Skip to main content

রাষ্ট্রকূট বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে? এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজার নাম কি? কিভাবে রাষ্ট্রকূট শক্তির উত্থান হয়েছিল তা আলোচনা করো।

রাষ্ট্রকূট বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে? এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজার নাম কি? কিভাবে রাষ্ট্রকূট শক্তির উত্থান হয়েছিল তা আলোচনা করো।

( ইতিহাস, মাইনর,দ্বিতীয় সেমিস্টার, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় শিক্ষানীতি সিলেবাস ২০২০)


ভূমিকাঃ 

           আমরা জানি যে,বিভিন্ন বংশের শাসকরা তাঁদের যোগ্যতা-দক্ষতা দিয়ে দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন প্রাচীন যুগের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন। আর তাদের অন্যতম বংশ হলো রাষ্ট্রকূট বংশ। চালুক্যদের ক্ষমতার গরিমা চূর্ণ করে দন্তিদুর্গ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা হলেন অমোঘবর্ষ।

        আমরা জানি যে ৭৫২ থেকে ৯৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যে রাজবংশ ভারতের উত্তর এবং দক্ষিণ অংশ আলোকিত করেছে সেটি হলো রাষ্ট্রকূট রাজবংশ। তৎকালীন সময়ে রাষ্ট্র বলতে প্রশাসনিক বিভাগ এবং রাষ্ট্রকূট বলতে রাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে বোঝানো হতো। তবে পরবর্তীকালে এই অর্থটি পরিবর্তিত হয়ে জাতি বা গোষ্ঠীর রূপে গণ্য হয়। বলা যায়, চালুক্যদের সামান্য সামন্ত রাজা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রাষ্ট্রকূট রাজারা নিজ পরাক্রমে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধপ্রদেশ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে ইতিহাসের পাতায় তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নেন। আর এই সকল অঞ্চলগুলো ছিল তাঁদের সাম্রাজ্য।তবে-

       ৭৫৩ সালে লিখিত সামানগড় তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, দন্তিদুর্গ ছিলেন চালুক্য রাজাদের অধীনস্থ সামান্ত। তুমি আবার রেবারের অচলপুর অর্থাৎ মহারাষ্ট্রের এলিচপুরে শাসন করতেন। আর এই শাসনকালে তিনি বাদামীর চালুক্য বংশীয় রাজা দ্বিতীয় কীর্তি বর্মনের বিরাট সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করেছিলেন। আর এইভাবে তিনি বাদামীর চালুক্যদের কাছ থেকে তাঁদের সাম্রাজ্যের উত্তরাংশ দখল করে নিয়েছিলেন। তবে এখানে-

            দন্তিদুর্গ তাঁর পিতৃব্য প্রথম কৃষ্ণকে চালুক্য শক্তির পতন ঘটিয়েছিল তা নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। ৯৩০ ও ৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের রচিত গোবিন্দের দুইটি রচনা চালুক্য শক্তির উচ্ছেদের কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে প্রথম কৃষ্ণকে। কিন্তু আলকেতর বলেন-

         "৭৭০ ও ৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের লিখিত স্বয়ং প্রথম কৃষ্ণের তালেগাঁও ও ভান্ডুক শাসনের চালুক্য শক্তির উচ্ছেদ ঘটানোর কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে দন্তিদুর্গকে।"

       তবে-পরবর্তীকালে নথিতে যে দন্তিদুর্গকে লঙ্ঘন করা হয়েছে তার কারণ হলো যে, বেঙ্গীর চালুক্যদের পতন ঘটিয়েছিলেন প্রথম কৃষ্ণ। তবে সে যাই হোক তাঁর উত্তরাধিকারী প্রথম কৃষ্ণ চালুক্য শক্তির পতন এনেছিলেন।

         আমরা যদি দন্তের দুর্গের কর্মজীবন লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে যে, তিনি ছিলেন একাধারে দক্ষ সংগঠক ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী। তবে তিনি এই সময় উপলব্ধি করেন যে পল্লবদের সাথে নিরন্তর যুদ্ধের ফলে চালুক্যরা দুর্বল হয়ে পড়ছে। এরই পাশাপাশি মুসলিম আক্রমন গুজরাটও দুর্বল হয়ে পড়ছে। ঠিক এমন অবস্থার মধ্যে তিনি এক দুরদর্শিতার সাথে রাজনৈতিক চুক্তি সম্পন্ন করেছিলেন। এক্ষেত্রে তিনি তার ভ্রাতুষ্পুত্রদের শক্তি ও পৌঢ় পিতৃব্যগণের অভিজ্ঞতা সার্থকভাবে ব্যবহার করেন। আর তার ফলে-

   দক্ষিণ গুজরাট, খান্দেশ, রেবার, উত্তর মহারাষ্ট্র তাঁর দখলে আসে। আসলে তিনি ছিলেন দক্ষ ও প্রাজ্ঞ প্রশাসক এবং হিন্দু ধর্মের অত্যন্ত একনিষ্ঠ অনুসরণকারী। আর সে কারণে তিনি যখন উজ্জয়নী গিয়েছিলেন তখন তিনি হিরণ্যগর্ভমহাদান সম্পন্ন করেছিলেন। আবার ৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে রথসপ্তমীর দিনে ব্রাহ্মণদের নিজের ওজনের সমপরিমাণ সোনা দান করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি মায়ের অনুরোধ রক্ষা করার জন্য যোগ্য ব্রাহ্মণদের কয়েকটি গ্রাম দানও করেছিলেন।

         রাষ্ট্রকূট রাজ্যের সর্বশেষ শক্তিশালী রাজা ছিলেন তৃতীয় ইন্দ। তিনি পতিহারকে পরাজিত করে কালাঞ্জর ও চিত্রকুট, পুনর্বার মহীশূর এবং পল্লবদের কাঞ্চি, চোল নগরী, প্রভৃতি অঞ্চল নিজ ক্ষমতাবলে দমন করেন। আর এখানে আলতেকার বলেন-

       "আর কোন রাষ্ট্রকূট রাজা তাঁর মতো সমগ্র 

          দাক্ষিণাত্য জয় করেননি।"

আসলে রাষ্ট্রকূট রাজ্য কতগুলি প্রদেশ এবং প্রদেশগুলি বিষয় বা জেলায় বিভক্ত ছিল। আর সেখানে লেখমালার সাক্ষ্যে জানা যায় যে, জেলায় ১ হাজার থেকে ৪ হাজার গ্রাম থাকতো। আর সেখানে ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম নিয়ে ভুক্তি গঠিত হয়। আবার গ্রামের সকল বয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হতো মহাজন।তবে-

       এই সময়ে ব্রাহ্মণ, জৈন, ইসলাম, বৌদ্ধধর্মের মধ্যে বৈরিতা লক্ষ্য করা যায়। আর সেইসাথে লক্ষ্য করা যায়, নানা গুহা মন্দির যা আজও প্রাচীন ইতিহাসে সাক্ষ্য বহন করে। তবে রাষ্ট্রকূট রাজারা কেবল সাম্রাজ্য বিস্তারে মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি।সেই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে তাঁরা উত্তরে মালব থেকে দক্ষিনে তাঞ্জাপুর পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্য গঠন করেন। শুধু তাই নয়, সেই সাম্রাজ্যকে বিশালতাদান করেন এবং শক্তিশালী রাজাদের নিজ পদতলে দমিত রাখার জন্য প্রশাসনকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে গড়ে তোলেন। আর এসবই রাষ্ট্রকূট রাজাদের একাধিক কৃতিত্বকে তুলে ধরে। তাই আমরা বলতে পারি, রাষ্ট্রকূট রাজারা প্রজাহিতৈষীর যে পরিচয় দিয়েছেন তা আজও রাষ্ট্রকূট বংশকে ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল প্রদীপের শিখার ন্যায় দীপ্তমান।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল "SHESHER KOBITA SUNDORBON" YOUTUBE CHANNEL ধন্যবাদ 🙏।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...