Skip to main content

বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের শিক্ষক রামরাম বসুর অবদান লেখো।

বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের শিক্ষক রামরাম বসুর অবদান লেখো।

• রামরাম বসুঃ 

         রামরাম বসু ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অন্যতম পন্ডিত, যিনি বাংলা গদ্যের উদ্ভবপর্বের বিশিষ্ট রচয়িতা হিসেবে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন। আসলে তিনি উইলিয়াম কেরির অন্তরঙ্গ সহচর ছিলেন। আর এই অন্তরঙ্গতার কারণে তিনি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে শ্রীরামপুর মিশনে যোগদান করেন। অবশেষে ১৮০১ সালে তিনি মাত্র ৪০ টাকার বেতনে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হন। বলা যায়, তিনি আমৃত্যু অর্থাৎ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর অন্যতম গ্রন্থগুলি হলো-হরকরা, জ্ঞানোদয়, রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র, লিপিমালা প্রভৃতি।

                  •রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র•

        রাজা প্রতাপাদিত চরিত্র (১৮০১) রামরাম বসুর প্রথম মুদ্রিত গদ্যগ্রন্থ। আর এই গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম মৌলিক গ্রন্থ এবং মৌলিক রচনা ও ঐতিহাসিক জীবনীর নিদর্শন। তাই এর মূল কাহিনী ইতিহাস আশ্রিত।অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে-

         "বাঙালির লেখা ইতিহাস সংক্রান্ত প্রথম 

         গদ্যকাহিনী 'রাজাপ্রতাপাদিত্য চরিত্র"।

গ্রন্থখানি ইতিহাস আশ্রিত হওয়ার কারণে বাংলা গদ্য ও ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে বিশেষ গুরুত্বসহ আজও আলোচনার যোগ্য।তবে রামরামের উদ্দেশ্য ছিল প্রতাপাদিত্যের চরিত্র বর্ণনা। আর এই উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি তিনভাবে কাহিনীর উপাদান সংগ্রহ করেন। তবে গ্রন্থটিতে সর্বত্রই তিনি ইতিহাসের উপাদান ও ঘটনা অনুসরণ করেনি। বিশেষ করে শেষের দিকে তিনি মোটেই ইতিহাসকে অনুসরণ করেন নি।


                     •ভাষা ও তাৎপর্য•

           •রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র নামক গ্রন্থটি প্রথম বর্ণনামূলক গদ্য রচনা। আর এই গ্রন্থটিতে আরবি ফারসি শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার দেখা যায়। তবে বিদেশি ভাষার পাশাপাশি তৎসম শব্দ প্রধান সাধু বাংলা গদ্যের রীতি বেশ প্রশংসনীয়। এই গ্রন্থের ভাষার ঠাট পুরোপুরি সাধুভাষা, চলিত ও সাধুর ভাষার মিশ্রণ নেই বললেই চলে। পাশাপাশি-

            গ্রন্থটি দীর্ঘদিন ধরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে পঠিত হয়। আর সে কারণে ঐতিহাসিক তথ্যের দিক থেকেই এই গ্রন্থের তাৎপর্য অনেক বেশি। কারণ এটি বাঙালি রচিত প্রথম মুদ্রিত গদ্য গ্রন্থ।

                          •লিপিমালা•

     রামরাম বসুর দ্বিতীয় প্রকাশিত গ্রন্থটি হল লিপিমালা (১৮০২)। তবে এই গ্রন্থটি পত্র রচনার ঢঙে রচিত হয়েছে। আসলে গ্রন্থটিতে চিঠির আদলে রাজা পরীক্ষিতের কথা, দক্ষযজ্ঞের কথা, চৈতন্যের কথা প্রভৃতি কাহিনী বিবৃত করা হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি পত্র লিখনের রীতি এখানে অনুসৃত হয়নি। সরল বাংলায় সাহেবদের ভাষা শেখাবার জন্য পত্রের আকারে নানা কাল্পনিক ব্যাপার, গালগল্প, পুরাণ এমন চল্লিশটি পত্র এখানে সন্নিবেশিত হয়েছে। যেখানে -

                     •ভাষা ও তাৎপর্য•    

           'লিপিমালা' গ্রন্থের ভাষারীতি রাজা 'প্রতাপাদিত্য চরিত্র'র থেকে অনেক সংযত। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এর ভাষা গুরুগম্ভীর ও কেতাবি ধরণের। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের উপযোগী হালকা ও স্বাভাবিক গদ্য রচনার নিদর্শনও এখানে লক্ষণীয়। তাই সামগ্রিকভাবে সুকুমার সেন বলেন -

      "লিপিমালার গদ্যরীতি আরো সহজ ও 

        মুখের ভাষার বেশ কাছাকাছি।"

         •  'লিপিমালা' র সঙ্গে সঙ্গেই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের রামরাম বসুর গদ্য রচনা পর্ব শেষ হয়। তবে তাঁর গদ্য সৃষ্টির প্রচেষ্টার তাৎপর্য আজও স্মরণীয়। এই গ্রন্থে আরবি-ফার্সির শব্দের বাহুল্য কম, তবে সংস্কৃত শব্দের প্রভাব অনেক বেশি।

               • পরিশেষে বলা যায় যে, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা গদ্য রচনার প্রয়াস যাঁদের দ্বারা পুষ্টিলাভ করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হলেন রামরাম বসু। বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং প্রথম বাঙালির মুদ্রিত গ্রন্থ রচনায় তাঁর কৃতিত্ব বাংলা সাহিত্যে আজও মুদ্রিত হয়ে আছে।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...