Skip to main content

আরবদের সিন্ধু বিজয়ের পটভূমি কি ছিল ব্যাখ্যা করো।

আরবদের সিন্ধ বিজয়ের পটভূমি কি ছিল ব্যাখ্যা করো। (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান,এন ই পি)।


ভূমিকাঃ আমরা জানি হযরত মহম্মদ ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু করেছিলেন সপ্তম শতকের প্রথম দশকে। তবে হযরতের মৃত্যুর পর ইসলামের বাণী বহন করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন খলিফা। ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে খলিফা পদ উমায়েদ বংশের অধীনে চলে আসে। আর এই পর্বে আরবরা ভারতের সিন্ধু দখল করে তাদের শাসন প্রবর্তন করেছিলেন। ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে পারস্য আরব সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। অতঃপর আরবদের দৃষ্টি পড়ে পূর্ব দিকে ভারতভূমির ওপর। আর সেখানে-

           •আরব শাসনের ঐতিহাসিক উপাদান•

আমরা জানি যে,ভারতে আরবদের প্রাথমিক কার্যকলাপ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্যের যথেষ্ট অভাব আছে। আরবি ও ফারসিতে লেখা কিছু গ্রন্থ এ বিষয়ে আলোকপাত করা হলেও সেগুলো যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের দানা আছে। অল-বিরাদুরি নামক একটি গ্রন্থে আরবদের ভারত অভিযানের ধারাবাহিক বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই গ্রন্থটিতে সন তারিখ নিয়ে বিভ্রান্ত দেখা দেয়। তবে আল-তারি ও খুলাসৎ-উৎ-আকবর নামক গ্রন্থ দুটির সাহায্যে অল-বীলাদুরির বিভ্রান্তি কিছুটা নিরসন করা যায়। আসলে সিন্ধুর রাজা চাচ এর নামাঙ্কিত চাচানামা গ্রন্থটি আরবদের সিন্ধু অভিযান সম্পর্কে একটি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ। এখানে ঘটনার ধারাবাহিক ও নির্ভরযোগ্য বিবরণ যথেষ্ট আছে। এছাড়াও পরবর্তীকালে রচিত মীর মহম্মদ মাসুদ এর লেখা তারিখ-এ-সিন্ধ আর আলিশের কানি-র লেখা তুফাতুল কিরাম গ্রন্থ দুটি এ বিষয়ে আলোচনা আছে।

        •আরব ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ•

অতি প্রাচীনকাল থেকে আরবদের সাথে ভারতবর্ষে বেশ বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। শতকে ইসলাম ধর্ম গ্রহনের আগেই সিরাজ হরমুজ প্রভৃতি বন্দর থেকে আগত বণিকরা ভারতের অর্থনৈতিক কারণে স্বাগত ছিল। কিন্তু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরেই আরবদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন ঘটে। তারা নিজেদের দেশে রাজনৈতিক সুস্থিতি ও দৃঢ়তা স্থাপন করতে সক্ষম হল। আর সেইসাথে তাদের মনে নতুন ভূখণ্ড দখল করার ও ইসলামের বাণী প্রচারের উন্মাদনা দেখা দেয়। তবে-

ইতিপূর্বে বাণিজ্যর মাধ্যমে এদেশের ঐশ্বর্য সম্পদের বিষয়ে তারা অবহিত ছিল। এখন শক্তিবলে সেই সম্পদ দখল ও পৌত্তলিকদের ধ্বংসসাধন করে ইসলামের সম্প্রসারণ-এই অর্থনৈতিক ও ধর্মনৈতিক দ্বৈত কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য তারা অস্ত্র হাতে অগ্রসর হয় ভারতের বিরুদ্ধে। আর সেদিন তাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল সিন্ধুদেশ।

                   •প্রাথমিক ব্যর্থতা•

খলিফা ওমরের সময় আরবরা প্রথম ভারতে সামরিক অভিযান প্রেরণ করেছিল। ৬৩৬ সালে প্রেরিত এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল বোম্বের নিকটবর্তী থানা অঞ্চল। কিন্তু এই অভিযান ব্যর্থ হয়। কারণ, সমুদ্রপথে এই অভিযানের বিপদ ছিল খুব বেশি। ওমরের মৃত্যুর পর আব্দুল্লার নেতৃত্বে আরবরা সিস্তান দখল করে মাকরান পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল। কিন্তু জাঠ সম্প্রদায়ের মানুষরা আরবদের প্রবলভাবে বাধা দেয়। আর সেদিন আব্দুল্লা খলিফাকে একটি পত্রে জানান যে, এখানে পানীয় জলের অভাব, ডাকাতরা ভয়ংকর, খাদ্যাভাব, অল্প সংখ্যায় এলে প্রাণ হারাতে হবে, আর বেশি সংখ্যায় এলে উপোসী থাকতে হবে। অতঃপর -

       ৭১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আরবরা ক্রমান্বয়ে ভারতে আক্রমণ চালায়। এইসব অভিযানে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার ভাগই ছিল তাদের বেশি। ইরাকের শাসক আল হজ্জাজ ভীষণ উচ্চাকাঙ্ক্ষী, সিন্ধুর রাজা দাহিরের সঙ্গে তার সামান্য একটি বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তিনি সিন্ধুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান পাঠালেন।কিন্তু এখানেও প্রথম দুটি চেষ্টা ব্যর্থ হল। তখন হজ্জাজ সিন্ধুর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে নিজ জামাতা ইমাদ-উদ্দিন-মহম্মদ বিন-কাশিমকে নেতৃত্ব দিয়ে পাঠালেন।

                  • কাশিমের সাফল্য•

কাশিম ৭১২ খ্রিস্টাব্দের বসন্তকালে দেবলে উপস্থিত হন।সিন্ধুর রাজা দাহির তার অদূরদর্শিতার জন্যই হোক বা আলস্যের কারণেই হোক বা অত্যাচার বাহিনীর ব্যর্থতাতেই হোক তার রাজধানী আলোর বা আরোরে বসে রইলেন। কাশিম খুব সহজেই দেবল দখল করে নিলেন। এরপর মুসলমানরা নির্বিচারে ১৭ বছরের উর্ধ্বে সমস্ত পুরুষদের হত্যা করল এবং শিশু ও নারীদের দাসে পরিণত করলো। আর  লুন্ঠিত সম্পদের এক পঞ্চমাংশ হজ্জাজ মারফত খলিফার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হল। দীর্ঘ ব্যর্থতার পরে আরবরা সিন্বুর বিরুদ্ধে প্রবল সামরিক সাফল্য লাভ করে। তবে এর জন্য আরবদের সামরিক দক্ষতা যতটা দায়ী, তার চেয়ে দাহিরের অপদার্থতা অনেক বেশি দায়ী।


এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল "SHESHER KOBITA SUNDORBON" YOUTUBE CHANNEL ।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...