Skip to main content

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা করো।

 ••শিক্ষা বলতে কি বোঝায়?

শিক্ষা হলো একটি সারা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া, যার মধ্যে দিয়ে শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন সম্ভবপর হয়ে থাকে। তাই শিক্ষার মাধ্যমে শারীরিক, আধ্যাত্মিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, চারিত্রিক প্রভৃতি দিকের বিকাশ সাধন সম্ভবপর হয়। আসলে শিক্ষা হলো জ্ঞানের সংগ্রহ- 

   "Education is the acquisition of knowledge."


••সমাজতত্ত্ব বা সমাজবিজ্ঞান বলতে কী বোঝো? 


সমাজবিজ্ঞান মানব সমাজের বৈজ্ঞানিক ও পদ্ধতিগত অধ্যায়ন। এখানে সমাজবদ্ধ মানুষের সামাজিক আচরণ, সামাজিক সম্পর্কের ধরন, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পর্কিত সাংস্কৃতিক দিকের প্রতি মনোনিবেশ করা হয়। আসলে-

     শিক্ষার সংজ্ঞা কিংবা উপাদানই হলো সমাজের উপাদান। আবার এই সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক সাধারণ চর্চা হলো সমাজতত্ত্ব। যে সমাজতত্ত্বের জনক August Comte বলেন -

    "Sociology is the scientific study of social phenomenon" ( সমাজতত্ত্ব হল সমাজের ঘটনাবলীর বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা)।


••শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের প্রকৃতি আলোচনা করো।


 ভূমিকাঃ শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতন্ত্রের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের ধারণা থাকাটা আমাদের খুব দরকার। সেই হিসেবে বলা হয়- যে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রক্রিয়ার সামাজিক মূল্যবোধ এর ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে তাকে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব বলে।সমাজতাত্ত্বিক Payne  এর মতে-

          শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান বলতে বোঝায় যখন ব্যক্তি বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী, প্রক্রিয়া ও সম্পর্কের বিশ্লেষণ দ্বারা অভিজ্ঞতা লাভ করে।আর এই দৃষ্টিতে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের প্রকৃতি হল-


•১) শিক্ষাবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের মিলিত রূপঃ সমাজতত্ত্বের এই শাখাটি গঠিত হয়েছে প্রথমত সমাজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। একইভাবে বলা হয় যে, শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যা হলো- শিক্ষাবিজ্ঞানের সেই শাখা, যা সমাজের কার্যপ্রক্রিয়ার ওপর অধিক মাত্রায় বিচার-বিশ্লেষণ করে। 


•২) সমাজের নৈতিক উন্নয়নের বিষয়ঃ 

বিখ্যাত ফরাসি সমাজতাত্ত্বিক এমিল দুর্খেইম তাঁর গ্রন্থে বলেছেন- শিক্ষার সমাজতত্ত্ব সমাজের নৈতিক শিক্ষার দ্বারা জৈবিক সংহতি বা একতা বৃদ্ধির সাথে সাথে নৈতিক দৃঢ়তা গড়ে তোলে। এই নৈতিক দৃঢ়তাই  সমাজ সম্পর্কে প্রধান ভিত্তি প্রস্তর।


•৩) শিক্ষার সমাজতত্ত্ব একটি বিশ্বজনের বিষয়ঃ

 আধুনিক ও উত্তর আধুনিক সমাজব্যবস্থায় শিল্পায়ন ও নগরায়নের মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি সমাজ ব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যান্ত্রিকতা ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। এক কথায় সংযুক্তির বস্তুগত উপাদানের উন্নয়নের সাথে সাথে অবস্তুগত উপাদান যথা-নৈতিকতা ও ভাবাদর্শের উন্নয়ন সাধিত করে এবং সকল সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষা সমাজতত্ত্বের অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। 


•৪) শিক্ষার সমাজতত্ত্ব একটি বিমুর্ত বিষয়ঃ 

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের অন্যতম বিষয় হলো- সামাজিক মিথস্ক্রিয়া,ব্যাক্তি ও সমাজ জীবন বিভিন্ন সম্পর্কের নীতি ও কৌশল এবং সামাজিকীকরণের উপায়। এছাড়া সমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ন্যায় বোধ, রীতিনীতি, অধিকার এবং পারস্পরিক সম্পর্কের নৈতিক দৃঢ়তার আলোচনা বিশেষ। সেই কারণে শিক্ষার সমাজতত্ত্ব একটি বিমূর্ত ধারণা। 


•৫) শিক্ষার সমাজতত্ত্বের আলোচনা ক্ষেত্র ব্যাপকঃ শিক্ষার সমাজতত্ত্বের আলোচনা ক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে ব্যাপক। নিউম্যান বলেছেন-'শিক্ষার সমাজতত্ত্বের অন্যতম ভূমিকা হল, সমাজে দায়িত্বশীল ব্যক্তি গড়ে তোলা। এক কথায় বলা যায় যে, সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সর্বাগ্ৰে প্রয়োজন ব্যক্তির উন্নয়ন, ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ প্রভৃতি বিষয়গুলি যা শিক্ষা সমাজতত্ত্বের আলোচনা ক্ষেত্রের  অন্তর্ভুক্ত। 


•৬)শিক্ষার সমস্ত সমাজ গঠনের সহায়কঃ

 জর্জ পেইন এর মতে- শিক্ষার সমাজতত্ত্ব কেবল শিক্ষার্থীর শিক্ষার উন্নয়ন করে তা নয়, শিক্ষার্থীর সমগ্র জীবনব্যাপী সমাজজীবনে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে সাথে শিক্ষার সমাজতত্ত্বে সমাজের যে সামাজিক প্রক্রিয়াগুলি রয়েছে, সেগুলি উন্নত মানের বা মূল্যবোধের প্রয়োগ।


      •পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যার প্রকৃতিগত দিক মূলত ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সমাজে মিথস্ক্রিয়ার ধরন ও কাজ নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে উন্নয়নমূলক আলোচনা করে। সমাজতাত্ত্বিক Young বলেন-" শিক্ষার সমাজতত্ত্ব মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে চর্চা করে।"

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...