Skip to main content

ভারতীয় সংবিধান অনুসারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক বা শাসনতান্ত্রিক সম্পর্ক আলোচনা করো।

ভারতীয় সংবিধান অনুসারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক বা শাসনতান্ত্রিক সম্পর্ক আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মাইনর, দ্বিতীয় সেমিস্টার)।


ভূমিকাঃ 

       আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার গুলির মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করা হয় প্রধানত ক্ষমতা ও দায়িত্ব বন্টনের মধ্যে দিয়ে। আর সেই বন্টনের মাপকাঠি প্রধানত ধরা হয় কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে প্রশাসনিক সম্পর্ক বা শাসন সংক্রান্ত সম্পর্ক এবং আর্থিক সম্পর্কের মাধ্যমে। তবে এখানে প্রসঙ্গগত আমরা বলে রাখি, ভারতবর্ষের মতো অন্য কোন দেশের যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গুলির মধ্যে এরূপ শাসনতান্ত্রিক সম্পর্ক নিয়ে এত বিশদ আলোচনা করা হয়নি। আর এক্ষেত্রে ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতারা ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল বলা যায়। আর সেখানে আমরা দেখি--

প্রশাসনিক ক্ষমতাঃ

ক) কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ক্ষমতাঃ 

            ভারতীয় সংবিধানে ৭৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতাযুক্ত এলাকা সংসদ প্রণীত আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর এই ক্ষমতা গোটা ভারতবর্ষের এক্তিয়ার ভুক্ত। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম সন্ধি, চুক্তির মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি কেন্দ্রের শাসন ক্ষমতার মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ এখানে বলা যায় যে,কেন্দ্রীয় তালিকা ভুক্ত বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় সরকার ভোগ করে থাকে। 

খ) রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতাঃ 

             ভারতীয় সংবিধানে ১৬২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, রাজ্য প্রশাসনিক আইন প্রণয়নের অধিকারী রাজ্য আইনসভা। আর রাজ্য প্রশাসনিক আইন গুলি ভোগ করে থাকেন রাজ্য সরকার। তবে তার এই ক্ষমতা রাজ্যের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখানে বলে রাখা ভালো যে রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়গুলি কেবলমাত্র রাজ্য আইনসভা আইন প্রণয়ন করতে এবং ভোগ করতে পারেন।

গ) যুগ্ম প্রশাসনিক ক্ষমতাঃ 

               যুগ্ম প্রশাসনিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই এই ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। অর্থাৎ এখানে এই তালিকাভুক্ত বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই আইন প্রণয়ন করতে পারে। কিন্তু এখানে বলে রাখা ভালো যে, যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতার সাধারণত রাজ্যের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। তবে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে যুগ্ম তালিকাভুক্ত শাসক ক্ষমতা সংসদ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে দিতে পারে। 


ক) কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দানের ব্যবস্থাঃ

     ১) সংবিধানের  ২৫৬ নম্বর ধারা অনুসারে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা এমনভাবে প্রচলিত হবে যে, সেখানে সংসদ প্রণীত বিভিন্ন আইন ও প্রচলিত আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকবে। পাশাপাশি -

       ২) সংবিধানের ২৫৭/১ ধারায় বলা হয়েছে যে, রাজ্য সরকারের শাসন ক্ষমতা এমনভাবে প্রচলিত হবে যে, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন ক্ষমতার সাথে রাজ্য প্রশাসনিক আইনের কোন বিরোধ সৃষ্টি না হয়। তবে এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজন মনে করলে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিতে পারে।

   এছাড়াও ২৫৭/৩, ৩৩৯/২, ৩৫১ ধারা অনুসারে বিভিন্ন বিষয় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকার গুলিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারেন।

খ) রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের দায়িত্ব প্রদানঃ

১) ভারতীয় সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি রাজ্য সরকারের সম্মতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন সংক্রান্ত কোনো কাজ রাজ্যের হাতে অর্পণ করতে পারেন। এছাড়াও-

      ২) সংসদ কোন বিষয়ে আইন প্রণয়ন করে রাজ্যের মন্ত্রীসহ যেকোনো কর্মচারীকে তা কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিতে পারেন। আর সেই দায়িত্ব পালন করা মন্ত্রী বা কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক।

     আর এই সকল বিষয়গুলি শর্তহীন ভাবে রাষ্ট্রপতি রাজ্যের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করতে পারেন। তবে তার জন্য অতিরিক্ত ব্যয়ভার কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে।


গ) আন্তঃরাজ্য বিরোধ নিরসনেঃ 

           সংবিধানের ২৬২/১ ধারা অনুসারে আন্তঃরাজ্য বিষয়গুলির মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দিলে তা নিরসনে সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে। শুধু তাই নয়, সংসদ এই সকল বিরোধের বিষয়টি সুপ্রিমকোর্ট সহ দেশের সকল আদালতের বাইরে রাখতে পারে। তবে এই বিরোধের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকার গুলির অনুরোধে একটি ট্রাইবুনাল গঠন করে এবং সেই ট্রাইবুনালের রায় সব পক্ষই মান্য করতে বাধ্য।

ঘ) আন্তঃরাজ্য পরিষদঃ 

           সংবিধানের ২৬৩ নম্বর ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি আন্তঃরাজ্য পরিষদ গঠন করতে পারেন। আর এই আন্তঃরাজ্য পরিষদের প্রধান কাজ হল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।

ঙ) জরুরী অবস্থানকালীনঃ

                ভারতীয় সংবিধান অনুসারে রাজ্যগুলিকে বৈদেশিক শত্রুর হাত  এবং অভ্যন্তরীণ গোলোযোগ  হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৩৫২ নম্বর ধারা অনুসারে সারাদেশে কিংবা দেশের কোন অংশে জরুরী অবস্থা জারি করতে পারেন।আর এরূপ অবস্থায় সারাদেশে বা কোন রাজ্যের শাসন পরিচালিত হবে কেন্দ্রের নির্দেশে।

      এছাড়াও রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা, রাজ্যপালের মাধ্যমে রাজ্যগুলিকে নিয়ন্ত্রণ, কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রেরণ প্রভৃতির মাধ্যমে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। 

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনিক ক্ষমতার বিষয়, ক্ষমতা বন্টনের বিষয়টি বেশ উল্লেখযোগ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এই ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধতা থাকলেও এর উপযোগিতা কোনমতেই অস্বীকার করা যায় না। তাই আমরা বলতে পারি কেন্দ্র ও রাজ্যের এই প্রশাসনিক ক্ষমতা বন্টনের মধ্যে দিয়ে, ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার গুলির মধ্যে একটা বন্ধুত্বমূলক পরিবেশ গড়ে ওঠে। আর যেটি ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

এরূপ বিষয় ভিত্তিক আলোচনার ভিডিও, বিষয়ভিত্তিক সাজেশন, সিলেবাস এবং পুস্তকের তালিকা পেতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল "SHESHER KOBITA SUNDORBON"


Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...