Skip to main content

প্রশ্নঃ স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা ও দর্শন আলোচনা করো।

 প্রশ্নঃ স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা ও দর্শন আলোচনা করো।

  (প্রথম সেমিস্টার, শিক্ষা বিজ্ঞান,মাইনর সিলেবাস)

ভূমিকাঃ আলোচনার শুরুতেই আমরা বলতে পারি যে,শিক্ষা পরিপূর্ণতার এক প্রকাশ। তা প্রতিটি মানুষের মধ্যেই থাকে। তাই স্বামী বিবেকানন্দ মনে করতেন, সমসাময়িক শিক্ষা ব্যবস্থা যে মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে না, বা মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরতা ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে না, তা খুব বেদনার বিষয়। তাই তিনি  শিক্ষাকে তথ্যের সমষ্টি মনে করতেন না।আসলে--

          স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন একজন ভারতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ হিন্দু সন্ন্যাসী। যিনি তৎকালীন সময়ে পাশ্চাত্যে বেদান্ত দর্শন প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তবে সেই সঙ্গে ভারতেও ধর্মসংস্কারে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন--

 "যদি ভারতকে জানতে চাও, তবে বিবেকানন্দের       রচনাবলী পড়ো। তার মধ্যে যা কিছু আছে সবই     ইতিবাচক।" 

আসলে বিবেকানন্দ অনুভব করেছিলেন যে, দেশের ভবিষ্যৎ জনগণের উপর নির্ভর করে, তাই তিনি মানুষের উপর বেশি জোর দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন--

       "আমার উদ্দেশ্য হলো মানুষের চরিত্র গঠন।" 

বিবেকানন্দ তার আদর্শ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, মানব জাতির প্রকৃত শিক্ষা হচ্ছে, তার অন্তর্নিহিত দেবত্ব শিক্ষা দেওয়া এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তা কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তা শেখানো।তবে--

    ‌      শিক্ষা পরিপূর্ণতার এক প্রকাশ এবং তা মানুষের মধ্যেই থাকে। যেখানে সমসাময়িক শিক্ষাব্যবস্থা যে মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে না, বা মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরতা ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে না, তা খুব বেদনার বিষয়। আর সে কারণেই বিবেকানন্দ শিক্ষাকে তথ্যের সমষ্টি মনে করতেন না। তার কাছে শিক্ষা ছিল আরও বেশি কিছু। তিনি শিক্ষাকে মানুষ তৈরি করার, জীবন দানের ও চরিত্র গঠনের মাধ্যম মনে করতেন। তিনি শিক্ষাকে মহান চিন্তার সমষ্টি মনে করতেন। স্বামী বিবেকানন্দ মানুষকে শুধু ইতিবাচক শিক্ষা দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ তিনি মনে করতেন, নেতিবাচক চিন্তাগুলো মানুষকে দুর্বল করে দেয়। যদি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সবসময় দোষারোপ না করে উৎসাহিত করা হয়, তবে তারা এক সময় উন্নতি করবেই। আসলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও ছেলেমেয়েদের নেতিবাচক শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষা থেকে তারা আত্মনির্ভরতা ও আত্মমর্যাদার শিক্ষা পায় না। তাই সর্বদা ইতিবাচক শিক্ষাই তাদের দেওয়া উচিত। সেখানে--

           জগতের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো একটি ধর্মের মানুষের অপর ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতার অভাব। ১৮৯৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বধর্ম মহাসভায় দেওয়া ভাষণে তিনি একটি ব্যাঙের গল্প বলেন। ব্যাঙটি কুয়োর মধ্যে থাকত এবং ভাবত সেই কুয়োর চেয়ে বড়ো জগতে আর কিছু নেই।আমাদের শুধু সহিষ্ণুই হতে হবে না, বরং অন্য মতোকেও গ্রহণ করতে হবে। কারণ সব ধর্মের সার কথাটিই হলো ‘সত্য’। পাশাপাশি --

       বিবেকানন্দ লিঙ্গ বৈষম্যের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছেন। তার মতে আত্মায় লিঙ্গ বা বর্ণভেদ করা অশাস্ত্রীয়। লিঙ্গ বৈষম্য চিন্তা না করে মানুষ চিন্তা করাই শ্রেয়।আসলে জাতির উন্নতির মাপকাঠিই হলো সেই জাতিতে নারীর মর্যাদার স্থান। আর তাই ভারতে নারীর অবস্থা ভাল না হলে ভারতের অতীত মর্যাদা ও গৌরব উদ্ধার করা সম্ভব নয় বলেই তিনি মতো প্রকাশ করেছেন। বিবেকানন্দ পুরুষ ও নারীকে পাখির দুই ডানার সঙ্গে তুলনা করেছেন। পাখি যেমন এক ডানায় ভর করে উড়তে পারে না, তেমনি নারী জাতির অবস্থা উন্নত না হলে জগতের উন্নতি সম্ভব নয় বলেই তিনি মতো প্রকাশ করেছেন।

         স্বামী বিবেকানন্দ লক্ষ্য করেছিলেন সব জায়গাতেই নারী জাতিকে খেলনা মনে করা হয়। আধুনিক যুগে আমেরিকার মতো দেশে নারীর স্বাধীনতা আছে। তবুও বিবেকানন্দ সেখানে দেখেছিলেন, পুরুষ জাতি মেয়েদের সৌন্দর্যের নিরিখে তাদের বিচার করে। যা অনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। আর নারী জাতিরও এটা মেনে নেওয়া অনুচিত।এতে মানবতার মহান দিকটি নষ্ট হয়ে যায়। তবে ভারতে নারী জাতির আদর্শ হলো মাতৃত্ব। অসামান্য নিঃস্বার্থ, সর্বংসহা, ক্ষমাশীলা মায়ের আদর্শটিকে বিবেকানন্দ উচ্চ স্থান দিয়েছেন। আর সেখানে ভারতীয় জাতির যে দুটি অভ্যাসকে তিনি সবচেয়ে অকল্যাণকর বলে চিহ্নিত করেন, সেদুটি হলো নারী জাতির অবমাননা ও জাতিভেদ প্রথা। ভারতীয় নারীর আদর্শ সীতা’।

     পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, স্বামী বিবেকানন্দের মহত্বের গোপন রহস্যটি হলো আত্মবিশ্বাসই ঈশ্বরবিশ্বাস। তাই তিনি বলেছেন-

          "বিশ্বের ইতিহাস হলো কয়েকটি আত্মবিশ্বাস সম্পন্ন মানুষের ইতিহাস।"

 আসলে নিজের উপর বিশ্বাস থাকলেই অন্তরের দেবত্ব জাগরিত হয়। তাই তিনি বলেছেন, তেত্রিশ কোটি হিন্দু দেবদেবী ও বিদেশি দেবদেবীতে বিশ্বাস থাকলেও, কারো যদি আত্মবিশ্বাস না থাকে, তবে সে কখনই মুক্তি পেতে পারে না।



Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...