Skip to main content

বস্তুবাদ কাকে বলে? সরল বস্তুবাদের মূল বক্তব্য কী? সরল বস্তুবাদের তত্ত্বটি ব্যাখ্যা ও বিচার করো।

বস্তুবাদ কাকে বলে? সরল বস্তুবাদের মূল বক্তব্য কী? সরল বস্তুবাদের তত্ত্বটি ব্যাখ্যা ও বিচার করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বিএ দ্বিতীয় সেমিস্টার(NEP) এবং উচ্চমাধ্যমিক)।


বস্তুবাদঃ- 

      যে মতবাদ অনুসারে বাহ্যিক জগতের বিষয়বস্তুর জ্ঞান-নিরপেক্ষ বা মন-নিরপেক্ষ বস্তর স্বতন্ত্র সত্তা আছে, তাকে বস্তুবাদ বলা হয়। আর এই বস্তুবাদ এর সমর্থক হলেন জন লক। 

       তবে আধুনিক দর্শনে বস্তুবাদ হল সেই মতবাদ, যেখানে বলা হয় যে, জড় বস্তুর অথবা ভৌত বস্তুর মন-নিরপেক্ষ এবং ইন্দ্রিয়-অভিজ্ঞতার-নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে। আর এই বস্তুবাদ হল ভাববাদের বিরোধী মতবাদ।


বস্তুবাদের শ্রেণীবিভাগঃ-

                ১) লৌকিক বা সরল বস্তুবাদ 

               ২) প্রতিরূপী বা বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ 


১) সরল বস্তুবাদঃ-

           বস্তুবাদের সরলরূপ হল লৌকিক বস্তুবাদ বা সরল বস্তুবাদ। আর এই মত অনুসারে আমরা জানি যে,ভৌত বস্তু বা জড় বস্তুকে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় সাক্ষাৎভাবে বা সরাসরি জানতে পারি। এরূপ ভৌত বস্তুর মন-নিরপেক্ষ বা মন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে। অর্থাৎ- 

       আমরা জানি বা না জানি ভৌত বস্তুর অস্তিত্ব থাকবেই। যেমন চেয়ার-টেবিল, গাছপালা, পাহাড়, নদী, প্রভৃতি ভৌত বস্তুর অস্তিত্ব আমাদের জ্ঞানের উপর বা আমাদের জানার উপর নির্ভরশীল নয়। তবে এইসব ভৌত বস্তুগুলিকে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার দ্বারা জানা যায়। আর যখন এই ভৌত বস্তুগুলি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান হয় তখন সেই জ্ঞান হলো সাক্ষাৎ বা সরাসরি জ্ঞান। আর সেই সরল বস্তুবাদে বলা হয়-

১) পাহাড়, পর্বত, গাছপালা, নদী, পাথর প্রভৃতি বস্তু নিয়ে বাহ্য জগতের বা বহির্জগতের অস্তিত্ব রয়েছে।

২) উক্ত সকল ভৌত বস্তুর মন নিরপেক্ষ বা জ্ঞান নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে। অর্থাৎ আমরা এই সকল বস্তুগুলোকে প্রত্যক্ষ করি বা না করি এগুলোকে আমরা জানি বা না জানি এগুলির অস্তিত্ব থাকবেই।

৩) ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার দ্বারা এইসব ভৌতবস্তু এবং তার গুণ বা ধর্মগুলিকে আমরা জানতে পারি। এই ভৌতবস্তু ও গুনগুলি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে যে বাক্যের দ্বারা প্রকাশ করি, সেই বাক্যের সত্যতা আমরা ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার দ্বারাই যাচাই করতে পারি।

৪) আসলে ভৌতবস্তুর জ্ঞান হলো সাক্ষাৎ জ্ঞান। অর্থাৎ ভৌত বস্তুকে আমরা সরাসরি জানতে পারি। ভৌত বস্তু আমাদের চেতনায় সাক্ষাৎ ভাবে প্রকাশিত হয়। জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় ভৌত বস্তুর মধ্যে কোন প্রতিরূপ বা ধারণা মাধ্যমরূপে থাকে না। আর এই কারণে এই মতবাদকে অনেক সময় জ্ঞানতাত্ত্বিক অদ্বৈতবাদ বলা হয়। 

৫) আমরা যখন ভৌতবস্তু গুলিকে জানি তখন তার বিভিন্ন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য গুণগুলি কে জানি।আর ইন্দ্রিয়গ্ৰাহ্য গুণগুলি যে ভৌত বস্তুর বা জড় বস্তুর প্রকৃত ধর্ম তা স্বীকার করা হয়। আর এইভাবে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য গুনসহ ভৌত বস্তুটিকে আমরা সরাসরি জানি।

৬) বিভিন্ন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য গুণসহ ভৌত বস্তুকে আমরা সরাসরি জানি বলে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার দ্বারা আমরা ভৌত বস্তুর স্বরূপকে নির্ভুলভাবে জানতে পারি। আর যখন আমরা একটি টেবিলকে দেখি তখন টেবিলটি যেমন সেইভাবেই টেবিলটিকে জানতে পারি।

৭) সরল বস্তুবাদ ভাববাদ বিরোধী মতবাদ। কারণ ভাববাদীদের একটি প্রধান বক্তব্যই হলো যে, ভৌত বস্তুর বা বাহ্য বস্তুর অপ্রত্যক্ষগ্রাহ্য বা জ্ঞান-নিরপেক্ষ অস্তিত্ব সম্ভব নয়। আবার-

       সরল বস্তুবাদ প্রতিরূপী বস্তুবাদেরও বিরোধী। কারণ,প্রতিরূপী বস্তুবাদ অনুসারে আমরা সরাসরি বাহ্যবস্তকে জানি না। বাহ্যবস্তুর গুণের দ্বারা উৎপন্ন ধারণা বা প্রতিরূপের মাধ্যমে ভৌত বস্তুকে পরোক্ষভাবে জানি। 


সরল বস্তুবাদের সমালোচনা বা বিচারঃ-

          সরল বস্তুবাদ এর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। এই মতবাদের সবচেয়ে আপত্তিকর বক্তব্য হলো, যা অনুভবে পাওয়া যায় তাই বস্তু বা বস্তুধর্ম। এই বক্তব্যের অসারতা প্রতিপন্ন করতে গিয়ে সমালোচকেরা যেসব যুক্তির অবতারণা করেছেন তাকে ভ্রমপ্রত্যক্ষমূলক যুক্তি বলা হয়। আর সেই যুক্তিগুলি হল-

১) এই মতানুসারে বাহ্যজগতের বস্তু যেরূপে অবস্থান করে, ঠিক সেই রূপে বস্তু আমাদের মনে প্রতিভাত হয়। কিন্তু অভ্যাসের ক্ষেত্রে আমরা বস্তুকে যথার্থ রূপে প্রত্যক্ষ না করে ভিন্নরূপে প্রত্যক্ষ করি।যেমন-

         অন্ধকারে কখনও কখনও আমরা রজ্জুকে রজ্জু হিসেবে প্রত্যক্ষ না করে সর্প হিসেবে প্রত্যক্ষ করি। এক্ষেত্রে ভাজ্য বস্তুর যথার্থ স্বরূপ আমাদের মনে প্রতিবিম্বিত হয় না। 

২) এই মতানুসারে বিষয় বা বস্তু ব্যতীত জ্ঞান সম্ভব নয়। কিন্তু অনেক সময় আমরা যেখানে কিছু নেই, সেখানে ভুল করে কোন বস্তু প্রত্যক্ষ করি। এই জাতীয় প্রত্যক্ষ কে মনোবিজ্ঞানী অমূল প্রত্যক্ষণ বলা হয়।

৩) সরল বস্তুবাদ স্বপ্নে দৃষ্ট বস্তুর অস্তিত্বের যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারেনা। কারণ স্বপ্নে আমরা এমন অনেক বস্তু প্রত্যক্ষ করে থাকি, যা বাস্তব জগতে তার কোন অস্তিত্ব নেই।  

          পরিশেষে আমরা একথা বলতে পারি যে, কোন বস্তু আসলে যেমন ঠিক তেমনভাবেই তাকে সব সময় জানা যায়, সরল বস্তুবাদীদের এ কথা স্বীকার করা যায় না। অনুভবে যা পাওয়া যায় তাই বস্তু বা বস্তুধর্ম, সরল বস্তুবাদীদের এই ধরনের বক্তব্য খুবই আপত্তির জনক।

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প