ব্রিটেনের আইনের অনুশাসন সম্পর্কে আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, তৃতীয় সেমিস্টার, মাইনর সিলেবাস)।
ভূমিকাঃ আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,আইনের অনুশাসন কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডাইসি। তবে ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো আইনের অনুশাসন। ব্রিটেনে আইনের অনুশাসন হল নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতার মূল ভিত্তি। সেখানে ব্রিটেনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ১২১৫ সালে' মহাসনদ' আইনে অনুশাসনের ভ্রুণ ছিল। আর ১৬৮৮ সালে 'গৌরবময় বিপ্লব' এবং ১৬৮৯ সালে 'বিল অব রাইটস' এর মাধ্যমে আইনের অনুশাসন ব্রিটেনে প্রসার লাভ করে। আর সেখানে-
•আইনের অনুশাসনের অর্থ•
সাধারণভাবে আইনের অনুশাসন বলতে বোঝায় যে, আইনের স্থান সর্বোচ্চ এবং সকলেই আইনের চোখের সমান। অর্থাৎ আইনের গুরুত্ব সর্বাধিক। আর সেখানে ব্যক্তি যাতে দৈনন্দিন জীবনে স্বাধীনভাবে চলতে পারে, সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষিত হয় আইন তা সুনিশ্চিত করবে। আর এখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ হবে আইন অনুসারে এবং সরকারের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ব্যক্তির আত্মরক্ষার সহায়ক হবে আইন।
•আইনের অনুশাসন সম্পর্কে ডাইসির মতামত•
১) • সরকারের কোন স্বৈরী ক্ষমতা নেই •
এখানে বলা হয় যে,কোন ব্যক্তি আদালতের চোখে দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সেই ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া যাবে না বা তাকে জীবন ও সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আসলে সরকারের কোন স্বৈরী ক্ষমতা নেই যার বলে সে প্রচলিত সাধারন আইন বা আদালতকে বাদ দিয়ে কোন নাগরিককে শাস্তি দিতে পারে।
২) •আইনের দৃষ্টিতে সকলের সমান•
রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বসবাসকারী কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইনের চোখে সকলের সমান এবং সমস্ত বিরোধের নিষ্পত্তি করবে সাধারণ আদালত। তবে পদমর্যাদা যাই হোক না কেন প্রত্যেকেই রাষ্ট্রের প্রচলিত সাধারন আইনের অধীন। প্রত্যেককেই সাধারণ আইন মেনে চলতে হয়।
৩) •নাগরিক অধিকার আইন দ্বারা সংরক্ষিত•
যেসব দেশে লিখিত সংবিধান আছে, সেসব দেশের লিখিত সংবিধান দ্বারা নাগরিকদের অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়। তবে ব্রিটেনে কোন লিখিত সংবিধান নেই। তাই নাগরিকদের অধিকার গুলি সংবিধান দ্বারা সৃষ্টি হয়নি এবং সংরক্ষিত নয়। তবে দীর্ঘকাল ধরে আদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়েছে আর তার ফলে ব্রিটেনে আইনের অনুশাসনের ভিত্তিতে সাধারণ আইন দ্বারা নাগরিকদের অধিকার গুলি স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়।
•°সমালোচনা°•
১) ডাইসি বলেন যে, সরকারের স্বৈরী ক্ষমতার থাকবে না এবং সাধারণ আইনের সর্বাত্মক প্রাধান্য থাকবে। আর এই কথাটি নস্যাৎ করে বলা হয় যে-
বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ডাইসির ধারণাটি অবাস্তব। কারণ বর্তমানে সরকারকে অনেক জটিল কাজ করতে হয়। আর এখানে যদি সরকারের হাতে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার না থাকে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করতে পারবে না তাই স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রদান করা আবশ্যক।
২)ডাইসি বলেন যে, সকলেই আইনের চোখে সমান এবং কোন ব্যক্তি আইনের উর্ধ্বে নয়। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। কারণ-
ব্রিটেনে একজন সরকারি কর্মচারী একজন সাধারণ নাগরিকের থেকে অনেক বেশি ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকেন।
৩) ডাইসি আইনের অনুশাসনে আরো বলেন যে, ব্রিটেনের নাগরিকদের অধিকার গুলি আদালত কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার নয়। কারণ-
মহাসনদ,অধিকারের বিল ও হেবিয়াস কর্পাস প্রভৃতি বিধিবদ্ধ আইনগুলি দ্বারা ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, আইনের অনুশাসন তত্ত্বটি সমালোচিত হলেও এর গুরুত্বকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। কারণ ব্রিটেনের আইনের অনুশাসন নীতির ফলে নাগরিকদের অধিকার পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।তবে-
আইনের অনুশাসনের জন্যই পৃথিবীর অন্যান্য দেশ অপেক্ষা ব্রিটেনের নাগরিকরা অনেক বেশি অধিকার ভোগ করতে পারে। কিন্তু ব্যাপক অর্থে আইনের অনুশাসন বলতে যা বোঝায় ব্রিটেনে তা নেই।
এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDORBON" YOUTUBE CHANNEL ।
Comments
Post a Comment