে নির্গুণ কথার অর্থ হলো-
যার কোন গুণ নেই, তিনি নির্গুণ। তার সম্পর্কে উপনিষদে বলা হয়েছে তিনি নিরংশ, নিষ্ক্রিয়, শান্ত, নির্দোষ এবং মালিন্যরহিত। সর্বোপাধিবর্জিত নির্গুন ব্রহ্ম চিন্তা ও বাক্যের অগোচর। শঙ্করের নির্গুণ ব্রহ্মকে শূন্য মনে করা ভুল হবে। তিনি প্রকৃতপক্ষে পূর্ণ -স্বরূপ ও ভাবপদার্থ। নির্গুন ব্রহ্ম অভাব শূন্য নয়।জগৎ মিথ্যা হলেও ব্রহ্মই তার অধিষ্ঠান।
ব্রহ্ম সম্পর্কে শঙ্করের অভিমতঃ-
শংকরের মতে ব্রহ্ম বা ঈশ্বর ও নির্গুণ ব্রহ্ম ভিন্ন নন যিনি ব্রম্ভ তিনি ঈশ্বর। জগতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ভাবে যখন দেখি তখন ব্রহ্মকে ঈশ্বর বলি। জাগতিক ব্যাপারের সাথে সম্বন্ধবিহীনভাবে যখন দেখি তখন তাকে বলি নির্গুণ অসঙ্গ ব্রহ্ম। আর পার্বত্থিক দৃষ্টিতে ব্রহ্ম নির্গুণ নির্বিশেষ নিষ্ক্রিয় তিক দৃষ্টিতে মায়া জগত এবং জগত স্রষ্টা ঈশ্বর নেই আর এ কারণেই উপাসনার জন্য নির্ঘুম কে সগুণ কল্পনা করা হয়। আসলে সকল ব্রম্ভ বা ঈশ্বরই ভক্তের ভগবান শিবের উপাস্য দেবতা।আর-
ব্যবহারিক দৃষ্টিতে ব্রহ্ম সগুণ এবং এই সগুণ ব্রহ্মই ঈশ্বর।পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে ঈশ্বর ও জগৎ মিথ্যা, ব্রহ্ম ও জীবাত্মা অভিন্ন। আর সেখানে মায়া বা অজ্ঞান যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ এই আমরা জগতকে সত্য বলে দেখি এবং ঈশ্বরকে জগতের স্রষ্টা বলে স্বীকার করি। ব্রম্মককে যখন জগতের স্রষ্টা পালনকর্তা ও সংজ্ঞা কর্তার উপর বর্ণনা করা হয় তখন এরূপ বর্ণনা হল ব্রহ্মের টটস্থ্য লক্ষণ। আসলে ব্রহ্মা অনাদি সনাতন ব্রহ্ম নৃত্য শাশ্বত অজর অমর ও অক্ষয়।
রামানুজের মতে ঈশ্বর সবিশেষ ও সগুণঃ-
রামানুজ মনে করেন অদ্বৈত হচ্ছেন ব্রহ্ম বা ঈশ্বর। ঈশ্বর সবিশেষ ও সগুণ। তাঁর মতে ব্রহ্মই ঈশ্বর। ব্রহ্ম ও ঈশ্বর অভিন্ন। কোন নির্গুণ ও নির্বিশেষ পদার্থের কোন অনুভূতি সম্ভব নয়, কাজেই নির্গুণ ব্রহ্মের কোন অস্তিত্ব থাকতে পারে না। অনন্ত শক্তিসম্পন্ন ব্রহ্ম বা ঈশ্বর স্বয়ং নির্বিকার থেকে অর্থাৎ স্বকীয় সত্তা বা স্বরূপকে অক্ষুন্ন রেখে এই বিরাট জগতের সৃষ্টি ও লয় করেন। তাই ঈশ্বর নির্বিশেষ ও নির্গুণ নয়। তবে শ্রুতিতে কোন স্থানে জীবকে ব্রহ্ম হতে ভিন্ন, কোথাও আবার অভিন্ন বলা হয়েছে। সুতরাং দ্বৈতবাদ বা নির্বিশেষ অদ্বৈতবাদ বেদান্তের প্রকৃত ব্যাখ্যা নয়, বিশিষ্টদ্বৈতবাদই প্রকৃত ব্যাখ্যা। আসলে-
রামানুজের মতে ব্রহ্ম নির্গুণবলতে বোঝায় ব্রহ্মের কোন অসৎ গুণ নেই। আসলে ব্রহ্ম নির্বিশেষ নয় বিশেষণ যুক্ত। ব্রহ্ম জগৎ বিশিষ্ট। ব্রহ্ম সবিশেষ এবং সগুন। ব্রহ্ম অসংখ্য সৎগুণের আধার। ব্রহ্ম হলেন পুরুষোত্তম। তিনি সচেতন পুরুষ। তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান এবং সক্রিয়। তিনি স্বাধীন। আর জীব ও জগৎ সনাতন হলেও ব্রহ্মাধীন এবং ব্রহ্ম নিয়ন্ত্রিত আশ্রয়ে তাঁর অংশরূপে এদের শাশ্বত সত্তা রয়েছে। ব্রহ্ম অশেষ কল্যাণগুণ বিশিষ্ট। তিনি করুণাঘন, কৃপা সিন্ধু ভক্তের দাস। তিনি আরো বলেন--
ব্রহ্মে জগৎ ভেদ আছে, তবে স্বজাতীয় ও বিজাতীয় ভেদ নেই। ব্রহ্মের সদৃশ কিছু থাকতে পারে না। সুতরাং ব্রহ্মের কোন বিজাতীয় ভেদ নেই। তবে ব্রহ্মে জগৎভেদ আছে। তাই রামানুজ বলেন সগুণ পদার্থই কেবলমাত্র আমাদের অনুভবের বিষয় হতে পারে। সে কারণে নির্গুণ পদার্থের কোন সত্তা নেই এবং তা আমাদের অনুভূতির বিষয় হতে পারে না। সেহেতু ব্রহ্ম নির্গুণ হতে পারে না।
****** সমাপ্ত******
এরকম আরো নোটস, বিষয় ভিত্তিক সাজেশন, ক্লাস টিচিং পেতে ভিজিট করুন-
"SHESHER KOBITA SUNDORBON" YOUTUBE CHANNEL. Thank you.
Comments
Post a Comment