Skip to main content

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মাইনর- NEP, Second Unit) ।

          • আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একজন নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান থাকেন,আর তার নামে দেশের সমস্ত কাজ শাসনকার্য পরিচালিত হয়। কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা ভোগ করেন প্রকৃত শাসক, যিনি জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। ভারতেও অনুরূপ সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। এই ব্যবস্থায় নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। প্রকৃত ক্ষমতা আছে প্রধানমন্ত্রীর অর্থাৎ প্রকৃত শাসক হলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের দ্বারা নির্বাচিত হন।আর সেই  সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মতো সম্পর্ক গুলি হল--

 ১) ভারতীয় সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত হন।আর সেখানে লোকসভায় যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সেই দলের নেতা বা নেত্রীকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করে থাকেন। তবে লোকসভায় কোন দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সেক্ষেত্রে নির্বাচনে যে দল বেশি আসন পেয়েছে অথবা কোন জোট গঠিত হলে জোটের নেতাকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। তবে এক্ষেত্রে তিনি সেই নেতা বা নেত্রীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার নির্দেশ দিতে পারেন।

২) ভারতের সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শদানের জন্য একটি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী হবেন ওই মন্ত্রিপরিষদের প্রধান।

৩) প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল শেষ হওয়া আগেই কোন কারণে যদি তাঁর মৃত্যু হয় তাহলে রাষ্ট্রপতি নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের পরবর্তী নেতাকেই তিনি আহবান করবেন। 

৪)প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার মধ্যে যোগসূত্র রক্ষার কাজ করেন। শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে এবং আইনের প্রস্তাব সম্পর্কিত কার্যাবলীর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে সিদ্ধান্তগুলি উপস্থাপিত করেন।

৫) রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইন ও প্রশাসনিক প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হল সে সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা। 

৬) প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা যেসব নীতি গ্রহণ করেন বা অন্যান্য কার্যাবলী পালন করেন সেইসব কৃতকর্মের জন্য লোকসভার কাছে তাঁর দায়িত্বশীল থাকতে হয়। কিন্তু লোকসভার আস্থা হারালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ওই প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয়।

৭) শাসন সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারে আবার রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিতে পারেন।

৮) ভারতের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় সেখানে তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতি হলেন সকল প্রকার শাসন বিভাগীয় প্রধান। বাস্তবে মন্ত্রিসভার নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সকল কার্য পরিচালনা করেন। তবে রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী কাজের ক্ষেত্রে সংবিধান লঙ্ঘন করছেন তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে পারেন। 

৯) লোকসভার আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী পরাজিত হলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে লোকসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী এই পরামর্শ মানতে পারেন আবার নাও মানতে পারেন। রাষ্ট্রপতি উক্ত প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন।

১০) কোন কারনে যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন তাহলে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন না করে না হওয়া পর্যন্ত উক্ত প্রধানমন্ত্রীকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলতে পারেন। আবার বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতি কোন তদারকি সরকার গঠনের জন্যও বলতে পারেন। যতদিন না নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ততদিন পর্যন্ত তদারকি সরকার কাজ করে যাবে। 

             পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থার কার্যকর হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে বিপুল ক্ষমতা আছে। রাষ্ট্রপতি তত্ত্বগতভাবে প্রধান হলেও বাস্তবে সকল কাজের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভূমিকাই বেশি। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি তাই সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে বিরোধও উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু সেই সব বিরোধের বিষয়গুলি ব্যাপক আকার নিতে পারেননি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উভয়ের ব্যক্তিত্ব  বিচক্ষণতা জরুরি কালীন সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থা, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা প্রকৃতির উপর তাদের মর্যাদা নির্ভরশীল। উভয়ের মধ্যে মধুর সম্পর্ক ভারতের সংসদীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোতে বিশেষভাবে কাম্য।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...