Skip to main content

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো।

(For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)


ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-

       আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে--

ডেকার্ট এর অভিমতঃ 

          দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে তিনি দর্শন-চিন্তার আদর্শ হিসেবে নিয়েছেন।সেখানে তিনি বলেন-

      "আমি সবকিছুকে সন্দেহ করতে পারি কিন্তু 

       সন্দেহ করাটা কি সন্দেহ করতে পারি না।"

                   সন্দেহ মানে চিন্তা। আসলে ডেকার্টের মতে চিন্তা এবং চিন্তার কর্তা হিসেবে 'আমি' অর্থাৎ আমার মন বা আত্মা নিঃসন্দেহে সত্য। "আমি চিন্তা বা সন্দেহ করি সুতরাং আমি আছি"। এইভাবে তিনি সর্বপ্রথম আত্মার অস্তিত্বকে প্রমাণ করলেন। পাশাপাশি তিনি বলেন-- 

             আমার মনে ঈশ্বরের ধারণা আছে। এই ধারণার কারণ হিসেবে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে নিঃসংশয় সত্য বলে স্বীকার করতেই হবে। ঈশ্বরকে আমরা অসীম বা অনন্ত বলে জানি। এই ঈশ্বর সর্বগুণসম্পন্ন এবং সর্বশক্তিমান। এইভাবে তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করলেন। তবে তিনি-

     জ্ঞান গঠনে তিনি ৩ প্রকার ধারণার কথা বলেছেন--

১) কৃত্রিম বা কল্পিত ধারণাঃ 

         কৃত্রিম ধারণ মন কল্পনার সাহায্যে সৃষ্টি করে যেমন- আকাশকুসুম, সোনার পাথর বাটি প্রভৃতি।

২) বাহ্য বা আগন্তক ধারণাঃ

             বাহ্য ধারণা গুলি ইন্দ্রিয়ের পথ ধরে বাইরে থেকে মনে আসে। যেমন ফুল, নদী, সাপ প্রভৃতি।

৩)  সহজাত ধারণাঃ 

           সহজাত ধারণাগুলির প্রতি বুদ্ধির একটি সহজাত প্রবণতা থাকে। এদের মাধ্যমেই মন জগৎ ও জীবন সম্পর্কে দার্শনিক জ্ঞান দিতে পারে। যেমন দেশ-কাল, অসীমতা, ঈশ্বর প্রভৃতি ধারণা হলো সহজাত ধারণা। আর এই ধারণা গুলি হল সত্য জ্ঞানের প্রকৃত মূলধন।

ঠিক এইরকম আরও বিষয় ভিত্তিক আলোচনা, সাজেশন পেতে ভিজিট করুন আমাদের 

 "SHESHER KOBITA SUNDORBON" 

          YOUTUBE CHANNEL.


স্পিনোজার অভিমতঃ-

         জ্ঞান উৎপত্তি বিষয়ে দার্শনিক বার্কলের পরে স্পিনোজা বলেন- ঈশ্বর প্রথম এবং পরম তত্ত্ব। জড় এবং মন স্বতন্ত্র ও স্বনির্ভর পদার্থ নয়। এরা সেই এক, স্বয়ম্ভু, আত্ম-সচেতন ভগবৎ সত্তারই প্রকাশ। আর সেখানে-

      জড়ের ধর্ম হলো স্থান বিস্তার করা। আর মনের ধর্ম হলো চেতনা। এই দুটির অনন্ত রূপ হল বৈচিত্র্যময়ী পৃথিবী।আর এই বিচিত্র বস্তসম্ভার এবং এদের বিচিত্র পরিবর্তন।এসবের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর অনাদি অনন্তকাল ধরে নিজেকে প্রকাশ করে চলেছেন। আসলে তিনি বলেন- 

    অসীম এবং অনন্তের ধারণা আমাদের সহযোগ ধারণা। এই অসীম এবং অনন্তের ধারণা থেকেই জ্যামিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সসীমও সান্তের যাবতীয় জ্ঞান লাভ করা যায়। এইভাবে ঈশ্বরকে সবার উপরে রেখে ঈশ্বরের ধারণা থেকে স্পিনোজা জীব ও জগতের সত্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।

লাইবনিজ এর অভিমতঃ-

          দার্শনিক লাইবনিজের মতে "আমাদের সমস্ত ধারণাই সহজাত"। এরা আত্মা বা মনের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং বুদ্ধির সক্রিয়তায় জেগে উঠে বা প্রকাশিত হয়। তিনি আত্মাকে মনাড্ বা চিৎপরমাণু বলেছেন। এই মনাড সংখ্যায় বহু। প্রত্যেকটি মনাড্ আত্মা যাবতীয় জ্ঞানের আধার। এরা জানলা দরজা বিহীন ঘরের মতো।মনাড্ বা আত্মা নিজের বুদ্ধি দ্বারা অন্তর্নিহিত জ্ঞান ও শক্তিকে বিকশিত করে। বাইরের কোন সংবেদনই মনাড্ বা আত্মার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। তবে -

          আমরা যাকে সংবেদন বলি, আসলে তা অস্পষ্ট ও অসংস্কৃত বুদ্ধির সৃষ্টি। প্রসঙ্গত দার্শনিক বলেন- "বুদ্ধিতে এমন কিছু নেই যা পূর্বে ইন্দ্রিয় অনুভবে ছিল না।" আর লকের এই বক্তব্যকে ঘুরিয়ে লাইবনিজ বলেন, বুদ্ধির মধ্যেই আছে অভিজ্ঞতার তাৎপর্য গ্রহণের ক্ষমতা। তাই বুদ্ধিকে বাদ দিয়ে কোন জ্ঞানই সম্ভব নয়।

          পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, জ্ঞান উৎপত্তিতে বুদ্ধির কেবলমাত্র ভূমিকা আছে অর্থাৎ বুদ্ধিই একমাত্র জ্ঞানের উৎস এ কথা বলা ঠিক হবে না। কারণ কোন কিছুকে সোজাসুজি জানার একমাত্র পথ বুদ্ধি নয়। শুধু বুদ্ধির দ্বারা জ্ঞান হয় না। জ্ঞানের জন্য দরকার বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা। এই বুদ্ধি হল জ্ঞানের আকারের দিক এবং অভিজ্ঞতা হলো জ্ঞানের উপদানের দিক। তাই আকার ছাড়া উপাদান অর্থহীন এবং শূন্যগর্ভ।

জ্ঞান উৎপত্তি বিষয়ে বুদ্ধিবাদীদের মতবাদের সমালোচনাঃ

     অভিজ্ঞতালব্ধ সকল জ্ঞান ভ্রান্ত -বুদ্ধিবাদী দার্শনিকদের এই মত স্বীকার করা যায় না। বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ গাণিতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সর্বজনগ্ৰাহ্য ও অবশ্যস্বীকার্য দার্শনিক জ্ঞানলাভে সচেষ্ট হয়েছেন। কিন্তু দার্শনিক জ্ঞানের সঙ্গে গাণিতিক জ্ঞানের পার্থক্য আছে। বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগন বলেন, ধারণা থেকে জ্ঞানের উৎপত্তি হয়। কিন্তু-

                জগতের নিছক ধারণা বলে কিছু নেই। বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণের মূল বক্তব্য সহজাত বা আন্তর ধারণার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু অভীজ্ঞতাবাদী দার্শনিক লক,আন্তর ধারণার অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। তবে-

          বুদ্ধিবাদ বলে, বুদ্ধিতে উদ্ভাসিত যে সত্য, বুদ্ধিতে উদ্ভাসিত যে সত্য যে সত্য তা স্বয়ংপ্রকাশ। তার সত্যতা বিষয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। কিন্তু বুদ্ধিবাদীদের নিজেদের মধ্যে কোন অবিসংবাদিত, সর্বজনস্বীকৃত সত্য নেই।

        কান্টের মতে, বিভিন্ন বিষয়ে বা বস্তুর মতো জ্ঞানেরও দুটি দিক আছে।একটি জ্ঞানের উপাদান, অপরটির জ্ঞানের আকার। বুদ্ধির নিকট থেকে আমরা জ্ঞানের আকার পেয়ে থাকি। কিন্তু উপাদানের জন্য আমাদের ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করতে হয়। সুতরাং-

           জ্ঞানোৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার অবদান অস্বীকার করা যায় না। অভিজ্ঞতা বা ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ ব্যতিরেকে কেবলমাত্র বুদ্ধির সাহায্যে জীবজগৎ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান লাভ করা যায় না। যথার্থ জ্ঞান শুধুমাত্র বুদ্ধি থেকে পাওয়া যায়-এ দৃষ্টিভঙ্গি বিচারবিযুক্তবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। এ মতবাদ জ্ঞানের একটি বিশেষ দিকের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। বুদ্ধি কেবলমাত্র জ্ঞানের আকার দিতে পারে, উপাদান দিতে পারেনা। কিন্তু উপাদান ছাড়া আকার শূন্যগর্ভ। সুতরাং এই বুদ্ধিবাদীদের মতবাদ একদেশদ



Please Subscribe Share Like Comments.

            

Comments

Popular posts from this blog

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প