Skip to main content

দোলযাত্রা বা হোলি উৎসরের ইতিবৃত্ত

 .        দোলযাত্রা বা হোলি উৎসবের ইতিবৃত্ত

                       .     সমরেশ সরদার ।


               আমরা জানি যে,দোলযাত্রা বা হোলি উৎসব হলো রঙের উৎসব। আর এই উৎসবটি বসন্তকালীন হওয়ায় নাম হয়েছে বসন্ত উৎসব। শুধু তাই নয়, এই বসন্ত উৎসবকে আমরা প্রেমের উৎসব, মিলনের উৎসব বলতেও পারি। এই প্রেক্ষিতে সনাতন হিন্দু ধর্মের একটি উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় উৎসব হলো হোলি উৎসব। তার প্রধান কারণ-

             হিন্দুধর্মের অন্যতম এবং তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, বৃন্দাবনে রাধা ও কৃষ্ণের দ্বারা হোলি খেলা উৎসব পালিত হয়েছিল। আবার এই দিনে ভগবান শ্রী শ্রী চৈতন্যদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই চৈতন্যদেব গোটা বাংলায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছিলেন প্রেমের অমোঘ বাণী। আবার এই দিনে হোলিকা দহনও করা হয় অর্থাৎ ন্যাড়া ঘর পোড়ানো হয়। যার উদ্দেশ্য যাবতীয় অশুভ শক্তির বিপরীতে শুভের জয় নিশ্চিত করা।

           আমরা যদি ইতিহাসের পাতায় একটু নজর দিই তাহলে জানতে পারবো যে, এই হোলি উৎসব উদ্ভব হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশে। অতঃপর সেখান থেকে দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীদের মাধ্যমে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এবং পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কিছু অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। আর এই উৎসবটি ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রার দিনে অনুষ্ঠিত হয়। গৌরাঙ্গের জন্মদিনে এই উৎসব হয় বলে একে গৌর পূর্ণিমা উৎসবও বলা হয়। আর এই উৎসবটি শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের মধ্যে এখন আর সীমাবদ্ধ নেই।আপামর সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে এই উৎসবটি মনের অলিন্দে বাঁসা বেঁধেছে। তবে --

           ‌বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী বলা যায় যে, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির  নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয় বলে মনে করা হয়। তাই দোলযাত্রার দিন সকালে রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহে আবির ও গুলালে স্নান করিয়ে দোলায় চড়িয়ে ভক্তিভরে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রায় বের করা হয়। সেই শোভাযাত্রায় গৌরাঙ্গ বা রাধাকৃষ্ণের ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলায় মেতে উঠেন।তবে-

           এই দোল বা হোলি উৎসবের ধর্মনিরপেক্ষতার একটা দিক আছে। এই দিন সকাল থেকেই নারী-পুরুষ, হিন্দু, বৌদ্ধ বা অন্যান্য জাতি ধর্মের মানুষ আবির, গুলাল ও বিভিন্ন প্রকার রং নিয়ে খেলায় মেতে উঠেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি যে,আজও রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালনের রীতি তাঁরই সময়কাল থেকেই চলে আসছে।

            এবার হোলিকা নারী সম্পর্কে একটু বলে রাখি যে, হোলিকা একজন আদর্শময়ী নারী ছিলেন। তাঁর পোশাকের কারণে তাকে আগুনে পোড়ানো কোনমতেই সম্ভব ছিল না।তবে হোলিকা জানতে পারেন যে,প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে। বিষয়টি জেনে তিনি খুব চিন্তিত। তাই তাঁর পোশাকটি খুলে প্রহ্লাদকে পরিয়ে দেন। অবশেষে হোলিকা নিজে আগুনে পুড়ে আত্মত্যাগ করেন। তবে কথিত আছে যে, হোলিকা যখন আগুনের উপর বসার সময় তাঁর চাদর পরিধান করেন। ঠিক সেই মূহুর্তে প্রহ্লাদকে তাঁর কোলের উপর বসান। প্রহ্লাদ বিষ্ণুর প্রার্থনা শুরু করলে বিষ্ণু তখন বাতাস পাঠিয়ে দেন। আর সেই বাতাস হোলিকার চাদরটিকে উড়িয়ে নিয়ে প্রহ্লাদকে আবৃত করে ফেলে। যারফলে প্রহ্লাদ বেঁচে যায়। অবশেষে হোলিকা আগুনে পুড়ে মারা যান।আর এখান থেকে প্রচলিত হয় হোলিকা দহন বা ন্যাড়াঘর পোড়ানো। আবার--

             জানা যায় যে, মথুরা জেলাতেই অবস্থিত বারসানা নামক একটি স্থান, সেখানে হোলি খেলা খুব বিশেষ জনপ্রিয়। আর এখানেও কথিত আছে যে, এই জায়াগায় নাকি ভগবান কৃষ্ণ ও রাধা হোলি খেলেছিলেন। তাছাড়াও এখানেই পালিত হয় লাঠমার হোলি খেলা। যেখানে খেলার ছলে মহিলারা পুরুষদের লাঠি দিয়ে মারেন। তাই এই হোলিকে বলা হয় লাঠমার হোলি।


এরকম আরও অনেক কিছু জানতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব   

      "SHESHER KOBITA SUNDORBON"

               YOUTUBE CHANNEL ।

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প