তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে কিভাবে তেলেনাপোতা আবিষ্কার হলো- তা আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, একাদশ শ্রেণী, দ্বিতীয় সেমিস্টার, বাংলা)।
√আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, তেলেনাপোতা গল্পটি বিখ্যাত ছোট গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটি অন্যতম ভিন্নধর্মী ছোটগল্প। আর এই ছোটগল্পটির পটভূমি শহর থেকে ত্রিশ মাইল দূরের একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে । আর সেখানে আমরা দেখতে পাই, গল্পের মূল কথক এবং তার দুই বন্ধু ভিড় ঠাসা বাসে তাদের মনের কথা মন খুলে আলোচনা করতে আলোচনা করতে থাকে।সেখানে-
•গল্পের শুরুতেই আমরা তিন যুবকের কথা জানতে পারি । আর সেই তিন যুবক হল- মৎস্যশিকারি,পানরসিক এবং নিদ্রাবিলাসী। তবে এখানে আমরা বলে রাখি মৎস্যশিকারি বন্ধুর সাথে অপর দুই বন্ধু তেলেনাপোতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এই তেলেনাপোতা গ্রামটি একটা সময়ে নামকরা সমৃদ্ধময় গ্রাম ছিল। গ্রামটি সমৃদ্ধময় হলেও এই গ্রামের উপর আছড়ে পড়ে মহামারী ম্যালেরিয়া রোগ। আর সেই ম্যালেরিয়া গ্রামের অসংখ্য মানুষ অকালে প্রাণ হারালেন।তবে-
•পাশাপাশি ওই গ্রামের অসংখ্য মানুষ তাদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে অন্য কোথাও গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। আর গ্রাম ছেড়ে যাদের অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় ছিল না বা সামর্থ্য ছিল না তারা ওই গ্রামে থেকে গেলেন। গ্রামটি এখন বেশ শান্ত। এমনই শান্ত যে গ্রামটি শ্মশানে পরিণত হয়েছে বলা যেতে পারে। আর ঠিক এখান থেকে ৩০ মাইল দূরে অবস্থিত মহানগরী। এই মহানগরী থেকে ঐ তিন যুবক যাত্রা শুরু করে তেলেনাপোতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তবে-
•ঐ তিন যুবক শহর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল কোন বেড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। বলা যেতে পারে তাদের উদ্দেশ্য ছিল আবিষ্কার। আর এই আবিষ্কারের মধ্যে ছিল একটা রোমাঞ্চকর পরিবেশ। সেই পরিবেশ কখনো রোমান্টিক, কখনো বিষাদে পরিণত হয়। আসলে ওই তিন যুবক শহর থেকে তেলেনাপোতা গিয়েছিল বিস্তৃতি অতল গভীর গহীন অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া তেলেনাপোতা গ্রামটি নতুন করে, নতুনভাবে আবিষ্কার করতে। এই তেলানাপোতা গ্রামটি দেখলে মনে হবে এ যেন এক মৃত্যুপুরী। আর সেই মৃত্যুপুরীর মানুষের জীবন কথা তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র তুলে ধরেছেন। আর সেখানে আমরা দেখি-
•আমরা পূর্বেই বলেছি শহর থেকে ত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত তেলেনাপোতা গ্ৰামটি। আর সেই গ্রামের যাত্রা পথটি মোটেই সুগম ছিল না। লেখক সেই যাত্রাপথে এইভাবে বর্ণনা করেছেন-অদ্ভুত এক অন্ধকার পরিবেশ, সেই ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল তিন বন্ধু। আর এমন পরিবেশটি আরো জমকালো তুলে করে তুলেছে মশার কলরব। যে পরিবেশের মধ্যেই তিন বন্ধু গরুর গাড়ি চেপে তেলেনাপোতায় পৌঁছায়। রাতের অন্ধকারে মনে হয় যেন গ্রামটি মৃত্যু নগরীতে পরিণত হয়েছে। এখানে আমরা আরোও দেখি যে-
•তিন বন্ধুর মধ্যে মনিদা যার বাড়ী এই তেলেনাপোতা গ্রামে।মণিদা অপরটি দুই বন্ধুকে নিয়ে তার গ্ৰামের বাড়িতে আসে। তাদের উদ্দেশ্য মৎস্য শিকার। মনিদার মুখে তেলেনাপোতার মাছ ধরার কাহিনী শুনে অপরের এক বন্ধু সেখানে আসতে আগ্রহ বোধ করে। কিন্তু অপরাধ কোনটি কেবলমাত্র মদ্যপান করার জন্য তাদের সঙ্গ নিয়েছে। অবশেষে -
•তেলেনাপোতা আসার পর মৎস্য শিকারি বন্ধু ছাড়া অপর দুই বন্ধু ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু মৎস্যশিকারী বন্ধু যিনি গল্পের মূল কথক তিনি ওই অন্ধকারে ছাদে ঘুরতে যায়। আর সেই ছাদ থেকে অন্ধকার রাতে পাশের বাড়ি জানালার কিনারায় একটি নারীকে দেখতে পায়। আর এখান থেকেই গল্পটি অন্য এক ভিন্ন পথে মোড় নেয়। আর সেখানে আমরা দেখি-
•রাত কেটে ভোর হয়। মৎস্য শিকারি বন্ধুটি সকালে মাছ পুকুরে ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে সেই নারীকে চিনতে পারে। মেয়েটি পুকুরের জল নিতে আসে, যার নাম যার নাম যামিনী। কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয় সেদিন কোন মাছ মৎস্য শিকারী বন্ধুটি ধরতে পারল না। দুপুর গড়িয়ে আসে, সকলেই মনিদার কাছ থেকে জানতে পারে যামিনীদের বাড়িতে তাদের দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। অতঃপর তারা জানতে পারে-
•নিরঞ্জন নামে এক যুবক যামিনীকে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছিল। সেটি ছিল কেবলমাত্রই একটা কথা। কিন্তু সে আর কোনদিন যামিনীদের কাছে ফিরে আসেনি। কিন্তু যামিনীর দৃষ্টিহীন মা এখনো অপেক্ষায় থাকে নিরঞ্জন ফিরে আসবে এবং তার মেয়েকে বিয়ে করে তার ঘরে নিয়ে যাবে। কিন্তু এ শুধুমাত্র অপেক্ষা! মৎস্য শিকারি বন্ধুটি এই ঘটনাটি জানতে পেরে সে সিদ্ধান্ত নেয়, যামিনীকে সে বিয়ে করবে। অবশেষে তারা তেলেনাপোতা গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসে। তেলেনাপোতা থেকে এই শহরে আসার পর মৎস্য শিকারি বন্ধুটি ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়। আর সেই জ্বর থেকে সেরে ওঠার পর মৎস্য শিকারি বন্ধুটির কাছে তেলেনাপোতার সেদিনের স্মৃতি আজ তার কাছে ঝাপসা মনে হয়।
• পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে বারবার ব্যর্থ হওয়া মানুষেরা চেয়েছে একটা স্বপ্ন দেখতে। তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্প সেই স্বপ্নের গল্প। যে গল্পে আছে অর্থনৈতিক সমস্যা, আছে সামাজিক সমস্যা। আর এই সমস্যার উত্তোরণ কোন কালই হয় না। তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পেও হয়নি। আসলে মানুষের ভেতর যেসব সৎ প্রবৃত্তি বা বোধ মানুষকে মহৎ কর্তব্যে উদ্বুদ্ধ করতে পারে তার কোন ইঙ্গিত এ গল্পে নেই। তাই শেষ পর্যন্ত যামিনীর জীবন যথা পূর্বং তথা পরমং রয়ে গেছে।
Comments
Post a Comment