Skip to main content

রবীন্দ্রনাথ ছেলেবেলা গ্রন্থে জ্যেতিরিন্দ্রনাথের যে স্মৃতিচারণা করেছেন তা আলোচনা করো। (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা অনার্স, চতুর্থ সেমিস্টার)

রবীন্দ্রনাথ ছেলেবেলা গ্রন্থে জ্যেতিরিন্দ্রনাথের যে স্মৃতিচারণা করেছেন তা আলোচনা করো। (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা অনার্স, চতুর্থ সেমিস্টার)

অথবা "জ্যোতিদাদা এসেছিলেন নির্জলা নতুন মন নিয়ে...।" 

অথবা "ছাদের রাজ্যে নতুন হাওয়া বইল নামল নতুন ঋতু।"


               আলোচনা শুরুতেই আমরা বলতে পারি যে, উনিশ শতকের সংগীত ও নাট্য ইতিহাসে জ্যেতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি উল্লেখযোগ্য নাম। আর তার থেকে উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা। সেই দাদার সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল রবীন্দ্রনাথকে 'রবীন্দ্রনাথ' করে তোলা। বালক রবীন্দ্রনাথকে বাঁধনের সব শিকল কেটে তাকে মুক্তির জগতে ও আনন্দ জগতের দাঁড় করান এই জ্যোতি দাদাই। আর সেই দাদাকে রবীন্দ্রনাথ বারে বারে তাঁর 'ছেলেবেলা' গ্রন্থে বিনম্র চিত্তে স্মরণ করেছেন।

          আসলে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার দাদার বয়সের ব্যবধানত্র ছিল ১২ বছর। তবে এই ১২ বছর বয়সটি তাঁদের মধ্যে মানসিক মেলবন্ধনের কোন অন্তরায় হয়ে ওঠেনি। তাই আমরা দেখি রবীন্দ্রনাথের জীবনে যাবতীয় নৈরাশ্য, হতাশার মেঘ সরিয়ে দিয়ে তাঁকে দৈহিক ও মানসিক বিকাশ সাধনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছেন তারই দাদা জ্যেতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। বলা যায়, এই সময়কালে রবীন্দ্রনাথের মনে একটা একঘেয়েমি, ক্লান্তিকর অন্ধকারময় জীবন নেমে এসেছিল। আর সেই জীবনে তাঁরই দাদা বইয়ে দিলেন বৈচিত্র্যময় আস্বাদ।তবে-

           ঠিক ওই সময়কালে ঠাকুরবাড়ির বাইরের পরিবেশ ছিল পুরুষদের অধিকারের মধ্যে, আর অন্দরমহলের অধিকার ছিল নারীদের। তবে এই অন্দরমহলে পুরুষদের প্রবেশ পরিপূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ঠাকুরবাড়ির ভিতরের যে ছাদ ছিল সেখানে মেয়েদের ছিল অবাধ স্বাধীনতা।সেখানেও পুরুষদের যাওয়ার উপায় ছিল না। ঠাকুরবাড়ির তিন তলায় চিলেকোঠার ঘরে থাকতেন রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। একটা সময় তাঁর পিতা জোড়াসাঁকো ছেড়ে চলে গেলে সেই ঘরে থাকতে শুরু করেন দাদা জ্যেতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। অতঃপর ঠাকুর বাড়ির দীর্ঘদিন যে প্রচলিত সংস্কার, প্রচলিত বাঁধন সবকিছুই উন্মুক্ত হয়ে গেল। তবে -

      আমরি জানি যে, পুরানো জীর্ণ ঋতু চলে গেলে আসে নতুন ঋতু। আর সেই আগমনের সাথে প্রকৃতির জগত এবং মানবজগতে আসে পরিবর্তন। পিতা চলে যাওয়াার পর ঠাকুরবাড়িতে জ্যেতিরিন্দ্রনাথ তিনতলা ঘরে স্থান নেওয়ার সাথে সাথে এমন ঘটনা ঘটে যায়। যে পরিবর্তনের মধ্যে লক্ষণীয় নারীপুরুষের মধ্যে বিভেদের বন্ধন ছিন্নতা। আর এর মধ্যেই রবীন্দ্র মনোভাবে আমরা পাই-

      "এইবার আমার নির্জন বিদুয়িনি ছাদে শুরু 

       হল আরেক পালা- এল, মানুষের সঙ্গ, 

       মানুষের স্নেহ। সেই পালা জমিয়ে দিলেন 

       আমাদের জ্যোতিদাদা।।"

এখানে আমাদের উল্লেখ করতেই হয় যে, জ্যেতিদাদার তেতলার ঘরে জায়গা করে নিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর তার ফলে দাদা-ভাই বা ছোট-বড় এর মধ্যে কোন ব্যবধান আর রইলো না। অতঃপর -

         রবীন্দ্রনাথের শিল্প মনোভাব,শিল্পসত্ত্বা, সৃষ্টিশীলতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেন তাঁরই দাদা জ্যেতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপর দেখা গেল বৌঠাকরুন সন্ধেবেলা এসে বসতেন ছাদে।আর  ঠিক সেই সময় জ্যোতিদাদা ছাদে বসে বেহালা বাজাতেন এবং রবীন্দ্রনাথ অতি ছড়া সুরে গান গাইতেন। বলা যায় এমন সুন্দর পরিবেশে সন্ধ্যার আকাশ বাতাস রবীর গানে মুখরিত হয়ে উঠতো। এখানে আশ্চর্য ভাবে আমরা লক্ষ্য করলাম যে- 

               জ্যেতিদাদার সাথে রবীন্দ্রনাথের আর কোন বয়সের ব্যবধান রইল না। আর একারণেই জ্যেতিদাদা সময় পেলেই তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যেতেন। একবার তিনি নিয়ে গেলেন শিলাইদহে। আর শিলাইদহের মুক্ত পরিবেশ রবীন্দ্রনাথকে একান্ত ভাবে সঙ্গ দিয়ে তাঁর শিল্প সত্তাকে আরো বিকশিত করে তোলার সুযোগ করে দিল। বলা যায়, এখানে এসে জ্যেতিদাদা রবীন্দ্রনাথকে ঘোড়ায় চড়া শিখিয়ে দিলেন।।

             একবার জ্যোতিদাদা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শিকারে বেরিয়ে পড়লেন। সেদিন জ্যেতিদাদার সঙ্গে নিলেন  বিশ্বনাথকে। এই বিশ্বনাথের ছিল শিকারী হিসাবে বেশ নামযশ।সেদিন জ্যেতিদাদা খবর পেলেন যে শিলাদহ জঙ্গলে বাঘ এসেছে। আর জ্যেতিদাদা সময় নষ্ট না করে হাতির পিঠে চড়ে বেরিয়ে পড়লেন বাঘ শিকার করতে।তিনি সেদিন ঝোঁপের মধ্যে থেকে বাঘের কিনারা বুঝতে পেরে গুলি চালালেন।আর সেইগুলি লেগে গেল বাঘের শিরদাঁড়ায়।গুলি লাগার ফলে বাঘ আর উঠতে পারল না। এই ঘটনার পাশাপাশি- 

          রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা গ্রন্থে আছে জ্যেতিদাদার জাহাজ চালানোর কথা, আছে কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর প্রসঙ্গ। তবে এই জ্যোতিদাদা রবীন্দ্রনাথকে যে কৌশলে ঘোড়ায় চড়া শিখিয়েছিলেন ঠিক তেমনি ভাবে কাদম্বরী দেবীকে শিখিয়েছিলেন ঘোড়ায় চড়ানো।স্ত্রীকে ঘোড়ার উপর পাশে বসিয়ে সকলের সামনে দিয়ে চিৎপুরে রাস্তা দিয়ে ইডেন গার্ডেনের হাওয়া খেতে গেছেন বহুবার। বলা যায় ঠাকুরবাড়িতে আধুনিকতার হাওয়া এইভাবে এসেছিল এই জ্যেতিদাদার হাত ধরে। 

           পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা গ্রন্থে জ্যোতিদাতা একটি অন্যতম মানুষ। যিনি সত্যিকারের পরিবারের সকল সদস্যদের মন মানসিকতা বুঝতে পারতেন। কিন্তু বাবা থাকাকালীন তাঁর কিছু করার ছিল না।তাই বাবা যেদিন জোড়াসাঁকো ছাড়লেন তারপর থেকেতিনি পরিবারের সকল সদস্যদের মধ্যে এনে দিলেন স্বাধীনতার হওয়া। যে হাওয়ায় সকলেই নিজেকে মেলে ধরতে সুযোগ পেলেন।যা তাঁদের আত্ম বিকাশের সহায়ক,একথা আমাদের স্বীকার করতে কোন দ্বিধা নেই।

 


ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা,সাজেশন এবং শিক্ষামূলক ভিডিও পেতে ভিজিট করতে পারেন। আমাদের "SHESHER KOBITA  SUNDORBON"

                            YOUTUBE চ্যানেলে।

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প