Skip to main content

ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো

ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা কর।( পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার, মাইনর সিলেবাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান)


           সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দুই ধরনের শাসকের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। সেখানে একজন নিয়মতান্ত্রিক বা নাম সর্বস্ব শাসক এবং অপরজন হলেন প্রকৃত শাসক। ভারতবর্ষের নাম সর্বস্ব শাসক হলেন রাষ্ট্রপতি এবং প্রকৃত শাসক হলেন প্রধানমন্ত্রী সহ তাঁর মন্ত্রীপরিষদ। তবে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ভারতবর্ষে-

     রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে এবং ৩৫ বছর বয়স হতে হবে। সেই সাথে লোকসভা বা রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী কোন মতেই রাষ্ট্রীয় লাভজনক পদে থাকা চলবে না। শুধু তাই নয় তার নাম ৫০জন নির্বাচক কর্তৃক প্রস্তাবিত এবং সমর্থিত হতে হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় অবশ্যই ১৫০০০ টাকা জামানত হিসেবে জমা রাখতে হবে। রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। তবে তিনি পুনঃনির্বাচিত হতে পারেন। আবার সংবিধান ভঙ্গের অভিযোগে পার্লামেন্ট রাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করতে পারেন।

ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ ভারতীয় সংবিধান অনুসারে শাসন বিভাগীয় সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি হাতের ন্যস্ত করা হয়েছে। সংবিধানের ৫৩/১ নম্বর ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে যেসব ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১) শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ

           রাষ্ট্রপতি হলেন দেশের সর্বোচ্চ শাসক প্রধান। সংবিধান অনুসারে ভারতবর্ষে সকল শাসন বিষয়ক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যাস্ত করা হয়েছে। সেখানে সংবিধানের ৭৭/১ নম্বর ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন সংক্রান্ত সকল কাজ রাষ্ট্রপতির নামেই সম্পাদিত হয়। তবে রাষ্ট্রপতি তাঁর অধস্তন কর্মচারীদের দ্বারা শাসন ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে।আর সেগুলি হল-প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সকল সদস্যকে তিনি নিয়োগ করেন। এছাড়াও অ্যাটার্নি জেনারেল, সর্বোচ্চ ব্যয় নিয়ন্ত্রক, মহা হিসাব পরীক্ষক, রাজ্যপালগণ, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণ প্রমুখদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে থাকেন। 

আইন সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ

           রাষ্ট্রপতি হলেন কেন্দ্রীয় আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবিধানের ৭৯ নম্বর ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি, লোকসভা ও রাজ্যসভাকে নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠনের কথা বলা হয়েছে।রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান এবং স্থগিত রাখতে পারেন। কোন সাধারণ বিলে সংসদে মতবিরোধ দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি দুটি কক্ষের যুগ্ম অধিবেশন আহ্বান করে থাকেন। এছাড়াও-

      রাষ্ট্রপতি সংসদের  উচ্চকক্ষে ১২ জন সদস্যকে নিয়োগ করতে পারেন এবং অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে দুজনকে লোকসভায় মনোনীত করতে পারেন। রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়া কোন বিল আইনে পরিণত হতে পারে না। তবে অর্থবিল বা সংবিধান সংশোধনের বিল সংসদে গৃহীত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে রাষ্ট্রপতি সেই বিল সম্মতি জানাতে বাধ্য।

অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ

         সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতির সুপারিশ ব্যতীত কোন অর্থবিল লোকসভায় উত্থাপন করা যায় না। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির রাজস্ব বন্টনের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অর্থকমিশন গঠন করতে পারেন। প্রত্যেক আর্থিক বছরের জন্য সরকারের আনুমানিক আয় ব্যয়ের বিবরণ বা বাজেট অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি সংসদের নিকট পেশ করেন।

বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ

          রাষ্ট্রপতির সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করে থাকেন। আর সেই সাথে পার্লামেন্টের সুপারিশক্রমে আবার তাদের অপসারিতও করতে পারেন। তবে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে দন্ডিতদের দন্ডহ্রাস, দন্ডাদেশ স্থগিত বা ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির আছে।

জরুরী অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ 

           ভারতীয় সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে কতকগুলি জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আর সেই ক্ষমতা গুলি হল জাতীয় জরুরী অবস্থা (৩৩২ নম্বর ধারা), রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা জনিত জরুরী ক্ষমতা (৩৫৬ নম্বর ধারা) ও আর্থিক জরুরী অবস্থা (৩৬০ নম্বর ধারা)।

অন্যান্য ক্ষমতাঃ 

         রাষ্ট্রপতির অন্যান্য ক্ষমতা গুলির মধ্যে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ, তাদের কার্যাবলীর শর্তাবলীর সংক্রান্ত নিয়ম তৈরি করা, কেন্দ্রীয় সরকার ও সংসদের সচিবালয়ের কর্মচারীদের নিয়োগ প্রভৃতি। আবার তিনি কোন রাজ্যের অর্ডিন্যান্স জারি করার জন্য রাজ্যপালকে নির্দেশ দিতে পারেন।

পদমর্যাদাঃ 

        ভারতের রাষ্ট্রপতি কে প্রকৃত শাসক বলে যারা মনে করেন তাদের অভিমত হলো, রাষ্ট্রপতির হাতে দেশের যাবতীয় শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা ন্যাস্ত করা হয়েছে। আবার প্রধানমন্ত্রী সহ সমস্ত মন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করেন এবং তাদের স্বপদে বহাল থাকার জন্য রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির প্রয়োজন। আবার রাষ্ট্রপতিকে সহজেই পদচ্যুত করা যায় না। পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রের জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। আবার অপরদিকে বলা হয়-

          রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে একটি মন্ত্রীপরিষদ থাকে। যে মন্ত্রীসভা লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে। রাষ্ট্রপতির নামে মন্ত্রীপরিষদই সকল ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। আর সেই কারণেই বলা যায়,ভারতের শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা নিতান্তই নিয়মতান্ত্রিক ।

ঠিক এরূপ বিষয় ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল "SHESHER KOBITA SUNDORBON" YOUTUBE CHANNEL 


Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প