Skip to main content

উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় কাকে বলে? উদ্দেশ্য ও অভিপ্রয়ায়ের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় কাকে বলে? উদ্দেশ্য ও অভিপ্রয়ায়ের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

            আমরা জানি প্রতিটি কাজের পিছনে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় থাকে।প্রাত্যহিক জীবনে আমরা উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়কে একই অর্থে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই উদ্দেশ্য এবং অভিপ্রায় এই দুটি শব্দ এক নয়, এই দুটি শব্দকে নীতিবিদ্যায় ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়। আর সেখানে--

•উদ্দেশ্যঃ উদ্দেশ্য হলো এমন একটি মানসিক অবস্থা

               যা ব্যক্তিকে বিশেষ একটি কাজ করতে বাধ্য করে ও একই কাজের পিছনে এক মানসিক আবেগ কাজ করে। আর এই কারণে অধ্যাপিকা লিলি বলেন-

    "উদ্দেশ্য হলো একটি সচেতন মানুষের ক্রিয়া যা 

    একজন মানুষকে একটি বিশেষ পন্থায় কাজ 

    করতে এগিয়ে দেয়।"

        উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের যখন খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে তখন আমরা রেস্তোরায় গিয়ে খাদ্য বস্তর খোঁজ করি।এই খাবারের প্রতি বাসনাটি হলো হল আমাদের উদ্দেশ্য।

•অভিপ্রায়ঃ মানুষ যে ফলাফলের দিকে নজর দেখে 

                 একটি কাজ করে তাকে অভিপ্রায় বলে। তবে উদ্দেশ্যের থেকে অভিপ্রায় কথাটি অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। অভিপ্রাযয়ের মধ্যে আছে উদ্দেশ্য, লক্ষ্য,বা কাম্যবস্তু, বস্তু লাভের উপায় এবং এর পরিণাম বা ফলাফলের মিশ্রিত রূপ। অভিপ্রয়ের মধ্যে প্রতিকূল ও অনুকূল উপাদান থাকে। যেমন-

       ছেলের কল্যাণের জন্য বাবা ছেলেকে শাস্তি দেন। এখানে বাবার উদ্দেশ্য হলো ছেলের কল্যাণ সাধন আর অভিপ্রায় হলো ছেলের কল্যাণ এবং ছেলেকে শাস্তি দেওয়া। অর্থাৎ -

সুতরাং- 

  অভিপ্রায়= উদ্দেশ্য+ উপায় + কাম্য ফলাফল। 


    •উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্য•


•প্রথমতঃ উদ্দেশ্য হল সুখ-দুঃখের অনুভূতি ও নির্বাচিত কাম্য বস্তুর ধারণা যা মানুষকে বিশেষ কোনো ঐচ্ছিক ক্রিয়া করতে প্রণোদিত করে। কিন্তু -

     অভিপ্রায় হলো উদ্দেশ্য, উপায় ও কাম্য ফলাফলের সমন্বিত বিষয় যা মানুষকে কোন কর্ম করতে প্রণোদিত করে অথবা বিরত করে।


•দ্বিতীয়তঃ বেন্থাম উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্য করতে গিয়ে বলেছেন যে, লক্ষ্যসাধনের জন্য যখন কাজটি করা হয় তা হলো উদ্দেশ্য। কিন্তু-

        প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যে লক্ষ্যসাধনের জন্য যখন কাজটি করা হয় তা হলো অভিপ্রায়।


•তৃতীয়তঃ উদ্দেশ্যের মধ্যে কেবল প্ররোচক থাকে, যার ফলে মানুষ কাজটি করে। কিন্তু-

        অভিপ্রায়ের মধ্যে প্ররোচক ও প্রতিরোধক উভয়ই থাকে, যার জন্য ব্যক্তি কাজটি করতে পারে, আবার নাও করতে পারে।


•চতুর্থতঃউদ্দেশ্যের মধ্যে বিচারবুদ্ধির বিবেচনার কোন স্থান নেই।কিন্তু-

   অভিপ্রায়ের মধ্যে বিচার বুদ্ধির বিবেচনা, ভালোমন্দ নির্ধারণ প্রভৃতি বিচার প্রক্রিয়া থাকে।


•পঞ্চমতঃউদ্দেশ্য নৈতিক বিচারের বিষয় নয়। কিন্তু-

     অভিপ্রায় নৈতিক বিচারের বিষয়। 


         পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, অভিপ্রায়ের মধ্যে উদ্দেশ্যের ধারণাটি অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু উদ্দেশ্যের মধ্যে অভিপ্রায়ের ধারণা কোনোভাবেই সংযুক্ত নয়।তাই অভিপ্রায় উদ্দেশ্যের তুলনায় ব্যাপকতর ধারণা, একথা আমরা বলতেই পারি।


ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল "SHESHER KOBITA SUNDORBON" YOUTUBE CHANNEL ।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...