Skip to main content

ভাববাদ কাকে বলে? বার্কলের আত্মগত ভাববাদ ব্যাখ্যা ও বিচার করো।

ভাববাদ কাকে বলে? বার্কলের আত্মগত ভাববাদ ব্যাখ্যা ও বিচার করো।


ভাববাদঃ 

        যে মতবাদ অনুসারে অধ্যাত্ম সত্তাকে ( আত্মা বা মনকে ) জগতের মূল সত্তা বলে গ্রহণ করা হয় অথবা ভৌত বস্তুর তুলনায় আত্মাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় অথবা জ্ঞেয় বস্তুর অস্তিত্ব বা সত্তাকে জ্ঞাতা নির্ভর বা মন-নির্ভর বলে গণ্য করা হয় তাকে ভাববাদ বলা হয়।


              •বার্কলের আত্মগত ভাববাদ•

১) একমাত্র মন ও মনের ধারণা অস্তিত্ব আছেঃ

                   ব্রিটিশ দার্শনিক জর্জ বার্কলে আত্মগত ভাববাদের প্রথম ও প্রধান প্রবক্তা। আর এই মতবাদ অনুসারে বাহ্য জগতের কোন বিষয় বা বস্তুর মননিরপেক্ষ স্বতন্ত্র ও স্বাধীন অস্তিত্ব নেই। জাগতিক সকল বিষয় বা বস্তু ব্যক্তির মনের উপর নির্ভরশীল। বার্কলের মতে মন এবং মনের ধারণার সত্তা বা অস্তিত্ব আছে।

২) লকের দার্শনিক চিন্তাধারা আত্মগত ভাববাদের পথ প্রশস্ত করেছেঃ 

                   লকের দার্শনিক চিন্তাধারার মূলসূত্র অনুসরণ করে বার্কলে তাঁর আত্মগত ভাববাদের উপনীত হয়েছেন। লক বলেন, বস্তুর কতগুলো গুণ বা ধারণাকে আমরা সাক্ষাৎ ভাবে প্রত্যক্ষ করি এবং এই গুণ বা ধারণার কারণ হিসেবে আমরা বস্তুর অস্তিত্ব অনুমান করি। বস্তুকে কখনো সোজাসুজি ভাবে জানা যায় না। তবে-

        বার্কলে বলেন যাকে কখনো সোজাসুজি ভাবে আমরা জানতে পারি না তার অস্তিত্ব স্বীকার করা যায় না। আর যাকে সোজাসুজি জানা যায় তার অস্তিত্ব বার্কলে স্বীকার করেছেন। আসলে তাঁর মতে বস্তু অস্তিত্ব নির্ভর(Esse est percipi)। অর্থাৎ যা আমাদের প্রত্যক্ষের বিষয় নয় তার অস্তিত্ব কোন মতেই স্বীকার করা যায় না। তবে-

           আমরা সেই সকল বস্তুর অস্তিত্ব স্বীকার করি, যে সকল বস্তু আমাদের মন বা চেতনায় প্রতিভাত হয়। আর এগুলিকে আমরা সোজাসুজিভাবে প্রত্যক্ষ করি থাকি। কারণ তাদের গুণ বা ধারণার অস্তিত্ব আছে। কিন্তু মন ব্যতীত মনের ধারণার অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না। অতএব, বার্কলের মতে, একমাত্র মন এবং মনের ধারণার অস্তিত্ব আছে এবং এটাই আত্মগত ভাববাদের মূল বক্তব্য।

৩) মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের পার্থক্য সঠিক নয়ঃ

          বার্কলে তাঁর আত্মগত ভাববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রথমেই বলেন- লক বস্তুর যে মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের পার্থক্য করেছেন তা আদৌও যৌক্তি সংগত নয়। আর এখানে পাকলে বলেন বস্তুর গৌণ গুণগুলির মতো মুখ্য গুণগুলিও বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রতিভাত হয়। যেমন- 

              একই খাদ্য একজনের কাছে সুস্বাদু এবং অন্য আরেক জনের কাছে বিস্বাদ বলে মনে হয়। ঠিক তেমনি একই বস্তু সবল ব্যক্তির নিকট হালকা ও দুর্বল ব্যক্তির নিকট ভারী বলে প্রতিভাত হয়। সুতরাং গৌণ গুণ গুলোর মতো মুখ্য গুণগুলিরও মন-নিরপেক্ষ সত্তা নেই। আসলে -

              বার্কলে বলেন, বস্তু কতগুলি গুণের সমষ্টি এবং এই গুণগুলি হলো আমাদের সংবেদন বা ধারণামাত্র। সুতরাং কেবলমাত্র মন ও তার ধারণার অস্তিত্ব আছে, বাহ্যজগত বলে কোন কিছু নেই।

৪) বার্কলের আত্মগত ভাববাদে ঈশ্বরঃ

       বস্তুর অস্তিত্ব যদি প্রত্যক্ষের ওপর একান্তভাবে নিবাসশিল হয় তাহলে বস্তুর অস্তিত্বের ধারাবাহিকতা কিভাবে স্বীকার করা যায়? আমরা যতক্ষণ কোন বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি ততক্ষণ সেই বস্তুর অস্তিত্ব আছে। যখন বস্তু আমাদের প্রত্যেকের বাইরে চলে যায় তখন বস্তুর অস্তিত্ব আছে এমন কথা আমরা বলতে পারি না। সুতরাং-

        বার্কলের মতবাদ স্বীকার করলে বস্তুর স্থায়িত্ব ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কিন্তু বার্কলে তাঁর পরবর্তী রচনায় ঈশ্বরের সাহায্যে বস্তুর স্থায়িত্ব বা অস্তিত্ব ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর বস্তুর অস্তিত্ব কোন ব্যক্তিবিশেষের প্রত্যক্ষের উপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে ঈশ্বরের প্রত্যক্ষের উপর। তাই আমরা যখন কোন বস্তুর প্রত্যক্ষ করি না, তখনও সেই বস্ত অস্তিত্ব আছে, কারণ ঈশ্বর সেই সকল বস্তু প্রত্যক্ষ করেন। ঈশ্বর সব সময় সকল বস্তুকে প্রত্যক্ষ করে থাকেন।

                      •সমালোচনা•

১) বার্কলে বলেন,বস্তুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বস্তর সত্তা আছে বলেই বস্তকে প্রত্যক্ষ করা যায়। বস্তু যদি না থাকে তাহলে বস্তুকে করা সম্ভব নয়।

২) বস্তু ও বস্তুর জ্ঞান সম্পূর্ণ ভিন্ন। বস্তু ও বস্তুদ্বাজন যদি ভিন্ন না হয়, তাহলে বিভিন্ন বস্তুর জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যের পরিমাপ করা যায় না কেন?

৩) বস্তু বা বিষয়ের জ্ঞানের জন্য মনের উপর নির্ভর করতে হয়, অস্তিতের জন্য নয়। যেমন টেবিল ফ্যানের বিষয় হিসেবে মনের সঙ্গে টেবিলের সম্পর্কিত হয়। কিন্তু জ্ঞানের বিষয় না হলেও তা থাকতে পারে।

৪) বার্কলে আত্মকেন্দ্রিকতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঈশ্বরকে টেনে এনেছেন। যার ফলে যে আত্মগত ভাববাদ দিয়ে তিনি তাঁর দার্শনিক যাত্রা শুরু করেছিলেন ঠিক তেমনি ভাবে তাকে বিসর্জন দিয়েছেন। তাছাড়াও-

          তিনি অভিজ্ঞতবাদী দার্শনিক হয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে অভিজ্ঞতাবাদ থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছেন। যার ফলে তার মতবাদের মধ্যে বেশ জটিলতা এবং অসংগতি সৃষ্টি হয়েছে।

      পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বার্কলের আত্মগত ভাববাদে কোন যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নেই। অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর নয় বরং প্রত্যক্ষ অস্তিত্ব নির্ভর। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ করা হয় বলেই বস্তু আছে এ কথা ঠিক নয়, আসলে বস্তু আছে বলেই প্রত্যক্ষ সম্ভব হয়। ভাববাদীরা জ্ঞাতা ও বস্তুর মধ্যে এক রহস্যময় আবরণ সৃষ্টি করে জ্ঞানের সহজ ব্যবস্থাকে জটিল করে তুলেছেন।


    • ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করতে পারেন  

        "SHESHER KOBITA SUNDORBON"      

                 YOUTUBE CHANNEL এ।

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প