Skip to main content

জ্ঞানোৎপত্তি বিষয়ে কান্টের বিচারবাদ ব্যাখ্যা করো। এই বিচারবাদ কি গ্রহণযোগ্য? আলোচনা করো।

 জ্ঞানোৎপত্তি বিষয়ে কান্টের বিচারবাদ ব্যাখ্যা করো। এই বিচারবাদ কি গ্রহণযোগ্য? আলোচনা করো।

(BA Second Semester WBSU & Higher Secondary Course)।


ভূমিকাঃ 

      অভিজ্ঞতাবাদ ও বুদ্ধিবাদের মধ্যে নিহিত সত্য গ্রহণ করে কান্ট জ্ঞানৎপত্তির ক্ষেত্রে যে মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন দর্শনের ইতিহাসে তা বিচারবাদ (Criticism or Critical theory of knowledge) নামে খ্যাত। কান্টের মতে বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ উভয়ই চরমপন্থী মতবাদ। উভয় মতবাদই আংশিকভাবে সত্য, পরিপূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তিনি অভিজ্ঞতাবাদ ও বুদ্ধিবাদের বিরুদ্ধে দাবির মধ্যে সমন্বয় সাধন করলেন। আর সেই সমন্বয়ে আমারা পাই--

১) জ্ঞান উপাদান ও আকারের সংমিশ্রণঃ

        কান্টের মতে যথার্থ জ্ঞানের মধ্যে নতুনত্ব অবশ্যই থাকবে। আবার সেই জ্ঞান সর্বজনগ্ৰাহ্য ও অবশ্যস্বীকার্য হবে। কেবল ইন্দ্রিয়ানুভবের দ্বারা জ্ঞান হয় না। আন্তর ধারণা থেকে বুদ্ধির মাধ্যমে যদি আমরা যথার্থ ও সুনিশ্চিত জ্ঞান লাভ করি তাহলে জ্ঞানের অগ্রগতি ও নতুনত্বকে ব্যাখ্যা করা যায় না। আবার-

        অপরদিকে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা যদি জ্ঞানের একমাত্র উপায় হয় তাহলে সর্বজনগ্রাহ্য ও অবশ্যস্বীকার্য ও নিশ্চয়াত্বক জ্ঞান আমরা লাভ করতে পারি না। জ্ঞান হতে গেলে ইন্দ্রিয়ানুভব ও বুদ্ধি উভয়ের প্রয়োজন। তাই কান্ট বলেন-

প্রত্যেক বস্তুর ন্যায় জ্ঞানের দুটি দিক আছে-    

       ১)জ্ঞানের আকার ।

       ২)জ্ঞানের উপাদান।

প্রসঙ্গত কান্ট বলেন, বুদ্ধি কেবলমাত্র জ্ঞানের আকার দিতে পারে কিন্তু জ্ঞানের উপাদান দিতে পারে না। অপরপক্ষে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা জ্ঞানের উপাদান পাই কিন্তু জ্ঞানের আকার পাই না।এই উপাদান ও আকার ব্যতীত কখনোই জ্ঞান সম্ভব নয়।


২) বস্ত সংবেদন জ্ঞানের আকারঃ

 কান্ট বিচারবাদ প্রতিষ্ঠায় বলেন যে,বস্তর দুটি দিক-

             ক)  অবভাসিক দিক, এখানে বস্তু যেভাবে আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়। 

            খ) বস্তুস্বরূপের দিক, এখানে আমাদের মন বাহ্যজগৎ থেকে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সংবেদন গুলি গ্রহণ করে। এই সংবেদন গুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও স্বতন্ত্র। এই সকল সংবেদনগুলি আমাদের কোন জ্ঞান দিতে পারেনা। তাই কান্ট এই সংবেদন গুলিকে জ্ঞানের উপাদান বলেছেন।

৩) ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও বোধজাত আকারঃ 

           কান্ট বলেন, সংবেদনগুলোকে অনুভব বা প্রত্যক্ষ করতে হলে দেশ ও কাল এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করতে হবে। দেশ ও কাল বস্তু নয়, গুণ নয় বা বিভিন্ন বস্তুর সম্বন্ধও নয়। দেশ ও কাল হলো কোন কিছুকে প্রত্যক্ষ করবার মানসিক উপায় মাত্র। আর এখানে কান্ট বলেন -

        দেশ ও কালকে ইন্দ্রিয়ানুভূতির আকার বলেছেন। দেশ ও কালের আকারের মাধ্যমে গৃহীত সংবেদন গুলির ওপর মন কতগুলি বোধজাত আকার আরোপ করে। এছাড়াও তিনি জ্ঞানের ক্ষেত্রে মনের আরও একটি বৃত্তি উল্লেখ করেছেন এবং সেই বৃত্তি হল বুদ্ধি। জগৎ, আত্মা ও ঈশ্বর এই তিনটি ধারণার সাহায্যে বুদ্ধি জ্ঞানকে নিয়ন্ত্রিত করে। 

৪) বোধ প্রকৃতিকে গঠন করেঃ 

           কান্টের মতে ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও বোধের আকারগুলি এবং বুদ্ধির ধারণা সমূহ বস্তুর প্রকাশিত রূপ ও অবভাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তবে এগুলি বস্তুর স্বরূপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সুতরাং- 

       কেবলমাত্র বস্তর অবভাসিক রূপকে জানা যায়, কিন্তু বস্তু স্বরূপ আমাদের নিকট অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় থাকে।তাই আমরা বস্তুস্বরূপ সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করতে পারি না। আর সেই কারণে তিনি বলেন বোধ প্রকৃতিকে গঠন করে (The understanding makes nature)। ইন্দ্রিয়লব্ধ বিচ্ছিন্ন সংবেদন গুলির ওপর বোধ তার আকারগুলিকে প্রয়োগ করে প্রকৃতি রাজ্য সৃষ্টি করে। ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও বোধজাত আকার সমূহ এবং বুদ্ধির ধারণা গুলি হল মানসিক ব্যাপার। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে মনই প্রকৃতি রাজ্য রচনা করে।

সমালোচনাঃ

১)  কান্টের মতে বস্তু স্বরূপই অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয়। বস্তু স্বরূপ অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় হলে বস্তু স্বরূপের অস্তিত্ব স্বীকার করা যায় না। শুধু তাই নয় বস্তুর সড়কেই আমাদের মনে সংবেদন সৃষ্টি করে, একথা বলা মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। সুতরাং বস্তুর স্বরূপ সম্পর্কে কান্টের দৃষ্টিভঙ্গি স্ববিরোধী।

২) কান্টের বিচারবাদ অজ্ঞেয়তাবাদে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন,বস্তু স্বরূপের অস্তিত্ব আছে, কিন্তু বস্তস্বরূপ সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ সম্ভব নয়।আর এ কথা স্বীকার করলে তত্ত্বালোচনার কোন অবকাশ থাকে না।আসলে কান্টের মতে তত্ত্বালোচনা অসম্ভব।

৩) কান্টের মতে জ্ঞানের আকার ও উপাদানের সংমিশ্রণের জ্ঞান সম্ভব। জ্ঞানের আকার আমরা পাই মন থেকে। আর বস্তু স্বরূপ জ্ঞানের উপাদান সরবরাহ করে। দুটি সমজাতীয় জিনিসের মধ্যে সংমিশ্রণ সম্ভব। কিন্তু জ্ঞানের আকার ও উপাদান ভিন্ন জাতীয়। তাই সংবেদন ও বুদ্ধি এই দুই বিপরীতধর্মী প্রক্রিয়ায় কিরূপে জ্ঞান উৎপন্ন করে কান্ট তার যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।


ঠিক এরূপভাবে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ও ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল "SHESHER KOBITA SUNDORBON". ধন্যবাদ 🙏।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...