Skip to main content

নৈতিক মানদণ্ড রূপে মিলের উপযোগবাদ ব্যাখ্যা ও বিচার করো।

নৈতিক মানদণ্ড রূপে মিলের উপযোগবাদ ব্যাখ্যা ও বিচার করো।


ভূমিকাঃ আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি-যে মতবাদ কর্মের ফলাফলের ভিত্তিতে কর্মের নৈতিক বিচার করে তাকে উপযোগবাদ বলে। আবার একে উদ্দেশ্যমূলক মতবাদও বলা যায়। আসলে উপযোগবাদে কর্মের অভিপ্রায়ের থেকে কর্মের ফলাফলের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।তবে-

      •আত্মসুখবাদীদের মত পরসুখবাদীরাও সুখকেই জীবনের একমাত্র আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আর আমরা পরসুখবাদ বলতে বুঝি সেই মতবাদ- যে মতবাদ সর্বাধিক সংখ্যক লোকের সর্বাধিক পরিমাণ সুখকে নৈতিক মানদণ্ড বা নৈতিক মূল্য নির্ধারণের মাপকাঠি বলে। অনেকে পরসুখবাদকে উপযোগবাদ নামে অভিহিত করেছেন। জে এস মিল সংযত পরসুখবাদের বা উপযোগবাদের অন্যতম প্রচারক ও প্রধান প্রবক্তা।আর তার মতে-

        •সর্বাধিক সংখ্যক লোকের সর্বাধিক পরিমাণ সুখ লাভই হলো যথার্থ নৈতিক আদর্শ। আর যে কাজ সর্বাধিক সংখ্যক লোকের শান্তির উৎপাদন করে সেই কাজ ভালো, আর যে কাজ তা করতে পারেনা তা মন্দ। মানব জীবনের কর্ম লক্ষ্য হলো সুখ লাভ করা এবং দুঃখ পরিহার করা। কিন্তু-

      •মিল শান্তি বলতে দুঃখের অনুপস্থিকে বুঝিয়েছেন। তিনি সুখবাদের সমর্থনে বলেছেন যে, শব্দ আমরা শুনি বলে শব্দ গ্রহণযোগ্য। তেমনি সুখ আমরা কামনা করি বলে সুখ কামনার যোগ্য। তবে তার মতে আত্মশক্তি করুক মহৎ নৈতিক আদর্শের সন্ধান দিতে পারে না বেশি সংখ্যক লোকের বেশি পরিমাণ খুব কামনা করাই নৈতিক আদর্শ। অন্যের জন্য আত্মত্যাগই হলো মিলের উপযোগবাদের মর্মবাণী। আসলে মিলের মতে-

         •বিভিন্ন সুখের মধ্যে যেমন পরিমাণগত পার্থক্য আছে তেমনি গুণগত পার্থক্যও আছে। মিল সুখের গুণগত পার্থক্যের উপর বেশি জোর দিয়ে বলেন যে, দৈহিক সুখ যদিও তীব্র কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী ও নিম্ন প্রকৃতির। কিন্তু মানসিক সুখ দীর্ঘস্থায়ী ও উন্নত স্তরের। মানুষ বিচারবুদ্ধির জীব হয়ে পশুদের মতো ইন্দ্রিয় সুখভোগে লিপ্ত থাকতে পারে না। মানসিক সুখী মানুষের কামনা করা উচিত তাই মিল বলেন-

       "একটি সুখী শূকর হওয়ার চেয়ে অসুখী 

        সক্রেটিস হওয়া অনেক ভালো।"

      এখানে সুখের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মিল বিভিন্ন নৈতিক নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। নৈতিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যক্তি তার নিজস্ব সুখের পরিবর্তে অন্যের সুখ কামনা করে থাকে। এই নিয়ন্ত্রণ দুই ধরনের-

        ক) বাইরের নিয়ন্ত্রণ এবং 

        খ) অন্তরের নিয়ন্ত্রণ।

বাইরের নিয়ন্ত্রণগুলোর চাপে কিংবা শাসনের ভয়ে ব্যক্তি অন্যের সুখ কামনা করতে বাধ্য হয়। তবে এই নিয়ন্ত্রণগুলোর ফলে আমরা যে আচরণ করতে বাধ্য হই তার নৈতিক মূল্য নেই বললেই চলে। আর সেই কারণে মিল বলেন-

              •অন্তরের নিয়ন্ত্রণের কথা সামনে আনেন। আর এই অন্তরের নিয়ন্ত্রণ হলো বিবেকের শাসন। এই শাসন আসে মানুষের ভেতর থেকে। প্রত্যেক ব্যক্তির অন্তরে রয়েছে অন্যের প্রতি সহানুভূতি অথবা সমবেদনাবোধ। তাই মানুষ নিজের স্বার্থের কথা ভুলে অন্যের সুখ দুঃখের চিন্তায় মগ্ন হয়। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকেরই অন্যের সুখ কামনা করা উচিত। কারণ চিন্তাশীল প্রাণী হিসেবে মানুষ গুণগতভাবে উৎকৃষ্ট বা উচ্চস্তরের সুখই প্রার্থনা করে।

   •মিলের উপযোগবাদের সমালোচনা বা বিচার।•

১) মানুষের সুখ হলো একটি পরিবর্তনশীল অনুভূতি। এই পরিবর্তনশীল অনুভূতি কখনই নৈতিক বিচারের আদর্শ হতে পারেনা।

২) মিল বলেন যে, মানুষ বাইরের ও অন্তরের নিয়ন্ত্রণের চাপে অন্যের সুখ কামনা করতে বাধ্য হয়। কিন্তু একথা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। তাছাড়া মানুষ বাধ্য হয়ে যে কাজ করে  তার কোন নৈতিক মূল্য থাকে না।

৩) সবচেয়ে বড় কথা হল, কেবলমাত্র সুখভোগের মধ্যেই জীবনের পরম কল্যাণের আদর্শকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই উপযোগবাদকে শ্রেষ্ঠ নৈতিক আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।

               •পরিশেষে বলা যায় যে, যে কর্মের ফল মানুষকে সুখ দেয় সেই কর্মই ভালো। তাহলে একটি কর্ম যথোচিত কিনা তা দেখার জন্য কর্মের পরিনাম আগে দেখতে হবে। কিন্তু একটি কর্ম যথাচিত কিনা তা দেখার জন্য সব সময় উপযোগের দিকে দৃষ্টি দিলে চলবে না। কারণ আমরা জানি সত্য কথা সর্বত্র সব লোকের বললাম সাধন করে। কিন্তু -

        সত্য ভাষণের থেকে মিথ্যা ভাষণই সর্বাধিক লোকের সর্বাধিক কল্যাণ করে। আর এক্ষেত্রে পরিস্থিতির বিচারে মিথ্যা বলাকেই যথোচিত কাজ বলতে হবে। তবে কর্মনীতিকে উপেক্ষা করে মিথ্যাকে উচিত কাজ বললে অনেক অনুচিত কাজকে বিশেষ পরিস্থিতিতে যথোচিত বলতে হবে। তাই এরকম উপযোগবাদ গ্রহণীয় হতে পারে না।

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প