গণপ্রজাতন্ত্র চিনের বিচারব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার, মাইনর, রাষ্ট্রবিজ্ঞান)।
ভূমিকাঃ আলোচনার শুরুতেই বলে রাখা ভালো যে,১৯৮২ সালে সংবিধান অনুসারে চিনের বিচারব্যবস্থা গঠিত হয় চার শ্রেণীর আদালত নিয়ে। আর সেই আদালত গুলি হল সর্বোচ্চ গণ আদালত, আঞ্চলিক আদালতসমূহ, বিশেষ গণ আদালত এবং সামরিক আদালত। আর এই আদালত গুলির বিচারব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলি হলো-
১) অখন্ড বিচার ব্যবস্থাঃ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বিচারবিভাগীয় সংস্থা বলতে গণ আদালত গুলিকে বোঝানো হয়। আর সেখানে চার ধরনের আদালত বিদ্যমান। সেই আদালত গুলি হল- ক) বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে সর্বোচ্চ গণ আদালত। খ) নিম্নে এবং অভিন্ন স্তরে রয়েছে আঞ্চলিক আদালত সমূহ গ) বিশেষ আদালত সমূহ ঘ)সামরিক আদালত।
তবে চিনের বিচারব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকৃত বলে মনে করা হলেও কার্যত উচ্চতর গণ আদালত নিম্নতর গণ আদালতগুলির কাজকর্ম তদারকি করে। আবার সর্বোচ্চ গণ আদালত সকল আদালতের তদারকি করে।
২) গণপ্রকিউরেটরীয় ব্যবস্থাঃ। প্রকিউরেটরীয় ব্যবস্থা (ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি) চিনের বিচার ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ। আর সেখানে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহ, ওইসব সংস্থার কর্মচারীরা এবং দেশের নাগরিকরা রাষ্ট্রীয় সংবিধান ও আইনকে সঠিকভাবে মান্য করছে কিনা গণ প্রকিউরেটরের দপ্তর সে ব্যাপারে তত্ত্বাবধান করে। তবে চিনে এই গণপ্রকিউরেটরের দপ্তরকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যারা আইনের অধীনে থেকে তাদের নিজেদের কাজকর্ম সম্পাদন করেন।
৩) বিচার বিভাগীয় কমিটিঃ চিনে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আদালতগুলির বিচার বিভাগীয় কমিটি মূলত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল মামলা গুলির ব্যাপারে পরামর্শ দেয়। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার নীতিগুলিকে মনে রেখেই বিচার বিভাগীয় কমিটি তাদের ক্রিয়া-কলাপ সম্পাদন করে।
৪) বিচারপতির দায়িত্বশীলতাঃ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে সর্বোচ্চ গণ আদালতকে তার সম্পাদিত কার্যাবলীর জন্য জাতীয় গণ কংগ্রেস এবং স্থায়ী কমিটির কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। আবার অঞ্চলগুলিতে বিভিন্ন স্তরের আঞ্চলিক আদালত গুলির তাদের সম্পাদিত ক্রিয়া-কলাপের জন্য তাদের নিজ নিজ স্তরে অবস্থিত আঞ্চলিক গণ কংগ্রেস ও তার স্থায়ী কমিটির কাছে দায়বদ্ধ থাকে।
৫) সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাঃ চিনের বিচার ব্যবস্থার প্রধান কাজ হল চিনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষা প্রদান করা।চিনে সংবিধান ও আইনের ব্যাখ্যা করে কেন্দ্রীয় আইনসভা। তাছাড়াউ চিনের নাগরিক অধিকারের রক্ষাকর্তা হলো সমাজতান্ত্রিক সমাজ।
৬) আইনের ওপর গুরুত্বঃ চিনের গণআদালত গুলিতে আইনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কারণ আইনের অধীনে থেকেই গন-আদালত গুলির বিচারপতিরা স্বাধীনভাবে তাদের বিচারকার্য পরিচালনা করেন। আর বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন সংস্থা বা সংগঠন বা কোন ব্যক্তি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। অর্থাৎ এখানে বিশেষ ব্যক্তির জন্য বিশেষ বিচার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
৭) আপিল সংক্রান্ত ব্যবস্থাঃ। কোন মামলার বিচারের রায় যদি কোন পক্ষেরই পছন্দ না হয় তাহলে তারা ঊর্ধ্বতন আদালতে আপিল করার সুযোগ লাভ লাভ করে। আবার সর্বোচ্চ গণ আদালত উচ্চতর আদালত গুলির আইনগত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল মামলার বিচার করে।
৮) আত্মপক্ষ সমর্থনঃ গণপ্রজাতন্ত্র চিনে সংবিধান অনুসারে যেকোন অভিযুক্ত ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ লাভ করেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন বা তার অভিভাবক বা খুব নিকট আত্মীয় তাকে সমর্থন করতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বিচারপতিগণ পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। জাতীয় গণ কংগ্রেস সর্বোচ্চ গণ আদালতের সভাপতিকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত করেন। আবার তাঁর কার্যকাল শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় গণ কংগ্রেস তাঁকে অপসারণ করতে পারে।
(ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL )।
Comments
Post a Comment