দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ কারণগুলি আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণসমূহের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো ১৯৩৩ সালে আডলফ হিটলার ও তার নাৎসি বাহিনীর জার্মানির রাজনৈতিক অধিগ্রহণ এবং এর আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি। অতঃপর আর একটি কারণ ছিল ১৯২০-এর দশকের ইতালীয় ফ্যাসিবাদ এবং ১৯৩০-এর দশকে জাপান সাম্রাজ্যের চীন প্রজাতন্ত্রের আক্রমণ। তবে-
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ২০ বছরের ব্যবধানে ১৯৩৯ খ্রি: ৩ রা ডিসেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রাষ্ট্রনেতাগন জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বকে ভয়াবহ যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন ।কিন্তু তা সত্বেও বিভিন্ন কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয়েছিল। আর সেই কারণগুলি হলো-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরোক্ষ কারণঃ
(১) ভার্সাই সন্ধির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াঃ-
১৯১৯ খ্রি:ভার্সাই সন্ধিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারন হিসাবে চিহ্নিত করা হয় ।বিজয়ী মিত্রপক্ষ জার্মানির উপর অপমানজনক এই ভার্সাই সন্ধির শর্ত চাপিয়ে দিয়েছিল।যে সন্ধি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জার্মান জাতির পক্ষে মেনে নেওয়া কখনই সম্ভব হয়নি।বরং বলা যায় জার্মান জাতির মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহা জেগে উঠেছিল।জার্মানি এই একতরফা ও জবরদস্তিমূলক চুক্তি ভেঙে ফেলার অপেক্ষায় ছিল। তাই বলা হয় যে ,ভার্সাই চুক্তির মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল ।
(২) উগ্র জাতীয়তাবাদঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারন ছিল জার্মানি ,ইতালি ও জাপানের উগ্র জাতীয়তাবাদী নীতি।হেরেনভক তত্বে বিশ্বাসী হিটলার বলতেন ,জার্মানরাই হল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি।তিনি জার্মানিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।হিটলারের আগ্রাসী নীতির সঙ্গে জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ে যে সাম্রাজ্যবাদী নীতির জন্ম হয়েছিল তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনিবার্য্য করে তুলেছিল ।
(৩) অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদঃ
জার্মানির অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারন ছিল।এই অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদকে চরিতার্থ করতে নাৎসি দলের ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়ে জার্মানিতে প্রাক্ বিশ্বযুদ্ধকালীন সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল ।
(৪) ঔপনিবেশিক তৎপরতাঃ
উপনিবেশ প্রাতিষ্ঠার প্রতিদ্বন্দিতাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।ভার্সাই সন্ধির ফলে জার্মানি তার উপনিবেশগুলি হারিয়।এবং তারা নতুন উপনিবেশ গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর ছিল। আবার ইংল্যান্ড ,ফ্রান্স ,আমেরিকা প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা গ্ৰহণ করে সেই পথে হাঁটতে শুরু করে।
(৫) ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণ নীতিঃ
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানির প্রতি তোষণ নীতি গ্রহণ করেছিল। তোষণ নীতি গ্ৰহণ করে তারা ভাবতে শুরু করে এভাবে হিটলারকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি হিটলারের আগ্রাসী মনোভাব চূড়ান্ত মাত্রা পায়। সেক্ষেত্রে এই তোষণ নীতির ফলে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির আগ্রাসন মাত্রা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
(৬) নিরস্ত্রীকরণে ব্যর্থতাঃ
জেনোভার নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে বৃহৎ শক্তিবর্গ জার্মানির অস্ত্রশক্তি হ্রাসে উদগ্রীব হলেও তারা নিজেদের অস্ত্রশক্তি হ্রাস করতে রাজি ছিল না। আবার জার্মানি নিজের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে না পেরে সম্মেলন ত্যাগ করে নিজের ইচ্ছেমতো সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার দিকে নিমগ্ন থাকে।
(৭) জাতিসংঘের ব্যর্থতাঃ
জাতিসংঘের ব্যর্থতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারন ছিল বলে মনে করা হয়।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংকল্প নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতিসংঘ তার কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়।জাতিসংঘ বৃহৎ শক্তিবর্গের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে না পারায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অত্যন্ত ঘনীভূত হয় ।
(৮) পরস্পরবিরোধী শক্তিজোটঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে পরস্পর বিরোধী শক্তিজোট গঠন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচনা করে। সেখানে একদিকে জার্মানি ,ইতালি ,জাপান এই অতৃপ্ত রাষ্ট্রগুলি রোম – বার্লিন – টোকিও অক্ষশক্তি গঠন করেছিল। আবার অপরদিকে জোটবদ্ধ হয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স গঠন করেছিল মিত্রশক্তি।তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যুদ্ধ চলাকালীন আমেরিকা ও রাশিয়া যোগদান করে মিত্রশক্তিকে আরোও জোরদার করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ –
হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণঃ
রোম, বার্লিন, টোকিও অক্ষশক্তি গঠিত হওয়ার পর হিটলার পোলিশ করিডর দাবি করেন। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এর বিরোধিতা করে পোল্যান্ডের পক্ষ নেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের এই সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ১লা সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ডের উপর আক্রমন চালায়।অপরপক্ষে-
হিটলারের এই সিদ্ধান্তের যথাযোগ্য উত্তর দিতে ১৯৩৯ খ্রীষ্টব্দে ৩রা সেপ্টেম্বর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড পোল্যান্ডের পক্ষে ও জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয় ।
ধন্যবাদ। এরকম আরও অনেক কিছু বিষয়ভিত্তিক আলোচনা এবং সাজেশন পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।
Comments
Post a Comment