Skip to main content

প্রতিরূপী বস্তুবাদ(Representative Realism) বা বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ(Scientific Realism)বা সবিচার বস্তুবাদ কাকে বলে ? লকের প্রতিরূপী বস্তুবাদ ব্যাখ্যা ও বিচার করো।

প্রতিরূপী বস্তুবাদ(Representative Realism) বা বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ(Scientific  Realism)বা সবিচার বস্তুবাদ কাকে বলে ? লকের প্রতিরূপী বস্তুবাদ ব্যাখ্যা ও বিচার করো।

(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, দর্শন, দ্বিতীয় সেমিস্টার, মাইনর সিলেবাস এবং একাদশ শ্রেণি)


প্রতিরূপী বস্তুবাদঃ 

          যে মতবাদে বস্তুর মন-নিরপেক্ষ অস্তিত্ব স্বীকার করা হলেও বস্তুর জ্ঞানকে পরোক্ষ অর্থাৎ ধারণার মাধ্যমে জ্ঞান বলা হয়, তাকে প্রতিরূপী বস্তুবাদ বা বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ বলা হয়। অর্থাৎ-

           যে জগৎকে আমরা দেখতে পাই তার অস্তিত্ব আছে। কেননা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা জগৎকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করি। আমরা বাইরে জগতে যা-ই প্রত্যক্ষ করি না কেন, তা-ই বস্তুগত। বস্তু ছাড়া আমাদের জ্ঞান হয় না। আর এই প্রতিরূপী বস্তুবাদের প্রবর্তন করেন ব্রিটিশ দার্শনিক জন লক।


           •প্রতিরূপী বস্তুবাদের মূল বক্তব্য•

১) আমাদের জাগতিক বস্তুসমূহের স্বতন্ত্র অর্থাৎ মন বা জ্ঞান নিরপেক্ষ অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়।

২) জাগতিক বস্তু সরাসরি ভাবে বা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের জ্ঞানের বিষয় হয় না। অর্থাৎ বস্তুকে আমরা কখনোই প্রত্যক্ষভাবে জানতে পারি না। তাই বস্তুর প্রকৃত রূপ চিরকালই আমাদের কাছে অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় থাকে। 

৩) বস্তু প্রত্যক্ষভাবে আমাদের জ্ঞানের বিষয় হয় না ঠিকই, কিন্তু বস্তু সম্বন্ধে আমরা যেসব ধারণা লাভ করি সেগুলিই কেবল আমাদের জ্ঞানের বিষয় হয়। অর্থাৎ বস্তু না জানলেও বস্তুর ধারণা আমরা পেয়ে থাকি। আর  বস্তুর ধারণাই হলো বস্তুর প্রতিরূপ (Representation)।

৪) বস্তুর ধারণা গুলি আমাদের কল্পনার সৃষ্টি নয়। বস্তুর স্বয়ং আমাদের মনে ধারণা উৎপন্ন করে।

৫) আমরা জাগতিক বস্তু সম্বন্ধে দুই ধরনের গুণ পাই। আর সেই দুটি গুণ হলো- মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ।

প্রতিনিধিত্বমূলক বস্তুবাদঃ

       জন লক বলেন যে,মন সোজাসুজি কোন বস্তুকে জানতে পারে না। মন শুধু তার নিজের ধারণা গুলিকেই জানে। আসলে মন বা চেতন একটি পর্দার মতো। আর সেই পর্দার ওপর মনের বাইরের যে সব বস্তু, এই ধারণারই মাধ্যমে পরোক্ষ উপায়ে জানে। তাই ধারণাই আমাদের জ্ঞানের বিষয়।

• বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদঃ

         জন লক জাগতিক বস্তুর গুণগুলিকে মুখ্যগুণ এবং গৌণগুণ এই দুই ভাগে ভাগ করেছেন। এখানে তিনি মুখ্য গুণগুলোকে(আকার,আয়তন, বিস্তৃতি) বস্তুগত এবং গৌণ গুণগুলিকে( বর্ণ, গন্ধ,শব্দ) ব্যক্তিগত বলেছেন। আর এই গুণ দুটির আলোচনা প্রকৃত বিজ্ঞানসম্মত হওয়ায় তাঁর মতবাদকে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ বলা হয়।

• সবিচার বস্তুবাদঃ

        লকের প্রতিটি বস্তুবাদ তৎকালীন বিজ্ঞানের প্রবল প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তাই জন লক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁর মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন। আর সে কারণে তার এই মতবাদকে সবিচার বস্তুবাদ নামে খ্যাত। 

• জ্ঞানতাত্ত্বিক দ্বৈতবাদঃ

           প্রতিরূপী বস্তুবাদী জ্ঞানের বিষয় ও বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করা হয়। আর সেখানে জ্ঞানের বিষয় হলো ধারণা বা প্রতিরূপ। কিন্তু যার সম্বন্ধে ধারণা বা যার প্রতিরূপ তা হল বস্তু এবং বস্তু নিজে কখনও জ্ঞানের বিষয় হয় না। ধারণার মাধ্যমে বস্তু জ্ঞান হয়। তাই ব্লক তার জ্ঞানতত্ত্ব ধারণা এবং বস্তু এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য করে সেই কারণে তার মতবাদকে জ্ঞানতাত্ত্বিক দ্বৈতবাদ বলা হয়। 

• ভ্রান্ত প্রত্যক্ষের সক্ষমতাঃ 

          প্রতিরূপী বস্তুবাদ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষ এবং অমূল প্রত্যক্ষের এর ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। আমরা বস্তু সম্বন্ধে যেসব ধারণা পাই, এগুলির সাথে বস্তুর সাদৃশ্য না থাকলে আমাদের মনে ভ্রান্ত প্রত্যক্ষের জ্ঞান হয়। যেমন রাতের অন্ধকারে দড়িতে সর্পের প্রত্যক্ষ। আবার অমূল প্রত্যক্ষে কোন বস্তই উপস্থিত থাকে না। অথচ কোন বস্তু সম্বন্ধে ধারণা হয়। আর সেই ধারণার সাথে প্রকৃত সাদৃশ্য দেখানো সম্ভব হয় না। ফলে যে প্রত্যক্ষের জন্য এই ধারণা হয়, তা হলো অমূল প্রত্যক্ষ।


           •প্রতিরূপী বস্তুবাদের সমালোচনা•

১) প্রতিরূপী বস্তুবাদ বাহ্য জগতের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে না। মন কেবল ধারণাকে জানে, ধারণাকে অতিক্রম করে কোন জাগতিক বস্তু আসলে আছে কিনা তা জানা সম্ভব নয়।

২) প্রতিরূপী বস্তুবাদ অনুসারে আমরা বস্তুকে না জেনে বস্তুর ধারণাকে জানি। বস্তুকে আমরা কখনোই জানতে পারি না। তবে বস্তুটির সাথে ধারনার মিল থাকলে সত্য আর মিল না থাকলে ধারণাটি মিথ্যা হয়। আর এরূপ বলার মধ্যে কোন সঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায় না। 

৩) বাহ্য বস্তুকে যদি আমরা না-ই জানতে পারি, তাহলে এই বস্তু যে আমাদের ধারণার কারণ, তা জানা কিভাবে সম্ভব?প্রতিরূপী বস্তুবাদ এর উত্তর দিতে অক্ষম।

৪) লক প্রতিরূপী বস্তুবাদে গুণের যে শ্রেণীবিভাগ করেছেন তা বার্কলে সমালোচনা করে বলেন যে, বাস্তব অভিজ্ঞতায় আমরা মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণগুলোকে অবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দেখি। যেমন বস্তুর আকার বর্ণকে বাদ দিয়ে থাকতে পারে না, আবার বর্ণ আকারকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়।


• এরূপ বিষয় ভিত্তিক আলোচনা, ভিডিও,সাজেশন এবং অন্যান্য পরামর্শ পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDORBON" YOUTUBE CHANNEL এ।


Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...