Skip to main content

পালকিখানা ঠাকুরমাদের আমলের'। ঠাকুরমার'নাম কি? 'ছেলেবেলা' গ্রন্থে এই পালকি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মতামত লেখো।

'পালকিখানা ঠাকুরমাদের আমলের'। ঠাকুরমার'নাম কি? 'ছেলেবেলা' গ্রন্থে এই পালকি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মতামত লেখো। (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, বাংলা অনার্স)


দিগম্বরী দেবী অর্থাৎ দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্ত্রী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরমা। আর সেই ঠাকুরমার আমলের একটি পালকি ছিল ঠাকুর বাড়িতে। যে পালকিটা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কৌতুহলের, আনন্দের, গর্বের , শেষ ছিল না।আর সেই পালকিটির বর্ণনা তিনি তার ছেলেবেলার গ্রন্থে অনাবিল ভাবে তুলে ধরছেন। সেখানে আমরা দেখি-

        ঠাকুরবাড়ি র পালকিটার খুব দরাজবহর ছিল। নবাবী ছাঁদের ডান্ডা দুটো ছিল আটজন বেহারার কাঁধের মাপের। পালকিটির গায়ে ছিল রঙ্গিন আঁকা জোকা নকশা যে আঁকা জোকা সেকালের আভিজাত্য বহন করে। তবে বর্তমানে পালকিটির কিছু কিছু জায়গায়  ক্ষয়ে গেছে দাগ ধরেছে। আবার কোথাও কোথাও থেকে বেরিয়ে পড়েছে গদি। আর সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েছে নারকেলের ছোবড়া। তবে বর্তমানে পালকিখানা খাজাঞ্চিখানার বারান্দার এক কোণে পড়ে আছে অনাদরে। এখানে স্মৃতিচারণায় রবীন্দ্রনাথকে বলতে শুনি-

   "আমার বয়স তখন ৭-৮ বছর এই সংসারে

    কোন দরকারই কাজে আমার হাত ছিল না

    আর ওই পুরানো বাকিটা কেউ সকল 

    দরকারের কাছ থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া

    হয়েছে এই জন্যই ওর উপরে আমার

    এতটা মনের টান ছিল।"

তবে সেই স্মৃতিচারণায় রবীন্দ্রনাথ আরো বলেন বদ্ধ দরজার মধ্যে ঠিকানা হারিয়ে চারদিকের নজরবন্দী এড়িয়ে বসে আছি।

     'ছেলেবেলা' গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচারণায় বিশেষ করে ঠাকুরমার আমলের পালকিখানা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি সামনে তুলে ধরেন-তখন রবি ঠাকুরের বাড়িখানা ছিল ভরা সংসার। প্রচুর লোকজন। আপন পর কত তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। সেখানে আছে নানা মহলের চাকর, দাসী আরো অনেকেই। তারা চারিদিকে হৈচৈ করে কাজ করতে থাকে। আর সেরকমই একটি চিত্রে আমরা দেখি-

           বাড়ির সামনের উঠোন দিয়ে ধামা কাঁখে বাজার করে নিয়ে আসে প্যারিদাসী। সেই ধামায় আছে বিভিন্ন তড়িতরকারি আরো অনেক কিছু। পাশাপাশি পেয়ারা গঙ্গাজল নিয়ে আসে বাঁখ কাঁধে করে। বাড়ির ভেতরে তখন চলছে তাঁতিনিদের শাড়ির সওদার কাজ। ঠিক সেই সময় উঠনে তুলো ধুনছে ধুনরি ঢং ঢং আওয়াজ তুলে। আবার ভিখারির দল বসে আছে ভিক্ষার আশায়। এরকম অসংখ্য ষ

নানান চিত্র ঠাকুরবাড়িতে দৃশ্যমান।তবে-

       একটা সময় বেলা বেড়ে রোদ্দুর উঠে, তখন দেউড়িতে ঘন্টা বেজে ওঠে। পালকির ভেতরকার দিনটা ঘন্টার হিসাব মানে না। কারণ সেখানকার বারোটা সেই সাবেক কালের তখন রাজবাড়ীর সিংহদ্বারে সভাভঙ্গের ডঙ্কা বেজে উঠত। আর ঠিক তখনই রাজা চলে যেতেন চন্দনের জলে স্নান সারতে। আর ছুটির দিনে দুপুরবেলা যাদের তাবেদারিতে তিনি ছিলেন তারা এখন খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুম নিচ্ছে। ঠিক এই সময়ে তিনি একাকী আছেন বসে। এই একাকী জীবনে মনের মধ্যে অচল পালকি, হাওয়ায় তৈরি বেহারাগুলো আমার মনের নিমক খেয়ে মানুষ। তবে চলার পথটা তারই জন্য কাটা হয়েছে আজ। আর সেই পথে চলছে পালকি দূরে দূরে, দেশে দেশে, যেসব দেশের বই পড়া নাম আমারই লাগিয়ে দেওয়া। কিন্তু -

        কখনওবা তাঁর মনের পথটা প্রবেশ করে ঘন বনের মধ্যে। আর সেখানে বাঘের চোখ জ্বলজ্বল করে জ্বলছে, যা দেখে গা ছমছম করে ওঠে। তবে ভয় নেই সঙ্গে আছে বিশ্বনাথ শিকারী। সবাই চুপ হয়ে গেল তারপরে এক সময় পালকির চেহারা বদলে গিয়ে হয়ে ওঠে ময়ূরপঙ্খী। ভেসে চলে সমুদ্রে, তখন ডাঙা যায় না দেখা। দাঁড় করতে তাকে ছপ্ ছপ্ করে। ঢেউ ওঠে দুলে দুলে ফুলে ফুলে। আর ঠিক সেই সময় মাল্লার বলে ওঠে-

           " সামাল সামাল ঝড় উঠলো।"

হালের কাছে আছে আব্দুল মাঝি। সূঁচালো তার দাড়ি, গোঁফ তার কামানো, মাথা তার ন্যাড়া। তাকে তিনি চিনেন ।সে দাদাকে এনে দিত পদ্মা থেকে ইলিশ মাছ এবং কচ্ছপের ডিম। এই আব্দুল মাঝি একদিন রবি ঠাকুরের কাছে গল্প করেছিল গল্পটি ঠিক এইরকম-

    একদিন চত্তির মাসে ডিঙি নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছে , হঠাৎ এল কালবৈশাখী। ভীষণ তুফান, নৌকা ডুবে যায় এমন। আব্দুল মাঝি দাঁতে রসি কামড় ধরে ঝাঁপিঊ পড়লো জলে। সাঁতার দিয়ে চরে উঠল কোনমতে। অতঃপর কাছি ধরে টেনে তুলল তার ডিঙিখানা। গল্পটি খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল কিন্তু কৌতূহল রয়ে গেল। তখন মনে হল নৌকাটা ঢুকলো না অমনি বেঁচে গেল সকলেই? আর এমন প্রশ্ন নিয়ে বারবারই তিনি বলতে লাগলেন তারপর? তারপর? আর তখন আব্দুল মাঝি বলতে থাকে-

        'তারপর সে এক কান্ড! দেখি, 

        এক নেকড়ে বাঘ। ইয়া তার 

        গোঁফ জোড়া।'

এমন সময় ঝড় ওঠে, আর সেই ঝড় লাগে ওপারে গঞ্জের ঘাটে পুকুরগাছে। দমকা হাওয়ায় বাগভায়া ভেসে যায় প্রবল জলের তোড়ে। অবশেষে কোন মতে বাঘ ভায়া চড়ে উঠে এলো। চড়ে উঠে এসে বাঘভায়া চোখ পাকিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। অনেক সময় সাঁতার কেটে তার খিদেটা বেশ জমে উঠেছে। তবে এই বাঘভায়া অনেককে চিনলে আব্দুল মাঝিকে কিন্তু চেনে না। অবশেষে বাঘটির গলায় ফাঁস আটকে যায়। আর সেই ফাঁস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বাঘটি ছটফট করতে থাকে। অতঃপর আব্দুল মাঝি কুমিরের গল্প শোনায় লেখককে। আর লেখক সেই সকল গল্প খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকেন। এইভাবে লেখক তারপর? তারপর? সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান।

      লেখক রবীন্দ্রনাথের এটাই ছিল পালকির ভেতর সফর। কিন্তু পালকির বাইরে এলে তিনি হয়ে যেতেন মাস্টার।ঠিক সেই সময়ে পালকির রেলিং গুলি হয়ে উঠতো ছাত্র, আর তখন তারা চুপ থাকতো। তবে তারা ছিল ভীষণ দুষ্টু, পড়াশোনায় নেই তাদের মন। তাদেরকে ভয় দেখানো হতো বড় হলে কুলিগিরি করতে হবে। মার খেয়ে তাদের গায়ের দাগ পড়ে গেলেও কিন্তু দুষ্টুমি তাদের থামতে চায় না। থামলে চলে না, কারণ থামলে যে তাদের খেলা বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও-

     আরো একটা খেলা ছিল, যে খেলা আমার কাঠের সিঙ্গিকে নিয়ে। পূজায় বলিদান এর গল্প শুনে ঠিক করেছিলাম শিঙ্গিকে বলি দিলে খুব একটা কান্ড হবে। তার পিঠে কাঠি দিয়ে অনেক কোপ দিয়েছি। মন্তর তৈরী করতে হয়েছিল, নইলে পুজো হয় না। তবে পূজার মন্ত্র ছিল তাঁর ধার করা কিন্তু কিছু শব্দ ছিল তার নিজস্ব। আর সেই ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লেখক জানান-

        "কেবল আখরোট কথাটা আমার নিজের। আখরোট খেতে ভালোবাসতুম। খটাস্ শব্দ থেকে বোঝা যাবে আমার খাঁড়াটা ছিল কাঠের। আর পটাস্ শব্দে জানিয়ে দিচ্ছে সে খাঁড়া মজবুত ছিল না।"


ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDORBON"    

             YOUTUBE CHANNEL ।

                       Thank you.


       

,

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...