Skip to main content

ফুল্লরার বারো মাসের দুঃখ এবং চন্ডির নিকটে পশু গণের দুঃখ-নিবেদন অংশে কবি নিজের অভিজ্ঞতা উজাড় করে দিয়েছেন। মন্তব্যটি বিচার করো

 ফুল্লরার বারো মাসের দুঃখ এবং চন্ডির নিকটে পশু গণের দুঃখ-নিবেদন অংশে কবি নিজের অভিজ্ঞতা উজাড় করে দিয়েছেন। মন্তব্যটি  বিচার করো।


    আলোচনা শুরুতেই আমরা বলতে পারি যে, কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চন্ডিমঙ্গল কাব্যখানি সমগ্র মধ্যযুগে বাংলাসাহিত্যে একটি বাস্তবিক কাহিনী। আর সেই কাহিনী পরিপূর্ণভাবে জীবন রসে জারিত। শুধু তাই নয়, কাব্যটিতে কবি তুলে ধরেছেন বাঙালির জীবনের দুঃখ দারিদ্র্যকে।যে দুঃখ দারিদ্র্য ফুল্লরার পারিবারিক জীবনের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সেই কাহিনীতে আমরা দেখি দেবী চণ্ডী রা কালকেতুর গৃহে এসেছেন তাদের দুঃখ দারিদ্র নতুন করার উদ্দেশ্যে এবং মর্ত্যে তাদের হাতে পূজা পাওয়ার প্রত্যাশায়। তবে এখানে সুন্দরী রমণী রূপে যেহেতু দেবীর চন্ডী আবির্ভূতা হয়েছেন,তাই তার পরিচয় কালকেতু,ফুল্লরা কেউই বুঝতে পারেনি। আর সেই কারণে ফুল্লরা সুন্দরী রমণীকে নিজের সতীন ভেবে সেদিন গৃহ থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিল।তবে--

     ফুল্লরার জীবনের সাথে জড়িত দুঃখ দারিদ্র্য। তার প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা দেখতে পাই দারিদ্রতার ছাপ,দুঃখময় জীবনের ছবি। আর সেখানে আমরা পাই কালবৈশাখীর ঝড়ে তালপাতায় ছাওয়া ছোট্ট কুঁড়েঘরটি আজ ভগ্নপ্রায়। বৈশাখের তীব্র তাপদাহে গাছ তলায় বসে একটু স্বস্তি পাওয়ার অবসার তার নেই। কারণ মাংস না বিক্রি করতে পারলে তাদের সেদিন না খেয়ে থাকতে হবে। এদিকে আবার তীব্র গরমে,সূর্যের তাপে পথ চলার ক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলছে ধীরে ধীরে। তবুও তাকে মাংস বিক্রি করার জন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরতে হবে। ঠিক এমনই অবস্থার মধ্যে জঙ্গলে বৈঁচি ফল খেয়ে তাকে গ্রামে গ্ৰামে ঘুরতে হয়। আবার আষাঢ় মাস, যে সময়ে গৃহস্থের ঘরে কোন সম্বল থাকে না, সে সময়েও তাকে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে হয় মাংস বিক্রি করার জন্য। আর বিক্রি করে যেটুকু পায় তা দিয়ে খুঁদ কুঁড়ো এনে কোনমতে নিশি যাপন করে। আজকের তার এই অবস্থার জন্য সে নিজের মাকে দায়ী করে। আবার শ্রাবণ মাসে অঝোরে বৃষ্টি হওয়ার কারণে তার মাংস বিক্রি বন্ধ থাকে। ভাদ্র মাসে ঠিক একই অবস্থার মধ্যে তাদের দিন কাটতে থাকে। আর এখানে ফুলরাকে বলতে শুনি-

      " শুন মোর বাণী রামা শুষ মোর বাণী। 

        কোন সুখে মোর সাথে হইবে ব্যাধিনী।।"


       ঠিক এরকম ভাবে বছরের প্রতিটি মাস তাকে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয় আবার কোনদিন দুবেলা পেটের অন্য জোটে না এ এক ভয়ঙ্কর জীবনযাত্রা ফুল্লরা র। এরূপ অবস্থার মধ্যে তাকে কোন কোন সময় খাওয়ার পাত্রটি বন্ধক রাখতে হয় এখানে আমরা আশ্চর্যভাবে লক্ষ্য করলাম বারামর্শের দুঃখের দারিদ্র্য বর্ণনা করতে গিয়ে অন্যরা ফুল্লরা কান্নায় ভেঙে পড়ে তবে সে এতদিন দুঃখ সহ্য করেছে নিঃস্বার্থ অধিকার বশে। কারণ প্রেমের স্বর্গরাজ্যে ফ্লোরা সম্রাট সম্রাজ্ঞী শুধু তাই নয় স্বামীর গর্ভে সে গর্ব অনুভব করে সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দারিদ্রতা মেনে নিতে কোনটা বোধ করেনা আর সেই প্রেমে যখন অন্য কেউ ভাগ বসাতে আসে তখন ফুল্লরা বলে শ


          "পিপীড়ার পাখা উঠে মরিবার তরে।

           কাহার ষোড়শী কন্যা আনিয়াছ ঘরে।।"


      ফুল্লরা মুখে এই কথা শুনে কালকেতু ভীষণ রেগে যায়। শুধু তাই নয়, সে ফুল্লরাকে জানায় পরস্ত্রীকে সে মাতৃসমা রূপে শ্রদ্ধা করে।  

       ফুল্লরার বারোমাস্যা কাহিনীতে ফুল্লরার জীবনের দুঃখ কষ্টের কাহিনী অধিক বর্ণিত হয়েছে। আর সেই কারণে এই কবিকে দুঃখবাদী কবি বলে অভিহিত করা হয়। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে, ফুল্লরার বারোমাস্যা কাহিনীতে তার জীবনের দুঃখের কথা বর্ণিত হলেও ফুল্লরা কিন্তু মোটেই দুঃখী নয়। কারণ এই দুঃখ সম্পর্কে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। বাইরে থেকে তাকে দুঃখী বলে মনে হলেও আসলে এটি তার ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়।আর এই ছলনা বলে সে ষোড়শী কন্যাকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিল। আসলে কবির উদ্দেশ্য ছিল এই ছলনার মধ্যে দিয়ে কাব্যকে পাঠকদের হৃদয় দরবারে রসাস্বাদিত করে তোলা।




Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প