Skip to main content

নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধ বা সংঘর্ষের কারণ লেখো। (বি.এ চতুর্থ সেমিস্টার)

নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধ বা সংঘর্ষের কারণ লেখো। (বি.এ চতুর্থ সেমিস্টার)


ভূমিকাঃ-  

       ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে সিরাজউদ্দৌলা যখন বাংলার নবাব হন তখন তিনি ছিলেন বয়সে নবীন। শুধু তাই নয় শাসনকার্যে তিনি ছিলেন অনভিজ্ঞ। স্বভাবতই ভারতের কেন্দ্রীয় শক্তির পতনের ফলে রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়। আর সেই শূন্যতা পূরণ করার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা সিরাজের মধ্যে মোটেই ছিল না।। আবার অপরদিকে-

          আলিবর্দী খাঁর দুই জামতা সিরাজকে নানান ষড়যন্ত্রে দুর্বল করে ফেলেছিল।শুধু তাই নয়, তারা ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ অনেকটাই প্রশস্ত করে দেয়। আর এরূপ সংকটপূর্ণ অবস্থার মধ্যেই সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসন আহরণ করেন। অতঃপর সিরাজের সাথে ইংরেজদের বিরোধ দেখা দেয়। আর সেই বিরোধের কারণগুলি ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন নিম্নসূত্রাকারে--

প্রথমতঃ- 

        সিরাজউদ্দৌলা যখন নবাব হন ঠিক তখন ইংরেজ কুঠির অধ্যক্ষ ড্রেক তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করে 'নজরানা' প্রদান করেননি। ফলে খুব স্বাভাবিক কারণেই ইংরেজরা সিরাজের বিরাগভাজনে পরিণত হয়।

দ্বিতীয়তঃ-

         আলিবর্দীর সময়ে সিরাজ যখন নবাব হননি তখন সিরাজ একদিন কাশিমবাজার কুঠি পরিদর্শনে গেলে তাকে কুঠি পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বরং বলা হয় যে, তিনি মত্ত অবস্থায় আছেন এবং তার তারা কারখানার প্রতি সাধন হতে পারে। এই ব্যবহারে সিরাজ অপমানিত হন এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়েন।

 তৃতীয়তঃ- 

        ইউরোপের যখন সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ চলছে সেই সূত্র ধরে ইংরেজ ও ফরাসিরা এদেশের নতুন নতুন দুর্গ নির্মাণের প্রবৃত্ত হয়। কিন্তু এই কাজ থেকে উভয় বণিক সম্প্রদায়কে নিবৃত্ত হওয়ার জন্য সিরাজ এক পরোয়ানা জারি করেন। আর এই প্রস্তাব ফরাসিরা মেনে নিলেও ইংরেজরা এতে কর্ণপাত করল না। এর ফলে ইংরেজদের সাথে সিরাজের প্রত্যক্ষ দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। 

চতুর্থতঃ- 

       আইনের চোখে দোষী রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাসকে ইংরেজরা পরম আত্মীয়ের ন্যায় আশ্রয় প্রদান করেন। স্বভাবতই সিরাজ ইংরেজদের এই কাজকে মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি কৃষ্ণদাস কে নবাবের কাছে প্রত্যাবর্তনের আদেশ দেন। কিন্তু সেই আদেশ ইংরেজরা প্রত্যাখ্যান করে। 

পঞ্চমতঃ- 

        কূটকৌশলে ঘসেটি বেগম এবং সৌকৎ জঙ্গকে ইংরেজরা সিরাজ বিরোধী আন্দোলনে উৎসাহিত করলে ইংরেজদের সঙ্গে সিরাজের মনোমালিন্য দেখা দেয়। 

ষষ্ঠতঃ-

       সিরাজ কর্তৃক নিযুক্ত গুপ্তচর নারায়ণ দাসকে ইংরেজ গভর্নর তিরস্কার করে কলিকাতা থেকে ফেরত পাঠালে সিরাজের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়।

সপ্তমতঃ- 

         বাণিজ্য সংক্রান্ত ব্যাপারেও  ইংরেজদের সাথে সিরাজের বিবাদ শুরু হয়। আর সেই বিবাদের সূত্র ধরে সিরাজ বলেন যে--

      " কোম্পানির কর্মচারীগণ ব্যক্তিগত বাণিজ্যের জন্য দস্তক ব্যবহার করে নবাব তথা স্থানীয় বণিকদের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করেছে।"

         সুতরাং কোম্পানি দস্তকের অপব্যবহার বন্ধ করবে এবং মুর্শিদকুলি খাঁর সময়ে যে শর্তে ব্যবসাবাণিজ্য করে আসছিল, সেই শর্ত পালনে যত্নবান হবে।

             কিন্তু ইংরেজগণ নবাবের এই আদেশ মানতে রাজি না হলে সিরাজ ইংরেজদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ক্রমে উভয়ের সম্পর্ক চরম অবনতি ঘটে এবং তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।


      পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ লেখক হিল, রবার্টস প্রমুখ লেখক উপযুক্ত কারণ গুলিকে যুদ্ধ সৃষ্টির জন্য সিরাজের তৈরি অজুহাত বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মতে সিরাজউদ্দৌলা কর্ণাটকে ইংরেজ সাফল্যে ভীতু হয়ে মিথ্যা অজুহাতে ইংরেজ কুঠি আক্রমণ করে এবং পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেন। তবে--

            এই যুদ্ধে ক্ষমতালোভী হিন্দুদেরও একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। সেখানে উচ্চপদে আসীন বহু হিন্দু সিরাজকে আক্রমণ করার জন্য কোম্পানিকে প্ররোচনা দিয়েছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল, ইংরেজদের সাহায্যে নবাবের শাসন অবসান ঘটানো ও হিন্দু শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আধুনিক ও নিরপেক্ষ ইতিহাসবিদরা এই বক্তব্যের সাথে একমত হতে পারেননি এবং একে ইংরেজ লেখকদের সংকীর্ণ জাতীয়তাবোধের দুষ্ট বলে এক কষ্ট-কল্পনা বলে আখ্যায়িত করেছেন।


এরূপ আরো বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ও সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDARBAN" YouTube  চ্যানেলে।


Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...