Skip to main content

কবি বিদ্যাপতির ভাবসম্মিলন কবিতার মধ্যে রাধা মনের যে আনন্দোল্লাস প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।

কবি বিদ্যাপতির ভাবসম্মিলন কবিতার মধ্যে রাধা মনের যে আনন্দোল্লাস প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো। (পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, একাদশ শ্রেণি, দ্বিতীয় সেমিস্টার)।


                আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, কবি বিদ্যাপতি চৈতন্য পূর্ব যুগের একজন অন্যতম বৈষ্ণব কবি। যিনি মৈথিলী এবং সংস্কৃত ভাষায় বেশ কিছু গ্রন্থ ও গীতিকবিতা লিখেছেন। তবে তাঁর অধিকাংশ বৈষ্ণব পদগুলি ব্রজবুলি ভাষায় রচিত। ঠিক তেমনি আলোচ্য ভাব সম্মিলন কবিতাটি ব্রজবুলি ভাষায় রচিত একটি পদ। আর সেই কবিতায় রাধা বিরহের সাথে কৃষ্ণের সঙ্গলাভ করেছেন। যেখানে রাধিকাকে প্রথমেই বলতে শুনি--

             "কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।                     

               চিরদিন মাধব মন্দিরে মোর।।"

• শ্রীমতি রাধিকা আজ সীমাহীন আনন্দে আত্মহারা হয়ে সখিকে বলেন, আর কোনদিনই তার প্রাণের প্রিয় মানুষটিকে হারাবেন না বা হারাতে দেবেন না। কারণ আজ থেকে তাঁর প্রাণের প্রিয় মানুষটি চিরদিনের জন্য তাঁর কাছে বন্দী হয়ে থাকবে। শুধু তাই নয়, চাঁদের উজ্জ্বল কিরণ,হাসি রাধিকাকে যতটা দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা দিয়েছে- আজ কৃষ্ণের সুমিষ্ট মুখ দর্শনে তাঁর সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত হয়েছে। আর সে কারণ তিনি কখনোই কৃষ্ণকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান না, নিজের মনের মন্দিরে নিজের মতো করে রাখতে চান। আসলে -

            •শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় কংসকে বধ করার জন্য রাধিকাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় রাধা মনের বিরহ। আর এই বিরহ রাধার সমস্ত শরীর অবশ করে দিয়েছে। তবুও এরূপ অবস্থার মধ্যেই শ্রীমতি রাধিকা এক অলীক কল্পনার মাধ্যমে কৃষ্ণের সঙ্গলাভ করে পরম সুখ উপলব্ধি করেছেন। আর সেই উপলব্ধি আলোচ্য কবিতায় ভাব সম্মিলনে পরিণত হয়েছে। যেখানে -

        •শ্রীমতি রাধিকা আজ কৃষ্ণ বিরহে নিজেকে কোনো মতেই ধরে রাখতে পারছেন না, তাই তার মন চলে গেছে প্রাণের প্রিয় মানুষটির সঙ্গলাভে। প্রিয়তম আজ কাছে না থাকলে স্বপ্নে, কল্পনায় তিনি কৃষ্ণের সাক্ষাৎ পেয়েছেন।আর সাক্ষাৎ পেয়েই তিনি তার সাথে মিলনে পরম সুখলাভ করতে চান। আসলে এই কবিতাটি বিদ্যাপতির বিরহ পর্যায়ের কবিতা।আর সেখানে-

      •কবি বিদ্যাপতি বৈষ্ণব পদসাহিত্যে এক অন্যতম পদকর্তা। বলা যায় বাংলা সাহিত্যে তিনি এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কসম। আর সেই জ্যোতিষ্ককের আমৃতসুধা চৈতন্যদেব থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ সকলেই তাকে আত্মার পরম আত্মীয় রূপে নিজে মনে গ্রহণ করেছেন। শুধু তাই নয়, স্বয়ং চৈতন্যদেব বিদ্যাপতির পদগুলি পরম শ্রদ্ধাবসত আস্বাদন করতেন। আর বিদ্যাপতি সেই রাধাকে তার রচনায় যৌবনবতী করে তুলেছেন। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন-

    "বিদ্যাপতির রাধা অল্পে অল্পে মুকলিত বিকশিত 

     হইয়া উঠিতেছে। সৌন্দর্য ঢল ঢল করিতেছে। 

     শ্যামের সহিত দেখা হয় এবং চারিদিকে যৌবনের 

     কম্পন হিল্লোলিত হইয়া ওঠে।"

       •আসলে বিদ্যাপতি সম্ভোগ রসের কবি। তাই তাঁর কাব্যে প্রেম অতি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। আর সেখানে বিদ্যাপতির রাধা বিচিত্র অনুভূতির কথা প্রকাশ করলেও বিরহ বেদনার মধ্যেও মিলনোল্লাসে মেতে উঠেছিলেন। এ রাধিকার কাছে এক অনন্ত পরম মিলনের সুখ। আর সেই সুখের মধ্যে রাধিকা কল্পনা করলেন তার মাধব আবার তার কাছে ফিরে এসেছেন এবং তাদের উভয়ের এক পরম মিলন সম্পন্ন হয়েছে।তবে-

          •আজ রাধিকার আনন্দের কোন সীমা নেই। কারণ আরধ্য দেবতাকে তিনি কাছে পেয়ে গেছেন। তার সমস্ত বিরহ, দুঃখ ,যন্ত্রণা লাঘব রয়েছে। এরূপ অবস্থায় রাধিকা প্রিয়মুখ দর্শনে সবকিছু ভুলে কেবলমাত্র কৃষ্ণের সঙ্গলাভে সুখ অনুভব করলেন। তিনি সংকল্প করলেন যে, প্রিয়কে তিনি আর দূর দেশে পাঠাবেন না। আঁচলভরে তাকে মনের মন্দিরে রেখে দেবেন। তাই কৃষ্ণ আজ রাধিকার কাছে শীতের আচ্ছাদন, গ্ৰীষ্মের সুমিষ্ট শীতল বাতাস, বর্ষাকালের ছাতা আর উত্তাল সমুদ্রের দিকদর্শী নৌকা।আসলে কবি বিদ্যাপতি-

           •রাধার বিরহ মনের ভাব তন্ময়তা-ভাব সম্মিলনের পদে সৌন্দর্যময় করে তুলেছেন। যেখানে একাধিক উপমার বরমাল্য ব্যবহার করে রাধার প্রেমকে বাস্তবিক প্রেমে পরিণত করলেন। যে প্রেমের মধ্যে রাধা সবকিছু ভুলে প্রিয়তমকে কাছে পাওয়ার আনন্দে মেতে উঠেছেন। এ রাধিকার এক অকল্পনীয় কল্পনা।যে কল্পনার মধ্যে কোন বিচ্ছেদের ভাবনা নেই, নেই কোন বিরহ চেতনা,আছে এক অনাবিল সুখ শান্তি।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...