১) চার্বাক দর্শনকে কেন জড়বাদী দর্শন বলা হয়?
উত্তরঃ চার্বাক দার্শনিকগণ ক্ষিতি,অপ, তেজ ও মরুৎ এই চার প্রকার সূক্ষ্ম প্রত্যক্ষযোগ থেকে জগতের যাবতীয় বস্তু এমনকি প্রাণ চৈতন্যের উৎপত্তিকেও ব্যাখ্যা করে বলে তাদের জড়বাদী দার্শনিক বলা হয় ।
২) চার্বাক জড়বাদের মূল বক্তব্য লেখো।
উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের মূল বক্তব্য হলো-ক্ষিতি,অপ,তেজ ও মরুৎ এই চারটি স্থুল জড়ভূতই জগৎ ও জীবনের মূলতত্ত্ব এবং আত্মা ইত্যাদি অতীন্দ্রিয় জগতের অস্তিত্ব নেই।
৩) চার্বাকরা কেন একমাত্র প্রত্যক্ষকে প্রমান বলেন?
উত্তরঃ চার্বাকরা বলেন, প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। কারণ, বিভিন্ন প্রমাণের মধ্যে প্রত্যক্ষ হলো মূল প্রমাণ এবং সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী প্রমাণ যা সংশয় ও বিপর্যয় শূন্য।
৪) অনুমান প্রমাণ সম্পর্কে চার্বাকদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে যুক্তি কী?
উত্তরঃ অনুমান প্রমাণ সম্পর্কে চার্বাকদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রধান যুক্তি হল- অনুমান যেমন প্রত্যক্ষনির্ভর, প্রত্যক্ষও তেমনি ইন্দ্রিয়নির্ভর-স্বনির্ভরতা প্রমাণের লক্ষণ হলে প্রত্যক্ষ ও অনুমান উভয়কে বর্জন করতে হয় এবং লৌকিক জীবনে অনুমান অপরিহার্য।
৫) চার্বাক মতে শব্দ প্রমাণ নয় কেন?
উত্তরঃ চার্বাক দার্শনিকগণ শব্দ বা আপ্তবাক্য অর্থাৎ বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির রচনা বা বাক্যকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেননি। কারণ ব্যক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা অনুমান নির্ভর।
৬) ভূতচৈতন্যবাদ কী?
উত্তরঃ চার্বাকরা মনে করেন, ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ যদিও চৈতন্য ধর্মবিশিষ্ট নয়, তবুও নির্দিষ্ট পরিমাণে এদের সংমিশ্রণে যে জীবদেহ গঠিত হয়, তাতে চৈতন্যরূপ গুণের আবির্ভাব ঘটে।একেই ভূতচৈতন্যবাদ বলা হয়।
৭) চার্বাক মতে আত্মা কি?
উত্তরঃ চার্বাকদের মতে- 'চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই আত্মা'।
৮) চার্বাক মতে ভূতচতুষ্টয়বাদ বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ জগৎ সৃষ্টির ব্যাপারে চার্বাকেরা মনে করেন- ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এই চারটি মহাভূত নিজেদের স্বাভাবিক ধর্ম ও ক্রিয়া অনুসারে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে জগতকে সৃষ্টি করেছে। চার্বাদের এই মতবাদই ভূতচতুষ্টয়বাদ নামে খ্যাত।
৯) চার্বাক মতে দেহাত্মাবাদের পক্ষে যুক্তি কী?
উত্তরঃ দেহাত্মবাদের পক্ষে চার্বাকদের যুক্তি হলো- চৈতন্যের আধাররূপে দেহাতিরিক্ত আত্মার প্রত্যক্ষ হয় না, সুতরাং চৈতন্যবিশিষ্ট দেহই আত্মা।
১০) স্বভাববাদ কাকে বলে?
উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতানুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সংযোগ বা সৃষ্টি। আবার স্বভাব থেকেই ভূত বিচ্ছেদ বা লয়।তার জন্য ঈশ্বর বা অদৃষ্টকে স্বীকার করার কোন প্রয়োজন নেই।
১১) 'যদৃচ্ছাবাদ' কাকে বলে?
উত্তরঃ যদৃচ্ছাবাদ অনুসারে জড়চতুর্ভূত অর্থাৎ ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ নিজেদের খেয়ালখুশি মতো মিলেমিশে এই জগৎ গঠিত হয়েছে এবং জগতের যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি হয়েছে।
১২) চার্বাক জ্ঞানতত্ত্বের মূল কথা কী?
উত্তরঃ চার্বাক জ্ঞানতত্ত্বের মূল কথা হলো- 'প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ'। অনুমান, শব্দ এমনকি শ্রুতিবাক্যও নির্ভরযোগ্য নয়।
১৩) চার্বাকরা কেন ব্যোম এর অস্তিত্ব স্বীকার করেন না?
উত্তরঃ চার্বাকগণ প্রত্যক্ষ প্রমাণবাদী দার্শনিক। আর তাঁদের মতে-ব্যোম এর অস্তিত্ব নেই। কারণ একে প্রত্যক্ষ করা যায় না।
১৪) "প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ"- এই মতবাদের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলি কী কী?
উত্তরঃ চার্বাকদের প্রত্যক্ষ প্রমাণবাদের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলি হল- প্রত্যক্ষ জ্ঞানও স্বনির্ভর নয়। তাই ইন্দ্রিয় নির্ভর এবং প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রেও ভ্রম হয়। অতীত ও ভবিষ্যতের জ্ঞান প্রত্যক্ষের দ্বারা পাওয়া যায় না।
১৫) চার্বাক স্বীকৃত চারটি মহাভূত কী কী?
উত্তরঃ চার্বাক স্বীকৃত চারটি মহাভূত হল- ক্ষিতি, অপ তেজ ও মরুৎ।এই চারটি মহাভূত দ্বারা জগৎ এবং জগতের সব বস্তু সৃষ্টি হয়েছে।
১৬) চার্বাকরা কেন মোক্ষকে পরম পুরুষার্থ বলে স্বীকার করেন না?
উত্তরঃ চার্বাক মতে চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই আত্মা। চতুর্ভুতের বিচ্ছেদে এই আত্মার বিনাশ হয়। কাজেই সেই আত্মার বন্ধন সম্ভব নয় বলে মুক্তিও সম্ভব নয়।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL । ধন্যবাদ 🙏
Comments
Post a Comment