Skip to main content

শাস্তি সম্পর্কে প্রতিরোধাত্মক মতবাদটি সবিচার আলোচনা করো।

শাস্তি সম্পর্কে প্রতিরোধাত্মক মতবাদটি সবিচার আলোচনা করুন।(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, দর্শন )


ভূমিকাঃ

    আমরা জানি যে,সমাজ জীবনে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি প্রধান উপায় হল শাস্তি। আর সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সমাজের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ও নিয়ম ভঙ্গকারী মানুষগুলিকে শাস্তি দিয়ে সমাজ তথা রাষ্ট্র সে সকল মানুষগুলির  আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যেখানে -

       এই শাস্তি নামক প্রথাটি পৃথিবীর আদিমকাল থেকে অপরাধীদের দিয়ে আসছে। তবে আদিম যুগে অপরাধীকে শাস্তি দানের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নেওয়া হতো। যেখানে ন্যায়পরায়ণতার দাবীতেই নৈতিক নিয়ম লঙ্ঘনকারী অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয়। যারা সামাজিক ও নৈতিক নিয়ম ভঙ্গ করে সমাজ তাদেরই শাস্তি দিয়ে থাকে। কিন্তু এই শাস্তিদানের মূলনীতি কি হবে তার নির্ধারণ করতে গিয়ে নীতিবিদ্যায় শাস্তি সংক্রান্ত তিনটি মতবাদ উদ্ভব হয়েছে। আর সেই মতবাদগুলি হল- 

             ১) প্রতিরোধাত্মক মতবাদ 

             ২)সংশোধাত্মক মতবাদ এবং   

             ৩) প্রতিশোধাত্মক মতবাদ।

১) প্রতিরোধাত্মক মতবাদঃ প্রতিরোধাত্মক মতবাদ অনুযায়ী কোন অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল, অন্যান্য ব্যক্তিরা যাতে ওই একই ধরনের অপরাধ করা থেকে বিরত থাকে। যদি ব্যক্তিকে তার কোন অপরাধমূলক কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ওই ব্যক্তি নিজে এই জাতীয় অপরাধ থেকে যেমন বিরত থাকবে তেমনি অন্যান্য ব্যক্তিও শাস্তির ভয়ে ঐরকম অপরাধমূলক কাজ করতে ভয় পাবে। এখানে আমরা বলতে পারি মানুষ সাধারণত উদাহরণ দেখে শেখে। কাজেই-

       দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে অপরাধমূলক কাজের প্রতিরোধ করাই শাস্তি দানের প্রধান উদ্দেশ্য। যেমন, কোন পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে অসৎ উপায় অবলম্বন করতে দেখে শিক্ষক বা পরীক্ষার তত্ত্বাবধায়ক তাকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেন। এক্ষেত্রে বহিষ্কার করা রূপ শাস্তিটি কেবলমাত্র অসৎ উপায় অবলম্বনকারী পরীক্ষার্থীকে দেওয়া হলো, তা নয়-ভবিষ্যতে কোন পরীক্ষার্থী যাতে এই ধরনের অপরাধ না করে তার ব্যবস্থাও করা হলো। তবে-

            এই মতবাদটি বেন্থামের উপযোগবাদের মূল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আর এখানে বেন্থামের উপযোগবাদের মূল কথাটি হল-

        " সর্বাধিক মানুষের সর্বোচ্চ সুখ।"

      এই সুখ সম্ভব হলে ব্যক্তি তথা সমাজের কল্যাণের মাধ্যমে তাই সকলের সুখ সম্ভব হবে সমাজ থেকে অপরাধ মুছে গেলে। শাস্তি প্রদানের মূল উদ্দেশ্যই হবে অপরাধ নেতৃত্ব করা অন্যের শাস্তি দেখে মানুষ অপরাধ করার থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবে ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা আসবে না, সমাজে শান্তি থাকবে।

         প্রসঙ্গত আমরা উল্লেখ করতে পারি প্রতিরোধাত্মক মতবাদের সমর্থকগণ লঘু অপরাধের জন্য গুরুদণ্ডকেও তারা সমর্থন করেন। বলা যায়, তারা মৃত্যুদণ্ডকেও এখানে সমর্থন করেন। তাদের যুক্তি হলো, লঘুদণ্ড দিয়ে অপরাধীকে ছেড়ে দেওয়া হলে তা অন্যান্য মানুষের মনে সেই রকম ভয় জাগ্রত করতে পারবে না। তাই গুরুদন্ড হিসেবে ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুদণ্ডেরও প্রয়োজন আছে।

সমালোচনাঃ

     প্রথমতঃ

            প্রতিরোধাত্মক মতবাদ মোটেই আশাপ্রদ নয়। কারণ এই মতবাদের মানুষকে এখানে উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে অপরাধীকে লঘু পাপে গুরুদণ্ড দিয়ে অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার চেষ্টা অবলম্বন করা হয়েছে। তবে ব্যক্তি কিভাবে নিজেকে সংশোধন করতে পারবে, সেই চেষ্টা না করে অন্যব্যক্তি এই শাস্তিদানের মাধ্যমে কি শিখলো, সেদিকেই আলোকপাত করা হয়েছে।

   দ্বিতীয়তঃ 

           শাস্তির মাধ্যমে অপরাধীর প্রকৃত কল্যাণ সম্ভব নয়। মানুষ যদি নিজের থেকে বুঝতে পারে যে, সে যা করছে তা মোটেই কল্যাণকর নয়, তবেই সে অপরাধ করা থেকে নিবৃত হবে। নিছক উদাহরণের মাধ্যমে কোন মানুষকে অপরাধ করা থেকে বিরত করা যায় না। লিলির মতে-

      " এই মতবাদের আসল দুর্বলতা হলো 

      শাস্তিকে দৃষ্টান্ত রূপে গ্রহণ করার মধ্যে

       নিজেদের মতামতকে তুলে ধরা।"

তৃতীয়তঃ 

        দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করাই যদি শাস্তি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হয়, তাহলে যেকোন নিরপরাধ ব্যক্তিকেই তো শাস্তি দেওয়া যায়। তাহলে তো দোষী ও নির্দোষ ব্যক্তির মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না।

চতুর্থতঃ 

       যে যতটুকু অপরাধ করে তার ঠিক ততটাই শাস্তি প্রাপ্য। কিন্তু এই মতবাদে অপরাধের গুরুত্ব ও প্রকৃতি বিচার না করেই লঘু অপরাধের জন্য গুরুদণ্ড দিয়ে থাকে, যা আমাদের ন্যায়নীতির বিরোধী।


Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প