Skip to main content

রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা গুলি আলোচনা করো।

রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা গুলি আলোচনা করো। (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, এন ই পি সিলেবাস ২০২৪)

ভূমিকাঃ আমরা জানি যে, যেকোন দেশ যেকোনো মুহূর্তে সংকটজনক বা যুদ্ধকালীন অবস্থায় পড়তে পারে। আর সেই সংকটজনক অবস্থার মধ্যে থেকে দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য অবশ্যই সরকারের হাতে বিশেষ ক্ষমতার প্রয়োজন। ভারতীয় সংবিধান রচয়িতারা এরূপ উপলব্ধি থেকে সংবিধানের ৩৫২ থেকে ৩৬০ নম্বর ধারার অনুসারে রাষ্ট্রপতির হাতে তিন ধরনের জরুরি ক্ষমতা অবস্থা ন্যাস্ত করেছেন। আর সেই জরুরি ক্ষমতাগুলি হল-

১) জাতীয় জরুরি অবস্থা (৩৫২ নম্বর ধার)ঃ

      ভারতীয় সংবিধানের ৩৫২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি যদি এই মর্মে নিশ্চিত বা সন্তুষ্ট হন যে- যুদ্ধ বহিরাক্রমণ বা দেশের মধ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহের কারণে সমগ্র ভারতে বা ভারতের কোন অংশে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে বা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে তাহলে তিনি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।আর এই ঘোষণাটি এক মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়, তা না হলে সেই আইনটি বাতিল হয়ে যায়। এখনো পর্যন্ত ভারতবর্ষে তিনবার জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়েছে ১৯৬২ ১৯৭১ এবং ১৯৭৫ সালে। জাতীয় জরুরি অবস্থা ফলাফল গুলি এইরূপ- 

ক) সংসদ রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে।

খ) সংসদ সরকারি কর্মচারীদের যে কোন কাজে নিযুক্ত করতে পারে। তবে-      

             সাংবিধানের ৪৪ তম সংশোধনের বলা হয়েছে যে জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয় রাষ্ট্রপতির সন্তষ্টি যথেষ্ট নয়, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার লিখিত সম্মতি আবশ্যক। গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষরা বিভিন্ন সময় সংবিধানের এই অংশটিকে অ-গণতান্ত্রিক বলে দাবি করেছেন এবং তাকে বাতিল করার জন্য বিভিন্ন সময়ে সোচ্চারও হয়েছেন।

২) রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা (৩৫৬ নম্বর ধারা) 

       রাজ্যপালের রিপোর্টের ভিত্তিতে অথবা অন্য কোনভাবে রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে, কোন একটি রাজ্যে সংবিধান অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। আর শাসনতান্ত্রিক অচল অবস্থা ঘোষণা করার পর রাজ্যের শাসনভার রাষ্ট্রপতি নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন । কোন রাজ্যে এরূপ শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণা করাকে বলা হয় রাষ্ট্রপতি শাসন।

৩) আর্থিক জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা(৩৬০ নম্বর ধারা) 

ভারতীয় সংবিধানের ৩৬০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি যদি এই মর্মে নিশ্চিত বা সন্তষ্ট হন যে- সমগ্র ভারতে বা ভারতের কোন অংশের আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে তাহলে তিনি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। তবে এই ঘোষণাটি দু মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। আর তা না হলে সেই আর্থিক জরুরি অবস্থা বাতিল হয়ে যায়। তবে এখানে উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়োজন যে, এখনও কোনো রাজ্যে এরূপ আর্থিক জরুরি অবস্থা একবারও ঘোষণা হয়নি। আর্থিক জরুরি অবস্থার ফলাফল গুলি হল-

         ১) রাষ্ট্রপতি সকল সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা হ্রাস করতে পারেন।

         ২)  রাজ্য আইনসভা কর্তৃক গৃহীত অর্থ বিলগুলি রাষ্ট্রপতি ভেটো ক্ষমতার অধীনে আসে।

         ৩) আর্থিক জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকাকালীন সময়ে কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে আর্থিক ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারে।

  ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল "SHESHER KOBITA SUNDORBON" YOUTUBE CHANNEL ।

      

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...