Skip to main content

কার্যকারণ সম্বন্ধে লৌকিক মতবাদ

কারণ একটি শক্তি বিশেষ, যা কার্য উৎপন্ন করে- মতামতটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

                           অথবা

কার্যকারণ সম্পর্কে লৌকিক মতবাদটি আলোচনা করো।(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার, দর্শন, এন ই পি সিলেবাস)


                লৌকিক মতামতঃ 

আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,কারণ ও কার্যের সম্বন্ধ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদ গড়ে উঠেছে। আর সেই মতবাদগুলি হল-

    ১) কার্য-কারণের মধ্যে আবশ্যিক সম্পর্ক আছে বলে যাঁরা মনে করেন তাঁরা হলেন বুদ্ধিবাদী দার্শনিক।

    ২) যাঁরা কার্য-কারণের আবশ্যিকতা না স্বীকার করে নিয়ত ও সতত সংযোগকে স্বীকার করেছেন যাঁরা তাদের অভিজ্ঞতাবাদী বলা হয়।

           তবে এই দুটি মতবাদ ছাড়া লৌকিক মতাবাদ নামে আর একটি মতবাদ গড়ে উঠেছে। তাঁরা কার্য-কারণের সম্বন্ধকে আবশ্যিক ও আন্তর সম্বন্ধ বলে ঘোষণা করেছেন। আর তাঁদের মতে কারণ কার্যকে ঘটায়। সেই লৌকিক মতবাদে বলা হয়--

             •কারণ কার্যকে উৎপন্ন করে• 

     লৌকিক মতামতকে বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাই যে, কারণ হলো একটি শক্তি বিশেষ যা সক্রিয়ভাবে কার্য উৎপন্ন করে। আসলে এই সম্বন্ধ হলো উৎপন্ন সম্বন্ধ, যা কারণ কার্যকে ঘটায় বা উৎপন্ন করে।তবে-

        কারণের মধ্যে এমন একটি শক্তি আছে যা কার্যকে ঘটাতে সাহায্য করে অর্থাৎ কারণ ঘটলেই কার্য ঘটতে বাধ্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জলে ডুবলে দম বন্ধ হয়ে যায়। এখানে জলে ডোবা হল কারণ এবং দম বন্ধ হওয়া হলো তার কার্য।

                            •বৈশিষ্ট্য• 

         ১) কারণ কার্যকে উৎপন্ন করে অর্থাৎ কারণ ঘটলে কার্য ঘটতে বাধ্য বা কারণ ঘটলে কার্য অবশ্যই ঘটবে। আর এর দ্বারা আমরা স্পষ্টতই বলতে পারি যে, কারণ একটি শক্তি বিশেষ যা কার্যকে ঘটতে সাহায্য করে।

          ২) কারণ হলো কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনা, আর কার্য হলো কারণের অনুবর্তী ঘটনা।

          ৩) কার্য-কারণ সম্বন্ধের মধ্যে আবশ্যিক সম্বন্ধ বা অনিবার্য সম্বন্ধ বর্তমান।

           ৪) কারণ-শক্তি যখন কার্য-শক্তিতে পরিবর্তিত হয়, তখন কার্য শক্তি হলো কারণ-শক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ নতুন শক্তি বা রূপ। সুতরাং এর থেকে আমরা স্পষ্টতই বলতে পারি যে, কার্য-কারণের সম্বন্ধ হলো সার্বিক ও অনিবার্য সত্য। যেখানে একটি সত্য হলে সত্য হলে অপরটি সত্য হবে বা কারণ ঘটলে কার্য ঘটবে। অর্থাৎ কারণই কার্যকে উৎপন্ন করে।

                     •বৈজ্ঞানিক মতামত•

           বৈজ্ঞানিকরা কারণ ও কার্য উভয়কেই শক্তিরূপে প্রকাশ করেছেন। কারণ-শক্তি সর্বদাই কার্য-শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরের পূর্ববর্তী ঘটনা হলো কারণ ও পরবর্তী ঘটনা হলো কার্য। তবে এরা কিন্তু এক নয় পরস্পর অভিন্ন। এদের মতে, কারণ ও কার্যের মধ্যে অবশ্যই আবশ্যিকতার সম্পর্ক বর্তমান। বৈজ্ঞানিকরা এই নীতির নাম দিয়েছেন শক্তির অবিশ্বরতার নীতি।


Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...