Skip to main content

ভারতের বিদেশনীতি/পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারক আলোচনা করো। অথবা

ভারতের বিদেশনীতি/পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারক  আলোচনা করো।

অথবা 

ভারতের বিদেশনীতি তৈরীর জন্য মূল উপাদান গুলি কি কি? (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, চতুর্থ সেমিস্টার)


ভূমিকাঃ আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, সুনির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত বিদেশনীতির ছাড়া কোন রাষ্ট্র প্রগতি ঘটাতে পারে না। আর সেই কারণেই প্রত্যেক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের একটি নিজস্ব বিদেশনীতি বা পররাষ্ট্রনীতি আছে। এক্ষেত্রে ভারতবর্ষ তার ব্যতিক্রমী নয়। অন্যান্য রাষ্ট্রের মত ভারতের পররাষ্ট্র নীতি দুই ধরনের নির্ধারক দ্বারা গড়ে উঠছে। যার একটি হল অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং অন্যটি আন্তর্জাতিক বিষয়। আর অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলির মধ্যে আছে- ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক ঐতিহ্য, সামরিক শক্তি, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জাতীয় চরিত্র, জনমত প্রভৃতি। বাহ্যিক বা আন্তর্জাতিক বিষয়ের মধ্যে আছে- আন্তর্জাতিক পরিবেশ, প্রতিবেশী ও বিদেশী রাষ্ট্রগুলি দ্বারা অনুসৃত নীতি এবং বিশ্বজনমত প্রভৃতি।

১)অভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহ 

ক) ভৌগোলিক অবস্থানঃ

             ভারতের বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে তার ভৌগলিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হওয়ার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র হিসেবে পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের মধ্যে ভারতের ভূ-ভাগ সংযোগ রয়েছে। অর্থাৎ এখানে পূর্ব ও পশ্চিমের সেতুবন্ধন হিসেবে ভারতের অবস্থান। এছাড়াও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, সাবেকি সোভিয়েত ইউনিয়নের মত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সরাসরি যোগাযোগ আছে। আর এই যোগাযোগের মাধ্যমে সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ভারত তার পররাষ্ট্র নীতি বা বিদেশ নীতি নির্ধারণ করে থাকে। 

খ) অর্থনৈতিক পরিস্থিতিঃ 

             ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভারতের পররাষ্ট্র নীতির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে ভারতের অর্থনীতি বৈচিত্র্যময়। কৃষিকাজ, হস্তশিল্প, বস্ত্রশিল্প, উপাদান এবং বিভিন্ন সেবা ভারতের অর্থনীতির অংশ। ভারতের শ্রমশক্তির  দুই-তৃতীয়াংশ প্রত্যক্ষভাবে কিংবা পরক্ষ ভাবে কৃষিখাত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। পাশাপাশি ভারতের সেবাখাত ভারতের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ভারতের সফটওয়্যার ও আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে অতি দক্ষ শ্রমিক সরবরাহ করে থাকে। এছাড়াও উৎপাদন, ঔষধ শিল্প, প্রযুক্তিবিদ্যা, ন্যানো প্রযুক্তি, টেলি যোগাযোগ, জাহাজ নির্মাণ, বিমান ভ্রমণ এবং পর্যটন শিল্প গুলিতে ভবিষ্যতে জোরালো সমৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। তবে বলা যায়, ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে ভারত ক্রমে উদারপন্থী অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে তার বাজারগুলি উন্মুক্ত শুরু করে।

গ) রাজনৈতিক ঐতিহ্যঃ 

             অতীতের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ভারতের বিদেশনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ভারতের প্রাচীন সভ্যতা, ধর্মীয় সহনশীলতা, ব্রিটিশ শাসনের তিক্ত অভিজ্ঞতা, গান্ধীবাদী দর্শন, ভারতের রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে গড়ে তুলেছে এবং এর ব্যাপক প্রভাব ভারতীয় বিদেশনীতিতে লক্ষ্য করা যায়।

ঘ) সামরিক শক্তিঃ 

             ভারতের বিদেশনীতির রূপায়ণের ক্ষেত্রে সামরিক শক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়,সামরিক শক্তি বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে একটি অন্যতম হাতিয়ার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের রাজপুত রেজিমেন্ট, গোর্খা রেজিমেন্ট সমগ্র বিশ্বে খ্যাতি লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারত সামরিক শক্তির আরো প্রসার ঘটিয়েছে। বিশেষ করে বায়ু সেনা, নৌসেনা নিয়ে গঠিত ভারতের সামরিক বাহিনী বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনী। এর পাশাপাশি বর্তমানে ভারত পারমাণবিক অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়েছে।

ঙ) আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিঃ 

                 ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের সাথে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক। তবে ১৯৫০ এর দশকে ভারত আফ্রিকা ও এশিয়ার ইউরোপীয় উপনিবেশ গুলির স্বাধীনতার স্বপক্ষে সওয়াল করেছে। শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রেরণ ও মালদ্বীপে অপারেশন ক্যাকটাস এই দুই ক্ষেত্রে ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সামরিক মধ্যস্থতায় অংশ নেয়। কমনওয়েলথের সদস্য ভারত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ভারত-চীন যুদ্ধ ও ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ভারতের সম্পর্ক আন্তরিক হয়ে ওঠে। আর তার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। প্রসঙ্গত বলা যায় কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারতের সাথে পাকিস্তানের তিনটি যুদ্ধ হয়। আর সেই তিনটি যুদ্ধে ভারতবর্ষ সামরিক ক্ষেত্রে নিপুন দক্ষতার পরিচয় দেয়। 

      পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বর্তমানকালে ভারত যে সকল প্রতিষ্ঠানে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছে সেগুলি হল আসিয়ান, সার্ক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। তবে সাম্প্রতিককালে ভারত সরকারের প্রচেষ্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান ও চিনির সাথে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। তাই আমরা বলতে পারি, ভারতের বিদেশ নীতির কোন একটি উপাদানের দ্বারা নির্ধারিত নয় অস্তিত্ব পরিস্থিতি অনুসারে কোন একটি বিশেষ উপাদান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। 


ঠিক এরূ বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক আলোচনা, সাজেশন ও ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের 

'SHESHER KOBITA SUNDARBAN' YouTube Channel এ।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...