Skip to main content

যুক্তরাজ্যের (3rd Sem) শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আইনের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো

যুক্তরাজ্যের শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আইনের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো। (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মাইনর)

ভূমিকাঃ আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, আইন হলো এমন সব নিয়ম-কানুন, যেগুলি আদালত কর্তৃক সাধারণ বিবাদ মিমাংসার ক্ষেত্রে নেওয়া হয় ও প্রয়োগ করা হয়। আর এখানে শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি গুলি সাংবিধানিক আইনকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তবুও শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আইনের মধ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কতগুলি পার্থক্য লক্ষণীয়। আর সেই পার্থক্যগুলি হলো-

১) মর্যাদা সংক্রান্তঃ শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি তুলনায় আইনের মর্যাদা অনেক বেশি। কারণ আইন কেউ ভঙ্গ করলে আইন ভঙ্গকারীকে শাস্তি ভোগ করতে হয়। কিন্তু-

       •শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিকে ভঙ্গ করা হলে আইন ভঙ্গকারীর মতো শাস্তি পেতে হয় না। 

২) বলবৎযোগ্য সংক্রান্তঃ বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডাইসি মনে করেন, আদালত কর্তৃক আইনের নিয়মকানুন প্রযুক্ত হয়। তাই আইনকে আদালত কার্যকর বা বলবৎ করে। কিন্তু -

         •শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি গুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয়। 

৩) উৎস সংক্রান্ত পার্থক্যঃ পার্লামেন্ট ও বিচারালয় হল সাংবিধানিক আইনের উৎস। আর সেখানে আইন প্রণীত হয়। কিন্তু-

   ‌ •শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতির উৎস হলো অভ্যাস, যা গড়ে ওঠে ক্রমান্বয়ে ও ধীরে ধীরে।   

৪) পদ্ধতি সংক্রান্ত পার্থক্যঃ আইন প্রণীত হয় নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে, আদালত দ্বারা আইন স্থিরীকৃত হয়। কিন্তু -

        •শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি গড়ে ওঠে প্রথার ওপর ভিত্তি করে।

৫) আদালতের এক্তিয়ার সংক্রান্তঃ আইন ভঙ্গের বিষয়টি সাধারণ আদালত দেখে। অর্থাৎ আইন ভঙ্গ করা হলে সাধারণ আদালত তার বিচার করতে পারে এবং আইন ভঙ্গকারীকে আইন মেনে চলার ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু-

      •শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি গুলি ভঙ্গ করা হলে তার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে করার কোন ব্যবস্থা আদালতের হাতে দেওয়া হয়নি। জনমতই এর নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।

৬) পরিকল্পনা সংক্রান্তঃ প্রয়োজন অনুসারে আইন প্রণয়ন করা হয় বলে এটি একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী করা সম্ভব। কিন্তু-

        •শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি কোন পরিকল্পনামাফিক এবং প্রয়োজন অনুসারে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি হল দীর্ঘ বিবর্তনের ফল।

       • পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে-আইন ও শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যে উপরিউক্ত পার্থক্য থাকলেও বাস্তবে সাধারণ মানুষের কাছে উভয়ের পার্থক্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এর গুরুত্ব কেবল সংবিধান বিশারদ, আইন বিশারদ ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে। আসলে আইনকে কেন্দ্র করেই শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি গড়ে ওঠে। আবার -

         আইনকে ভিত্তি করে শাসনতান্ত্রিক রীতি গড়ে উঠলেও শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি প্রতিষ্ঠা লাভের পর তা আইনের ভিত্তিতে রূপান্তরিত হয়। আর এই কারণে জেনিংস বলেন যে-

 "শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আইনের মধ্যে ‌ প্রকৃত  কোন পার্থক্য নেই। বাস্তবে কোন কোন  বিধিগুলিকে শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি এবং কোন কোন বিধিগুলিকে আইনের পর্যায়ভুক্ত করা হবে তা নিদ্দিষ্ট করা সহজ কাজ নয়।"

(ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL )

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...