Skip to main content

চীনের জাতীয়(3rd Sem.)গণ-কংগ্ৰেসের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো।

চীনের জাতীয়(3rd Sem.)গণ-কংগ্ৰেসের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো। পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

•ভূমিকাঃ আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, জাতীয় গণ- কংগ্রেস হলো চীনের এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা। আর সেখানে জনসাধারণের অধিকার ভোগ সুনিশ্চিত করার জন্য সংবিধানের ৫৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে,

   "The national people's Congress of the               peoples's republic of China is the                       highest organ of the State Power." 

চীন সংবিধানে বলা হয়েছে যে, গণ সাধারণতন্ত্রী চীনের সমস্ত ক্ষমতা জনসাধারণের হস্তে ন্যস্ত করা হয়েছে। সেদেশের সংবিধানের ২ নম্বর ধারা অনুসারে জাতীয় গণ কংগ্রেস এবং বিভিন্ন স্তরের আঞ্চলিক গণ কংগ্রেস সমূহের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রয়োগ করে। সুতরাং জাতীয় গণ কংগ্রেস চীনের শাসন ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।

               •জাতীয় গণ কংগ্রেসের গঠন• 

সংবিধানের ৫৯ নম্বর ধারায় জাতীয় গণ কংগ্রেস গঠনে বলা হয়েছে যে, ১৮ বছর বয়স্ক যেকোনো চিনা নাগরিক ডেপুটি পদে প্রার্থী হতে পারেন। আর এই জাতীয় গণ কংগ্রেস গঠিত হয় বিভিন্ন প্রদেশ, স্বয়ং শাসিত অঞ্চল, সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন পৌরসভা গুলির নির্বাচিত ডেপুটিদের নিয়ে গঠিত হয়। এদের কার্যকাল পাঁচ বছর। 

                 • ক্ষমতা ও কার্যাবলী • 

চীন দেশের সংবিধান অনুসারে ৬২,৬৩, এবং ৬৪ নম্বর ধারায় জাতীয় গণ কংগ্রেসের ক্ষমতা ও কার্যাবলী লিপিবদ্ধ আছে। আর সেই ক্ষমতা ও কার্যাবলী গুলি হল-

১)                  • আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা •

 দেশের জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো আইন প্রণয়ন ক্ষমতা জাতীয় গণ কংগ্রেসের হাতে অর্পিত। আর সেখানে ডেপুটিদের সাধারণ সংখ্যা গরিষ্ঠতায় যেকোনো আইন প্রণয়ন হতে পারে। এ ছাড়াও-

                ফৌজদারি অপরাধ, দেওয়ানী বিষয়, রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত আইন সংশোধনের ক্ষমতা জাতীয় গণ কংগ্রেসের হাতে অর্পিত।


২)              • শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা • 

চীন দেশের জাতীয় গণ কংগ্রেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা হলো নির্বাচন ও অপসারণ সংক্রান্ত ক্ষমতা। আর সেখানে জাতীয় গণ কংগ্রেস রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপ প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রীয় পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সামরিক কমিশনের সভাপতি, উচ্চ পদস্থ ব্যাক্তিদের নির্বাচিত ও অপসারিত করতে পারে। আসলে-

             জাতীয় গণ কংগ্রেস একটি জাতীয় সত্তা সংক্রান্ত কমিটি। যে কমিটি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বিদেশ সংক্রান্ত বিষয় প্রভৃতি সম্পর্কে নীতি নির্ধারণে কমিটি গঠন করতে পারে। এছাড়াও প্রয়োজনবোধে জাতীয় গণ-কংগ্রেস বিশেষ কমিটি স্থাপন করতে পারে।

৩)               • অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা • 

জাতীয় গণ কংগ্রেসের অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল- জাতীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা ও রাষ্ট্রীয় বাজেট পরীক্ষা করে সেগুলিকে অনুমোদন করা। আর ওইসব পরিকল্পনা ও বাজেট যথাযথভাবে কার্যকর রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা জাতীয় গণ কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে বিবেচিত। 

৪)               • পররাষ্ট্র সংক্রান্ত ক্ষমতা •

 পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়ে জাতীয় গণ কংগ্রেস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেখানে সংবিধানের ৬২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, যুদ্ধ ঘোষণা ও শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা জাতীয় গণ কংগ্রেসের রয়েছে। এছাড়াও বিশেষ নীতি নির্ধারণের ক্ষমতাও গণ কংগ্রেসের হাতে অর্পণ করা হয়েছে।

৫)       •সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত ক্ষমতা•

 সংবিধানের ৬৪ নম্বর ধারায় জাতীয় গণ কংগ্রেসকে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় গণ-কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি অথবা জাতীয় গণ-কংগ্রেসের এক পঞ্চমাংশ সদস্য সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব আনতে পারে। সেই প্রস্তাব যদি জাতীয় সদস্য সমর্থন করে তবেই সংবিধান সংশোধিত হয়। 

৬)                •অন্যান্য ক্ষমতা•

 চীনের জাতীয় গণ-কংগ্রেস উপরোক্ত ক্ষমতাগুলি ছাড়াও আরো কিছু ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। আর সেই ক্ষমতা গুলি অবশ্য সংবিধানে বিস্তারিতভাবে বলা হয়নি। তবে সংবিধানের ৬২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে ক্ষমতা প্রয়োগ করা উচিত বলে মনে হবে তা ভোগ করতে পারবে।

               • পরিশেষে বলা যায় যে, চীনের জাতীয় গণ-কংগ্রেসের হাতে চীনের সংবিধান ব্যাপক ক্ষমতা দিলেও একে অনেকেই আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা বলে অনেকেই উল্লেখ করেন। তবে সমালোচকরা মনে করেন জাতীয় গণ কংগ্রেস একটি বিশাল আয়তন বিশিষ্ট সভা হওয়ায় সদস্যদের সমর্থন করা ছাড়া আর কোন কাজ থাকে না। পাশাপাশি জাতীয় গণ কংগ্রেসের সভা বিশাল আকৃতির আকৃতি বিশিষ্ট্য হওয়ায় সবসময় এর অধিবেশন চালানো সম্ভব নয়।আর এই কারণে এখানে স্থায়ী কমিটির হাতে সকল ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে, বাস্তবে স্থায়ী কমিটিই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...