Skip to main content

প্রবন্ধ কাকে বলে? প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য লেখো।প্রবন্ধের শ্রেণীবিভাগ করে ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য গুলি উদাহরণসহ আলোচনা কর। (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, বাংলা অনার্স)

প্রবন্ধ কাকে বলে? প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য লেখো।প্রবন্ধের শ্রেণীবিভাগ করে ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য গুলি উদাহরণসহ আলোচনা কর। (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, বাংলা অনার্স)


প্রবন্ধ কাকে বলে?

      আমরা জানি যে,নাতিদীর্ঘ, সুবিন্যস্ত গদ্য রচনাকে প্রবন্ধ বলে।তবে প্রবন্ধ রচনার বিষয়, ভাব, ভাষা সবই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ । সুতরাং কল্পনা শক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিকে কাজে লাগিয়ে লেখক যে নাতিদীর্ঘ সাহিত্য রূপ সৃষ্টি করেন সেটাই প্রবন্ধ । এক কথায়-

        লেখকের ভাবনা, ভাব ও মত প্রকাশ যখন যুক্তির বন্ধনে বাঁধা পড়ে গদ্যে লেখা সাহিত্য হয়ে ওঠে তখন তাকে প্রবন্ধ বলে।


প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণঃ-

       শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে-

      "তথ্যের সহিত পরস্পর অন্বয় এবং পারস্পর্য এবং তথ্য ও যুক্তি পরস্পর অন্বয় এবং সকল জুড়িয়া শেষ পর্যন্ত একটি সুসঙ্গত সিদ্ধান্তে গমন- ইহাই প্রবন্ধের বিশিষ্ট লক্ষণ।" আর এই মতামতকে সামনে রেখে বলা যায় যে-

১) প্রবন্ধ হলো জ্ঞানের সাহিত্য।

২) প্রবন্ধে কল্পনা স্থান পেলেও যুক্তি ও শৃঙ্খলাই প্রাধান্য লাভ করে।

৩)  প্রবন্ধকে অবশ্যই গদ্য লেখা রচনা হতে হবে।

 ৪) সাহিত্যকেন্দ্রিক প্রবন্ধ রচনায় লেখকের খেয়াল খুশি কল্পনা প্রাধান্য পেলেও, জ্ঞান-বিজ্ঞানমূলক প্রবন্ধে খেয়াল খুশি কল্পনার স্থান নেই।

৫)  শব্দের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় বাক্য, বাক্যের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় অনুচ্ছেদ, আর অনুচ্ছেদ সমন্বয়ে যুক্তিশৃঙ্খল ভাব পরস্পরায় সৃষ্টি হয় প্রবন্ধ। 

৬) সাধারণভাবে প্রবন্ধের দুটি দিক পরিলক্ষিত হয়- ক)সাহিত্য প্রবন্ধ বা সন্দর্ভ জ্ঞান

খ)জ্ঞান-বিজ্ঞান মূলক প্রবন্ধ।


               প্রবন্ধের শ্রেণীবিভাগঃ-

প্রবন্ধ কি দুটি শ্রেণীতে শ্রেণীবিভাগ করা হয়-

১)  বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ (Formal Essay )।

২) ব্যক্তিগত ভাব প্রদান প্রবন্ধ(Familiar Essay)।


১) বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধঃ 

            যে প্রবন্ধে বুদ্ধিপ্রধান, তথ্যময়, যুক্তি এবং আদি-মধ্য অন্তযুক্ত সমন্বিত চিন্তার প্রকাশ ঘটে তাকে বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ বলে। এই প্রবন্ধ যুক্তির শৃঙ্খলা প্রাধান্য লাভ করে এবং বিষয় হয় গুরুগম্ভীর। আর সেই কারণে এখানে চিন্তা, পাণ্ডিত্য, তথ্য এবং তত্ত্ব প্রাধান্য পায়।

২) ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধঃ

          যে প্রবন্ধে বিষয় চিন্তা অপেক্ষা ব্যক্তি হৃদয়,ব্যক্তির ভাব প্রাধান্য পায় তাকে ব্যক্তিনিষ্ঠ বা আত্মগৌরবী বা মন্ময় প্রবন্ধ বলা হয়। এই প্রবন্ধে কোনো বস্তুনিষ্ঠ নয়, ভাবপ্রধান বিষয় আত্মপ্রকাশ করে থাকে।তাই এখানে হাস্যোচ্ছ্বলে জীবনের গভীরতম ভাব প্রকাশ পেয়ে থাকে।


             ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্যঃ-

প্রথমতঃ ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধে লেখকের সঙ্গে পাঠকের এক অম্লমধুর সহমর্মিতার ভাব গড়ে ওঠে।

         দ্বিতীয়তঃ ড.অর্ধেন্দুশেখর বাশুরীর জানান- লেখকের সৌন্দর্য চেতনা ও রসানুভূতি ব্যক্তিগত প্রবন্ধকে অসামান্যতা দান করে। লেখক এখানে তথ্য বা তত্ত্বের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেন না। কোন সিদ্ধান্ত বা মীমাংসায় উপস্থিত হবার জন্য তার বিশেষ আগ্রহ বা প্রচেষ্টা প্রদক্ষিত হয় না। লেখকের ভাব এখানে সহজে পাঠকের হৃদয়ে একটা অদৃশ্য ভাবের যোগ স্থাপিত হয়। (প্রবন্ধকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

         তৃতীয়তঃ ড. অধীর কুমার দে বলেন-লেখকের নিজস্ব দৃষ্টি বা আত্মগত ভাব সৌন্দর্যে মণ্ডিত হইয়া যে কোন বিষয়স্থিত এক জাতীয় প্রবন্ধ বিষয়নিষ্ঠ প্রবন্ধের ন্যায় নিছক জ্ঞান বা যুক্তিযুক্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা বা সিদ্ধান্তের জন্যই মূল্যবান হয় না। ইহার এমন একটি মহিমায় আবেদন থাকে, যে আবেদন পাঠক হৃদয়ে গভীরভাবে অনুভূত হয়।

              চতুর্থতঃ শ্রীশচন্দ্র দাশ জানান যে, .... ব্যক্তিগত প্রবন্ধের বিষয়বস্তুর জীবনের বাস্তবানুভূতি।ঐতিহাসিক যেমন জীবনকে ঘটনা পরম্পরায় মধ্য দিয়া দেখেন, এই শ্রেণীর প্রবন্ধ শিল্পী তেমনটি দেখেন না। জীবনের সীমাহীন ঘটনাপুঞ্জের যেকোনো একটিই তাঁহার পক্ষে যথেষ্ট।

           দার্শনিক যেমন জীবনের পরম সত্য উদঘাটনে আত্ম নিয়োজিত, তিনি তদ্রূপও নহেন। ওপন্যাসিক যেমন জীবনের বর্ণনাত্মক রূপ সৃষ্টি করেন তিনি তাহাও করেন না এবং নাট্যকারের মতো জীবনকে কর্মময় শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেন না (সাহিত্য সন্দর্শন)।

     পঞ্চমতঃ এই ধরনের প্রবন্ধে যুক্তি ও মননশীলতার পরিবর্তে লেখকের হৃদয়াবেগেরই প্রাধান্য থাকে ।

           ষষ্ঠতঃ ব্যক্তিনিষ্ঠ  প্রবন্ধে বিষয়বস্তু লেখকের কল্পনা তথা ভাবরসে জারিত হয়ে পাঠকহৃদয়কে স্পর্শ করে ।

           সপ্তমতঃ ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক সরস, মর্মস্পর্শী, আত্মগত ভঙ্গিতে পাঠককে কাছে টানেন।

        অষ্টমতঃ ভাবপ্রধান প্রবন্ধ মূলত ব্যক্তিগত, নৈর্ব্যক্তিক নয়। এখানে আবেগ ও কল্পনার প্রোজ্জ্বলতায় লেখকের ব্যক্তিত্বের দর্পণ ।

এরকম আরও বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও সাজেশন পেতে ভিজিট করুন আমাদের 

                                  "SHESHER KOBITA 

                                        SUNDORBON"

 YOUTUBE CHANNEL আমাদের (শেষের কবিতা সুন্দরবন) ইউটিউব চ্যানেল।






তথ্য সূত্র-

সাহিত্যির রূপরীতি ও তত্ত্ব- তপন কুমার চট্টোপাধ্যায়

বাংলা সাহিত্যের নানা রূপ- শুদ্ধসত্ব বসু


Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প