Skip to main content

চোল রাজাদের সামুদ্রিক কার্যকলাপ আলোচনা করো। •অথবা• রাজরাজ ও প্রথম রাজেন্দ্র চোলের নৌসাম্রাজ্যের বিস্তারের ইতিহাস লেখো।

চোল রাজাদের সামুদ্রিক কার্যকলাপ আলোচনা করো।

•অথবা• 

রাজরাজ ও প্রথম রাজেন্দ্র চোলের নৌসাম্রাজ্যের বিস্তারের ইতিহাস লেখো।

 •অথবা• 

রাজেন্দ্র চোলের সামুদ্রিক কার্যকলাপ আলোচনা করো।

•ভূমিকাঃ আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, 

                চোল বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক প্রথম রাজেন্দ্র চোল। আর তিনি প্রথম রাজরাজের মৃত্যুর পর ১০১৮ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। শাসক হিসেবে তিনি সিংহাসন আরোহন করে চোল শক্তিকে সর্বোচ্চ শিখরে স্থাপন করেন। অতঃপর এই চোল সাম্রাজ্যে বিস্তারে প্রথমে সিংহল জয় করে একটি দ্বীপে পরিণত করেন। তবে বলা যায়, প্রায় পঞ্চাশ বছরের বেশি সময়কাল ধরে শ্রীলংকা চোল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। অতঃপর-

         •শাসক হিসেবে প্রথম রাজেন্দ্র চোল সিংহাসন আহরণ করে দ্বিগবিজয়ে বেরিয়ে পড়েন। তাঁর সুদক্ষ সেনাবাহিনী একের পর এক রাজ্য জয় করেন। আর সেই রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কেরল ও পান্ড্য। এই সকল রাজ্যের জয় করে তিনি পশ্চিমে বিশেষ করে চালুক্যদের সাথে সরাসরি সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। আর এই সংগ্রামে তিনি বেঙ্গি দখল করলেন বটে কিন্তু সমগ্র পশ্চিম চালুক্য আর দখল করা হলো না। অতঃপর তিনি সমগ্র চালুক্য জয় না করে কলিঙ্গের পূর্ব গঙ্গবংশীয় শাসকদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলেন। আর এখানে তিনি কলিঙ্গ অতিক্রম করে বঙ্গদেশ আক্রমণ করেন। আর সেখানে-

         •রাজেন্দ্র চোলের সুদক্ষ সুদক্ষ সৈন্যবাহিনী ১০২২ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে বাংলার পালরাজ মহীপাল, পূর্ব বাংলায় গোবিন্দ্রচন্দ্র এবং দক্ষিণ-পশ্চিমবাংলায় রণসুরকে পরাজিত করেন। বলা যায় সমগ্র গঙ্গার তটভূমি পর্যন্ত তাঁর বিজয় অভিযান চলতে থাকে। আর এই বিজয় অভিযানকে বিশেষভাবে স্মরণীয় করে রাখার জন্য গঙ্গইকোন্ড উপাধি গ্রহণ করেন। শুধুমাত্র এই উপাধি গ্রহণ করে তিনি ক্ষ্যান্ত হলেন না। অতঃপর তিনি ত্রিচিনপল্লীতে গঙ্গইকোন্ড চোলপুরম্ নামে একটি নতুন রাজধানী স্থাপন করলেন। কিন্তু -

          •রাজেন্দ্র চোল ভারত ভূখণ্ডের মধ্যে তাঁর বিপুল ক্ষমতা সীমাবদ্ধ না রেখে এক বিরাট রণতরী নিয়ে মালয় উপদ্বীপে অবস্থিত শৈলেন্দ্র সাম্রাজ্য আক্রমণ করেন। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে, শৈলেন্দ্র বংশের রাজার সাথে কি কারণে রাজেন্দ্র চোলের বিরোধ হয়েছিল তা আজও অজানা। তবে-

          অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে, সমুদ্রপথে ভারতীয় বাণিজ্য সুরক্ষিত করবার জন্যই চোলরাজ শৈলেন্দ্র রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। কিন্তু অধ্যাপিকা রোমিলা থাপার মনে করেন যে-

       "ভারত-রোম বাণিজ্য শৈলেন্দ্রবংশীয় 

         রাজারা হস্তক্ষেপ করতেন বলেই রাজেন্দ্র 

         চোলকে এই অভিযান করতে হয়।"

        আর সেই অভিযানের ফলে রাজেন্দ্র চোলের নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগর সাগর অতিক্রম করে পেগুর রাজধানীর অধিকার করে। অতঃপর পেগুরাজ্য চোল সাম্রাজ্যের অধীনে এসে যায়। আর এখানে দেখা যায় তাঁর নৌবহর বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ অধিকার করে নেয়। এই সময়কালে অর্থাৎ ১০১৪ থেকে ১০৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর শাসনকালেই চোলদের ক্ষমতা উন্নতির চরম শিখরে চলে আসে।আর-

       চোলদের ক্ষমতা উন্নতির চরম শিখরে পৌছালে তারা একের পর এক জাভা, সুমাত্রা এবং মালয় উপদ্বীপ পর্যন্ত তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে থাকে। এছাড়াও দক্ষিণ ভারতে তারা একচ্ছত্র আধিপত্য লাভ করে ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্রাজ্যের বিস্তার করে। আসলে রাজেন্দ্র চোল একজন সুদক্ষ, সুনিপুণ, সুশাসক ছিলেন আর তার ফলে তাঁর আমলে চোল শাসনব্যবস্থা ও চোল সাম্রাজ্য বিস্তার উন্নতির শিখরে অবস্থান করতে সক্ষম হয়।


ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল "SHESHER KOBITA 

                     SUNDORBON" 

                YOUTUBE CHANNEL.

             

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...