কান্টের নৈতিক মতবাদ ব্যাখ্যা করো।
ভূমিকাঃ আমরা জানি কান্টের নৈতিক মতবাদ
কৃচ্ছতাবাদ নামে পরিচিত। আর সেই মতবাদে তিনি মানুষের দুই প্রকার বৃত্তির কথা বলেছেন। এই বৃত্তি গুলি হল-
ক) বুদ্ধিবৃত্তি। এটি মানুষের নিম্নবৃত্তি বলা হয়।
খ) জীববৃত্তি। এটি মানুষের উচ্চবৃত্তি বলা হয়।
আসলে মানুষ ইন্দ্রিয়পরায়ণ জীব হিসেবে সুখের অনুসন্ধান করে। আর বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব হিসেবে মানুষ আবেগ, অনুভুতি, ভোগবিলাস প্রভৃতিকে অবদমন করে বিশুদ্ধ চিন্তার দ্বারা জীবন যাপন করতে চায়। তবে কান্ট মানুষের দুই ধরনের বুদ্ধির কথা বলেছেন। আর সেই বুদ্ধিগুলো হলো- তাত্ত্বিক বুদ্ধি ও ব্যবহারিক বুদ্ধি। আর এখানে-
মানুষ তাত্ত্বিক বুদ্ধির সাহায্যে জ্ঞানবিদ্যা ও অধিবিদ্যা সংক্রান্ত জ্ঞান লাভ করে। অতঃপর ব্যবহারিক বুদ্ধির দ্বারা মানুষ নৈতিক নিয়ম জানতে পারে। নিয়ম অভিজ্ঞতার সাহায্যে পাওয়া যায় না। এটি পূর্বতঃসিদ্ধ ও স্বতঃসিদ্ধ। আর এখানে যে কাজ এই নিয়মের সাথে সঙ্গতি রেখে চলে সে কাজ ভালো এবং যে কাজ নিয়মের সাথে সঙ্গতি রেখে চলে না সেটি অবশ্যই মন্দ হয়। এই ভালো মন্দ বিষয়ের উপরে ভিত্তি করে কান্ট তার নৈতিক মতবাদকে তিনটি আদর্শের উপর স্থাপন করেছেন। আর সেই তিনটি আদর্শ হলো-
১) সদিচ্ছাই একমাত্র স্বতঃমঙ্গল।
২) কর্তব্যই কর্তব্য সাধনের লক্ষ্য।
৩) নৈতিক নিয়ম এক নিঃশর্ত আদেশ।
•১) সদিচ্ছাই একমাত্র স্বতঃমঙ্গলঃ দার্শনিক কান্ট মনে
করেন- আমাদের এই জগতে বা তার বাইরে এমন কিছু নেই যাকে নিঃস্বার্থ ভাবে শুভ বলা যায়, কেবলমাত্র সদিচ্ছা ছাড়া। এখানে তিনি আরো বলেন যে, সদিচ্ছা নিঃশর্তভাবে সৎ, এই ইচ্ছাই একমাত্র কল্যাণকর। যেকোন পরিবেশে যেকোন পরিস্থিতিতেই সদিচ্ছা মঙ্গল। তবে পরিবেশ পরিবর্তিত হলেও সদিচ্ছার পরিবর্তন হয় না। তাই কান্ট সদিচ্ছাকে স্বতঃমঙ্গল বলেছেন।তবে-
কান্ট আরোও বলেন -সদিচ্ছা ছাড়া আরো যেসব বিষয় আছে সেগুলি তখনই ভালো হবে যখন সেগুলির সাথে সদিচ্ছা যুক্ত থাকে। কিন্তু কান্ট কোনমতেই ধর্ম কি নৈতিকতাকে গ্রহণ করতে পারেনি তাই তিনি কর্তব্যমুখী নৈতিকতাকে গ্রহণ করেছেন। আর সেই দিক থেকে আমাদের কাজের ভালোত্ব মন্দত্ব নির্ভর করে কর্মকর্তার সদিচ্ছার ওপর।তাই মানুষের কর্ম যখন বিবেক-বুদ্ধির উপর নির্ভর করে তখন সেই কর্ম হয় স্বাধীন বা ঐচ্ছিক কর্ম। আবার যখন কোন কর্ম মানুষের শুভ বুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত না হয়ে অন্ধ কামনার দ্বারা পরিচালিত হয় তখন সেই কর্ম পরাধীন বা অনৈচ্ছিক কর্ম।
•২) কর্তব্যই কর্তব্য সাধনের লক্ষ্যঃ সদিচ্ছা নিজ মূল্যেই
মূল্যবান। কারণ ইচ্ছা তখনই সৎ হয় যখন তা বিচারবুদ্ধি প্রসূত হয়। আসলে বিচার বুদ্ধির নিয়মই হলো কর্তব্যের নিয়ম। তাই কান্টের নিচু তত্ত্বের মর্মকথা হলো-
"কর্তব্যের জন্য কর্তব্য করতে হয়।"
আর এক্ষেত্রে মানুষ যখন কামনা, বাসনার বশীভূত হয়ে কাজ করি তখন তার কাজের সঙ্গে পশুর কাজের কোন তফাৎ থাকে না। তবে মানুষ ফলাফলের কথা চিন্তা না করে কেবলমাত্র নৈতিক কর্তব্য পালনের উদ্দেশ্যে যখন কাজ করে তখন সেই কাজ হবে প্রকৃত কাজ। আর সেই কাজের মধ্যে দয়া,মায়া, স্নেহ,মমতা কোন কিছুরই স্থান নেই। তবে-
•তবে মানুষ দয়া,মায়া, স্নেহ, মমতা দ্বারা পরিচালিত হয়ে যখন কোন কাজ করে তখন সেই কাজ হবে বিকারগ্রস্ত বা অস্বাভাবিক কাজ। আর সেই কাজের মধ্যে কোন নৈতিকতাবোধ থাকে না।
•৩) নৈতিক নিয়ম শর্তহীন বা নিঃশর্ত আদেশঃ কান্টের
মতে নৈতিক নিয়ম হলো বিশুদ্ধ ব্যবহারিক বুদ্ধির শর্তহীন আদেশ, যা অনিবার্য ও সার্বিক। তাঁর মতে যেকোনো নিয়মের দুটি দিক থাকে, যথা আকার ও উপাদান। আকারগতভাবে সকল নিয়ম সার্বিক। এই আকারের উৎস হলো বিশুদ্ধ বুদ্ধি। আর আর নিমের উপাদান ইন্দ্রিয়জাত। ফলে পরিবর্তনশীল উপাদানের জন্য বিভিন্ন নিয়মের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে প্রকৃত অর্থে তা সার্বিক হয় না। আসলে-
•কান্টের মতে নৈতিক নিয়ম সম্পূর্ণরূপে আকারগত, উপাদান শূন্য। ফলে নৈতিক নিয়ম প্রকৃত অর্থে সার্বিক। তাই নৈতিক নিয়ম দেশ, কাল, সমাজ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমহীন ভাবে সমান ভাবে প্রযোজ্য ও কার্যকর। তাই নৈতিক নিয়ম এই জন্যই আবশ্যিক যে, এই নিয়মকে কোনমতেই অস্বীকার করা অসম্ভব। আর অস্বীকার করলে যৌক্তিক স্ববিরোধ হবে।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।
Comments
Post a Comment