ভারতে বিচার বিভাগীয় অতি সক্রিয়তার বিষয়টি ব্যাখ্যা করো। (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দ্বিতীয় সেমিস্টার, মাইনর সিলেবাস)
ভূমিকাঃ আমরা জানি যে,আধুনিক উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। কারণ গণতন্ত্র ও জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বিচার বিভাগের উপর ন্যাস্ত। তবে ২ দশকের বেশি সময় ধরে ভারতবর্ষে বিচার বিভাগ যে বিশেষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে সে ক্ষেত্রেই এই বিচার বিভাগীয় সক্রিয় কথাটি ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রসঙ্গত পি.বি. সাওয়ান্ত বলেন--
"বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা হলো বিচার
বিভাগের সেই কাজ যা তাকে আইন ও
শাসন বিভাগীয় ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে
সাহায্য করে।"
তবে আদালত যখন সংবিধান অনুসারে কোন আইন কিংবা শাসন বিভাগীয় নির্দেশ, আদেশ এর বিচার করে তাকে নেতিবাচক সক্রিয়তা বলে। কিন্তু ভারতবর্ষে বর্তমানে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা বলতে যা বোঝায় তা হল ইতিবাচক বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা। আর এখন আমাদের এই নেতিবাচক ও ইতিবাচক বিচার বিভাগের সক্রিয়তা আলোচনা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। আর সেই বিষয়টি হলো--
১) নেতিবাচক সক্রিয়তাঃ
ভারতীয় সংবিধান অনুসারে বিচার বিভাগ যখন সাংবিধানিক গণ্ডির মধ্যে থেকে আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের বৈধতার বিচার করে তখন নেতিবাচক সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। আর সেখানে আমরা বলতে পারি,স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৫ সালের জুন মাসে ঘোষিত জরুরী অবস্থার পূর্ব পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের সক্রিয়তা ছিল নেতিবাচক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়--
ব্যাংক জাতীয়করণ মামলা, চিরঞ্জিত পাল চৌধুরী বনাম ভারত ইউনিয়ন মামলা ,কেশব নন্দ ভারতী মামলা, প্রভৃতি ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টে রায় সেদিন প্রমাণ করে যে সেদিন সেই পর্যায়ে সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা ছিল অতি নেতিবাচক। আর সেদিন এই নেতিবাচক সক্রিয়তা ভারতবর্ষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছিল।তবে-
১৯৭৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার জরুরি অবস্থার সময়ে নিজেদের অনুগত ব্যক্তিকে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করলে সুপ্রিমকোর্টের আধিপত্য সেদিন বিনষ্ট হয়। বলা যায়, সুপ্রিম কোর্টের নিষ্ক্রিয়তা সেদিন ভারতবর্ষের সামনে প্রবলতর হয়ে উঠেছিল।
২) ইতিবাচক সক্রিয়তাঃ
আমরা জানি যখন বিচার বিভাগ সাংবিধানিক রীতি নীতি ভেঙে আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের বৈধতা বিচার করে তখন তাকে ইতিবাচক সক্রিয়তা বলে। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে, জরুরি অবস্থার উত্তরকালে বিচার বিভাগ এরূপ ভূমিকা পালন করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে-
২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট দেশের কালো টাকা উদ্ধার কাজে সরকারের কাজকর্ম অগ্রগতি দেখার জন্য স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তৈরি করে। আর সেখানে বিচার বিভাগের অতিমাত্রা সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। এই সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনুমতির প্রয়োজন নেই তেমনি সুপ্রিমকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে।
উপরিক্ত আলোচনায় ভিত্তিতে এবং সমালোচনার দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে, ভারতের বিচার বিভাগের বিভিন্ন সক্রিয়তা বিশেষ লক্ষণীয়। তবে এই সক্রিয়তা আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের ওপর বিচার বিভাগের অবাঞ্চিত হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে এটি বিচারবিভাগের এক ধরনের স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গি বলা যায়। তবুও-
আমরা বলতে পারি যে, এই সকল কাজের মধ্যে দিয়ে বিচারবিভাগ বিভিন্ন সময়ে তার নিজস্ব সীমানা পেরিয়ে আইনের ঊর্ধ্বে বিভিন্নভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। তবে নিজেকে স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে প্রতিষ্ঠা করার একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই আমরা বলতে পারি ভারতের মতো এক বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের অতি সক্রিয়তার পরিবর্তে সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে অতি সমন্বয় রাখাটা বিশেষ প্রয়োজন।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDORBON"
YOUTUBE CHANNEL.
Thank you.
Comments
Post a Comment