ইকতা ব্যবস্থা(3rd Sem) সম্পর্কে যা জানো লেখো সুলতানি যুগে ইফতার ব্যবস্থার বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা কর
ইকতা ব্যবস্থা সম্পর্কে যা জানো লেখো, •অথবা• সুলতানী যুগে ইকতা ব্যবস্থা বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভুমিকাঃ ভারতে গজনীর ঘুরী বংশের সুলতানরা প্রথম তুর্কি শাসনকে সুসংহত রূপ দিতে শুরু করেন। সেই সাথে দিল্লির সুলতানরা তাদের অধীনে সামরিক নেতাদের বশ্যতা ও আনুগত্য আদায় করতে আগ্রহী ছিলেন। তাঁরা ইকতা ব্যবস্থার মাধ্যমে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের সাথে এবং দিল্লির প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। ফলে সুলতানরা সারা দেশকে কয়েকটি ইকতা দ্বারা ভাগ করেন। তবে -
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইকতাদারী ব্যবস্থার প্রকৃতিরও পরিবর্তন ঘটেছিল। বিদ্রোহী হিন্দু সামন্তদের বিদ্রোহ দমনে এই ইকতাদাররা সুলতানদের বিশেষ সাহায্য করতেন। কাজেই রাজস্ব আদায় করা ছাড়াও সুলতানদের নির্দেশ অনুযায়ী ইকতাদারদের এই অতিরিক্ত কাজ করতে হতো। যারফলে তাঁরা প্রশাসনের অস্তিত্বের সাথে নিজেদের একাঙ্গী করে তোলেন। আর সেখানে -
•সুলতানদের সংস্কার-ইলতুৎমিস•
সুলতান ইলতুৎমিস তার সমগ্র সাম্রাজ্যকে দুটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। দিল্লির দোয়াব এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে তিনি নিজের অধীনে অর্থাৎ খালিসা বা খালিম রূপে রেখেছিলেন। বাকি অঞ্চল গুলিকে ছোট বড় আকারে মুক্তিদের বা ইকতাদাদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলেন। এইভাবে সুলতান ইলতুৎমিস হিন্দু রাজা বা সামন্ত প্রভুদের নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। তবে তিনি দেশের অভ্যন্তরে ইকতাদারদের দ্বারা শান্তি বজায় রাখতে সমর্থ্য হয়েছিলেন।
•বলবনের সংস্কার•
গিয়াস উদ্দিন বলবন প্রথম ইক্তা ব্যবস্থার কেন্দ্রীয়করণের চেষ্টা করেন। বারাণি বলেছেন যে- বলবান ইকতাদারদের উদ্বৃত্ত অর্থ সুলতানের রাজস্ব বিভাগে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই উদ্বৃত্ত অর্থকে বলা হত ফাজিল। ইক্তাদারদের পদ বংশানুক্রমিক ছিল না। এ কথা বলবন পরিষ্কারভাবে তাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। ইকদাররা নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য রাখতে পারতেন।
•আলাউদ্দিনের সময় ব্যপক পরিবর্তন•
আলাউদ্দিন এই কিতা ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁর সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল বিশাল। দিল্লির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে তিনি খালিসায় পরিণত করেন। দূরবর্তী অঞ্চলে ইকতাদারদের জমি বন্টনের ব্যবস্থা করেন। সৈন্যদের নগদে বেতন দেওয়ার জন্য ক্রমশ ইকতাগুলি খালিসাতে পরিণত হয়। তবে আলাউদ্দিন সামরিক নেতাদের বেতনের পরিবর্তে ইক্তা দান করতেন। তিনি প্রতিটি ইক্তার রাজস্ব নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন এবং ইকতাদারদের সেইমত সংগ্ৰহের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
•মহম্মদ বিন তুঘলকের সংস্কার•
মহম্মদ বিন তুঘলক ইক্তা ব্যবস্থার প্রশাসনে কিছুটা নমনীয় ভাব গ্রহণ করেন। তিনি ওয়াজিরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তিনি যেন এক দশমাংশের বেশি রাজস্ব দাবি না করেন। এর বেশি হলে ইকতাদাররা কৃষকদের ওপর শোষণের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেবে। মহম্মদ বিন তুঘলক ইক্তাকে খালিসাতে পরিণত করেন। তবে যে সমস্ত সেনাপতির সামরিক কর্তব্য আবশ্যক ছিল কেবল তারাই কেবলমাত্র ইকতার মালিক হতে পারতেন।
•ফিরোজ তুঘলকের সংস্কার•
মহম্মদ বিন তুঘলক যে কঠোরতা দেখিয়েছিলেন তা ইকতাদারদের অসন্তুষ্ট করেছিল। ফিরোজ তুঘলক এ ব্যাপারে তাদের প্রতি উদারতা দেখিয়েছিলেন। সৈন্যদেরও ইক্তার আয় থেকে বেতন দেবার ব্যবস্থা করেন। নগদ অর্থ দেওয়া বন্ধ করেন। সৈন্যরাও তাদেরকে দেওয়া ইক্তা অপরকে বিক্রয় করতে পারত। ফলে কৃষকদের শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ইক্তাদারদের বদলি তিনি প্রায় উঠিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়,হিন্দু কর্মচারীদের বেতন হ্রাস করেন, কিন্তু মুসলমান কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করেন। খান ও আমীরদের বড় ইকতা দিয়ছছিলেন। ফিরোজের পরবর্তী সুলতান সিকান্দার লোদীও এই ব্যবস্থা অনুসরণ করেছিলেন।
•পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,যে ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন পরবর্তীতে জায়গীর প্রথা রূপ নেয়। ইক্তা ব্যবস্থা ভারতে তুর্কি শাসনকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছিল। তবে পরবর্তীতে ইকতাদাররা বা শাসকগোষ্ঠী শহর অঞ্চলে বসবাস করতে থাকেন। গ্রামে বসবাসকারী কৃষকদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিন্ন হয়। অধঃস্তন কর্মচারীদের কৃষকদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছিল। অনেক জায়গায় বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। শেষে তা সুলতানের পতনের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।
Comments
Post a Comment